প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে শেষ সপ্তাহের প্রচারণা চালাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস এবং তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। কয়েক দশকের মধ্যে এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উভয় প্রার্থীর জন্য বেশ হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে যেকোনো ক্ষুদ্র সুবিধাও হাত ছাড়া করতে চাইছে না কমালা ও ট্রাম্প। এ খবর দিয়েছে ভয়েস অব আমেরিকা।
এতে বলা হয়, ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমালা হ্যারিস দেশটির ষষ্ঠ বৃহত্তম শহর ও দলটির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ফিলাডেলফিয়া সফর করেছেন। সেখানে তিনি নিজ দলের রাজনৈতিক ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্য পেনসিলভানিয়ায় তার ভোট বাড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে ট্রাম্প তার জন্মস্থান নিউইয়র্ক সিটির ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে একটি বড় সমাবেশ করেছেন। এটিকে বলা হয় ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত অঙ্গন’। জরিপে দেখা গেছে, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। ২০২০ সালের নির্বাচনে সেখানে তিনি ৪০ শতাংশের কম ভোট পান।
মঙ্গলবার কমালা হ্যারিস হোয়াইট হাউসের অদূরে দেয়া এক ভাষণে ভোটারদের কাছে তার ‘সমাপনী বক্তব্য’ রাখার কথা। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্প এ জায়গায় তার সমর্থকদের ক্যাপিটলে গিয়ে ‘নরকের মতো লড়াই’ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন জনপ্রিয় ভোট দ্বারা নির্ধারিত হয় না, বরং ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই পদ্ধতিতে নির্বাচনকে ৫০টি রাজ্যেরই প্রতিযোগিতায় পরিণত করা হয়। ৫০টি রাজ্যের মধ্যে ৪৮টি রাজ্যে তাদের সমস্ত নির্বাচনী ভোট তাদের রাজ্যে বিজয়ীদের দেয়া হয়; তা সে হ্যারিস বা ট্রাম্প যেইই হোক। অন্যদিকে নেব্রাস্কা এবং কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট উভয় ভোট গণনার মাধ্যমে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট নির্ধারণ করে।
প্রতিটি রাজ্যে নির্বাচনী ভোটের সংখ্যা জনসংখ্যার ওপর নির্ভর করে। তাই বৃহত্তম রাজ্যগুলো সামগ্রিক জাতীয় ফলাফল নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখে। প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হওয়ার জন্য ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে ২৭০টিতে জয় প্রয়োজন।
ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমালা হ্যারিসের পক্ষ না নেওয়ায় দুই লাখের বেশি ডিজিটাল সাবস্ক্রাইবার হারিয়েছে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট। সূত্রের খবর, মোট সাবস্ক্রাইবারের ৮ শতাংশই হাতছাড়া হয়েছে তাদের। তার পরেই সংবাদপত্রের তরফে জানানো হয়েছে, আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে কোনও প্রার্থীর পক্ষেই সওয়াল করবে না তারা।
সূত্রের খবর, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমালার পক্ষে বেশ কিছু সম্পাদকীয় লেখা হয়ে গিয়েছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই সেগুলো প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল ওয়াশিংটন পোস্টে। কিন্তু দিনকয়েক আগে সংবাদপত্রের প্রকাশক উইল লিউইস জানিয়ে দেন, কোনও প্রার্থীর পক্ষেই কথা বলা উচিত না। পাঠকরা নিজেই ঠিক করবেন কাকে ভোট দেবেন। তার পরেই হু হু করে কমতে থাকে সংবাদপত্রের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা। এরপরেই ওয়াশিংটন পোস্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এর জেরে গত শুক্রবার পদত্যাগ করেন পত্রিকাটির সম্পাদক রবার্ট কাগান। পদত্যাগ করা রবার্ট কাগান ট্রাম্প-বিরোধী কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত।
২০২৩ সালে তিনি একটি কলাম লিখেছিলেন, ‘ট্রাম্পের একনায়কত্ব: কীভাবে এটি বন্ধ করা যায়’ শিরোনামে। ফক্স নিউজ বলছে, ওয়াশিংটন পোস্টের প্রকাশক ও নির্বাহী কর্মকর্তা উইলিয়াম লুইস নির্বাচন নিয়ে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করার পরই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন সম্পাদক। ওয়াশিংটন পোস্টের ওয়েবসাইটে এক পোস্টে লুইস লিখেছেন, ‘ওয়াশিংটন পোস্ট এই নির্বাচনে কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে সমর্থন করবে না। ভবিষ্যতের কোনো নির্বাচনেও করবে না। আমরা প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের সমর্থন না করার বিষয়ে আমাদের আগের অবস্থানে ফিরে যাচ্ছি।
এহেন পরিস্থিতিতে মুখ খুলেছেন ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক জেফ বেজোস। তার মতে, নির্বাচনে কোনও প্রার্থীকে সমর্থন না করাই উচিত। সংবাদপত্রের আদর্শ এটাই। আরও আগে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।