ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় খোলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার। সংস্থাটির কার্যালয় করার বিষয়ে এখন পর্যন্ত আলাপ-আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক বুধবার (৩০ অক্টোবর) পররাষ্ট্র-বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় খোলার বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, বিষয়টা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। এটা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এটি প্রকৃত অবস্থান। আসলে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত এ পর্যন্ত হয়নি। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অফিস দেওয়া হবে বা অফিস দেওয়া হবে না– এটাও বলা হয়নি। আমরা বিষয়টা এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি।
এ বিষয়ে প্রস্তাব আছে কি না– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফরমালি লিখিতভাবে প্রস্তাব দেওয়া হয়নি কিন্তু কথাবার্তা হয়েছে। মানবাধিকারের অফিস দিলেই সব কাজ হয়ে যাবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। খুব অল্প কিছু দেশেই তাদের অফিস আছে। আমরা দেখি, আমাদের প্রয়োজন আছে কি না। এদিকে, মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, খুব বড় একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের একটা কার্যালয় চালু হবে। শিগগিরই এ কার্যালয় চালু হবে। কার্যালয় হলে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সরাসরি তদন্ত করতে পারবে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ।
জুলাই-আগস্টের ঘটনায় জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনের অগ্রগতি এবং টুর্কের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রতিবেদন আকারে কোনো কিছু দেওয়া হয়নি। আলাপ করে গেছে তারা। কিছু কথা বলে গেছে। আমি জানতে চেয়েছিলাম কত সময় লাগবে? তারা বলেছে, প্রতিবেদন দিতে আরও এক মাসের মতো সময় লাগবে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন ৫ আগস্টের পর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে চাইলে তদন্ত করতে পারবে বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
অফিস খোলার চক্রান্ত রুখে দিতে হবে -ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
ইসলামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ লুৎফুর রহমান, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার, অ্যাডভোকেট হারুন অর রশিদ, সেক্রেটারী জেনারেল অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান, অ্যাডভোকেট মানিক মিয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস খোলার আগে তাদের দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন বেশি। পশ্চিমাদের ইন্দনে বিশ্বের দেশে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। আমেরিকার মদদে ফিলিস্তিন, ইরান, লেবাননসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসরাইল অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে রেখেছে।
আজ এক বিবৃতিতে ইসলামী আইনজীবী নেতৃবৃন্দ ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস খোলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অন্তবর্তী সরকার সংষ্কারের মাধ্যমে একটি অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করবে। কোন স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া তাদের কাজ নয়। ১০ বছর চেষ্টা চালিয়ে শ্রীলঙ্কায় মানবাধিকারের কান্ট্রি অফিস খুলতে তারা ব্যর্থ হয়।
৩৬ জুলাই-এর অভ্যুত্থানের পর নানা দেশি-বিদেশী চক্রান্ত সক্রিয়। বাংলাদেশে জাতিগত কোন সংঘাত হয়নি যে, জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস খুলতে হবে। তাছাড়া ঐ অফিসের বিরুদ্ধে দেশে দেশে সমকামীতার প্রমোট করার অভিযোগ রয়েছে। সভায় ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে সমকামীতার প্রমোট করার মত জঘন্য ও আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস খুলে সমকামীদের প্রমোট করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিলে জনগণ রুখে দিবে। কোন উপদেষ্টা সমকামীতাকে উস্কে দিতে চাইলে ছাত্র-জনতা রুখে দিবে। যে কোন ইসলামবিদ্বেষী কর্মকান্ড ছাত্র জনতা বরদাশত করবে না।