এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।আজ সোমবারই শেষ হচ্ছে প্রচারণা।
এবারের প্রচারণায় ভোটারদের পক্ষে টানতে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা ও ট্রাম্প নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন।অভিযোগ উঠেছে, এক্ষেত্রে কমলা অনেকটাই দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করেছেন।দোদুল্যমান রাজ্য মিশিগান ও পেনসিলভেনিয়ার ইহুদি-মুসলিম ভোটারদের নিজের পক্ষে টানতে এমন কৌশল অবলম্বন করেছেন তিনি।
পেনসিলভানিয়ার ইহুদি ভোটারদের আকৃষ্ট করতে গত মাসে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ফেসবুক বিজ্ঞাপনের ওপর আলোকপাত করে মার্কিন সংবাদসংস্থা সিএনএন।যেখানে দেখা যায়, হ্যারিস তার ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে দেওয়া বক্তৃতায় ইসরাইলের আত্মরক্ষায় পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই- আমি সবসময় ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারের পক্ষে দাঁড়াব। ইসরাইলের নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতা আমি সবসময় নিশ্চিত করব।কারণ ইসরাইলের জনগণকে আর কখনও সেই ভয়াবহতার মুখোমুখি হতে হবে না,যা হামাস নামে একটি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ৭ অক্টোবর অবর্ণনীয় গণহত্যাসহ ঘটিয়েছে।
ইরান ও ইরান সমর্থিতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় যেকোনও পদক্ষেপ নিতে কখনওই দ্বিধা করবেন না বলেও জানান কমলা।এদিকে মিশিগানের আরব-আমেরিকানদের লক্ষ্য করে কমলার প্রচারণার পৃথক আরেকটি বিজ্ঞাপনে দেখা যায়,তিনি গাজার বেসামরিক নাগরিকদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছেন।ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা গাজার নাগরিকদের দুর্ভোগ নিরসনে কাজ করছেন।
বিজ্ঞাপনে হ্যারিস বলছেন,গত নয় মাসে গাজায় যা ঘটেছে তা ধ্বংসাত্মক। নিজেদেরকে দুর্ভোগের কাছে ছেড়ে দিতে পারি না এবং আমি নীরব থাকব না।একই বিজ্ঞাপনে প্রদর্শিত অন্য একটি বক্তব্যে কমলা বলেছেন, আমাদের সাধারণ মানবতা আমাদের কাজ করতে বাধ্য করে।
আগামীকাল মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।এতে আলোচিত প্রার্থী ডেমোক্রেটিক পার্টির বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।তবে এ দুজন ছাড়াও আলোচনায় আছেন আরও চার প্রার্থী।
জিল স্টেইন
তিনি একজন বামপন্থী নেতা।গ্রিন পার্টির প্রেসিডেন্ট।পেশায় চিকিৎসক ও পরিবেশকর্মী।বর্তমানে তার বয়স ৭৪ বছর বয়স।এর আগে ২০১২ ও ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।ওই সময় তিনি যথাক্রমে দশমিক ৪ শতাংশ ও ১ শতাংশ করে ভোট পেয়েছিলেন।
শিকাগো শহরে জন্ম নেওয়া জিল স্টেইন এবার ৪০টি অঙ্গরাজ্যে লড়ছেন।তাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথা ডেমোক্র্যাট শিবিরে।কারণ, তিনি কমলা হ্যারিসের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ভোট তার পক্ষে টানতে পারেন।ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় কমিটি মিশিগান,পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে জিল স্টেইনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালিয়েছে।তাদের ভাষ্য,জিল স্টেইনকে একটি ভোট দেওয়ার অর্থ ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া।
কর্নেল ওয়েস্ট
তিনিও গ্রিন পার্টির নেতা।বর্ণবাদবিরোধী ৭১ বছর বয়সী কর্নেল ওয়েস্ট একজন শিক্ষাবিদ।তিনি স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।তিনি বাইডেনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ ও ট্রাম্পকে ‘নব্য ফ্যাসিস্ট’ বলে মনে করেন।তিনি ১২টিরও বেশি অঙ্গরাজ্যে লড়ছেন।তার সমর্থন অল্প হলেও ডেমোক্র্যাট শিবিরের জন্য তিনি বড় দুশ্চিন্তার নাম।
চেজ অলিভার
লিবার্টারিয়ান পার্টির নেতা তিনি।২০২০ সালের নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।সে সময় ১ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেয়েছিলেন।এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের প্রায় সব ক’টিতেই লড়ছেন তিনি।তাকে এবারের নির্বাচনের সম্ভাব্য অঘটন সৃষ্টিকারী ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। সাবেক ডেমোক্র্যাট ৩৯ বছর বয়সী অলিভার মুক্ত বাণিজ্য ও ছোট আকারের সরকারব্যবস্থার পক্ষে প্রচার চালান।
রবার্ট জুনিয়র কেনেডি
এবারের নির্বাচনে অন্যতম আলোচিত ব্যক্তি রবার্ট কেনেডি জুনিয়র।তার পক্ষে এবারের নির্বাচনে ৫–৭ শতাংশ সমর্থন ছিল।কিন্তু গত আগস্ট মাসে তিনি ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন।তবে কয়েকটি অঙ্গরাজ্য তার নাম ব্যালট থেকে সরাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।ট্রাম্পের পক্ষে ব্যাপক প্রচার চালানো কেনেডি নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবেন,তা স্পষ্ট নয়।
তবে এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে কমলা ও ট্রাম্পের মধ্যে।বিভিন্ন জনমত জরিপের তথ্য অনুযায়ী, এই দুই প্রার্থীর মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সূত্র: এএফপি