• ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

অনতিবিলম্বে বিতর্কিত ব্যক্তিদের উপদেষ্টা নিয়োগ অপসারণের দাবিতে ঢাবি সহ সারাদেশে ছাত্রদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ , আহত ও শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানী সহ্য করা হবে না

usbnews
প্রকাশিত নভেম্বর ১২, ২০২৪
অনতিবিলম্বে বিতর্কিত ব্যক্তিদের উপদেষ্টা নিয়োগ অপসারণের দাবিতে ঢাবি সহ  সারাদেশে ছাত্রদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ  , আহত ও শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানী  সহ্য করা হবে না
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নতুন তিন উপদেষ্টার মধ্যে বিতর্কিত দুইজনকে উপদেষ্টা নিয়োগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি ছাত্র-জনতার অংশীদারিত্ববিহীন সিদ্ধান্তে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাতে ফ্যাসিবাদের দোসররাও স্থান পেয়েছে। এর মাধ্যমে শহীদের রক্তের অবমাননা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে অনতিবিলম্বে বিতর্কিত ব্যক্তিদের উপদেষ্টা নিয়োগ অপসারণের দাবি জানানো হয়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, জুলাই-আগস্টে ফেসবুকে ২/১টা পোস্ট দিয়েই উপদেষ্টা হয়ে যাচ্ছেন। ভারতের দালালী করা ব্যক্তিরাও ডাক পাচ্ছেন বঙ্গভবনে, যেটি অভ্যুত্থানের সাথে বেঈমানী। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে কীভাবে নিয়োগ দেয়া হলো সেটি স্পষ্ট করার আহবানও জানান তারা। বিক্ষোভে উত্তরবঙ্গের কোনো জেলার কেউ উপদেষ্টা নিয়োগ না পাওয়ার সমালোচনাও করেন আন্দোলনকারীরা।

কার প্রেসক্রিপসনে উপদেষ্টা নিয়োগ, প্রশ্ন হাসনাতের

ছাত্র-জনতার অংশীদারিত্ববিহীন সিদ্ধান্তে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ এবং এতে ফ্যাসিবাদী দোসরদের স্থান দিয়ে শহীদদের রক্তের অবমাননা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কার প্রেসক্রিপশনে উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নও তুলেছেন নেতারা। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এমন অভিযোগ করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যৌথ আয়োজনে বিক্ষোভটি অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ শেষে একটি মিছিল ভিসি চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ থেকে বিতর্কিত ব্যক্তিদের উপদেষ্টা পদ থেকে অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানানো হয়। বিক্ষোভকারীরা বলেন, জুলাই-আগস্টে ফেসবুকে ২/১টা পোস্ট দিয়েই উপদেষ্টা হয়ে যাচ্ছেন। ভারতের দালালি করা ব্যক্তিরাও ডাক পাচ্ছেন বঙ্গভবনে, যেটি অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে বেঈমানি। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে কীভাবে নিয়োগ দেয়া হলো- তা স্পষ্ট করার আহ্বানও জানান তারা। বিক্ষোভে উত্তরবঙ্গের কোনো জেলার কেউ উপদেষ্টা নিয়োগ না পাওয়ারও সমালোচনা করা হয়।

No description available.

 

ছাত্র ও রাজনৈতিক দলের যৌথ অনুমোদনে নিয়োগ হলে মতভেদ তৈরি হবে না

ছাত্র-জনতার মতামত না নিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী চরিত্র ধারণ করে এমন কাউকে উপদেষ্টা পরিষদে মেনে নেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেছেন, জুলাই-আগস্টে যে ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে, আহত হয়েছে তাদের চাওয়া বা আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থি ব্যক্তিদের আমরা উপদেষ্টা পরিষদে দেখতে চাইনা। সোমবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত সমাবেশে থেকে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।

ফ্যাসিস্টদের বংশের ক্ষুদ্রতম ভগ্নাংশও রাখা যাবেনা

হাসনাত বলেন, ছাত্র-জনতার সঙ্গে মশকরা হচ্ছে। ধানমন্ডির ৩২কে যারা কাবা মনে করে তাদের উপদেষ্টা করা হয়েছে। কার মদতে, প্রশ্রয়ে আওয়ামী পুনর্বাসনের এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আমরা তা জানতে চাই। ফ্যাসিবাদের যারা দোসর, ‘২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে কোনো ফরম্যাটেই তাদের দেখতে চাই না। উপদেষ্টা হিসেবে যাদের নিয়োগ দিচ্ছেন গত ১৬ বছরে তারা কী করেছেন তার ইতিহাস আমরা জানতে চাই।
তিনি বলেন, আমাদের হারাবার কিছু নাই। ৫ই আগস্টের পর আমাদের বোনাস লাইফ।

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ৫ জুন থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের সবচেয়ে বড় আইরনি হলো তিন মাস পরেও হাসিনার বিচার চাইতে হয়। ধানমণ্ডি-৩২ কে আদর্শ মনে করা লোকদের উপদেষ্টা দেওয়া হয়। আমরা খুনী হাসিনাকে উৎক্ষাত করেছি, তার লিগ্যাসি রক্ষা করার জন্য না। আমাদের প্রতিবাদের মুখে বঙ্গভবন থেকে মুজিবের ছবি সরানো হয়েছে। যাদের সাথে ফ্যাসিবাদের দূরতম সম্পর্ক রয়েছে তাদেরকে সরকারে দেখতে চাই না।

মনে হচ্ছে ছাত্র-জনতার মতামত ছাড়া, যাচাই-বাছাই ছাড়া, যাকে তাকে উপদেষ্টা বানানো হচ্ছে

সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, যারা বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে ধারণ করে না, ধানমণ্ডি-৩২ কে কাবা মনে করে তাদেরকে আমরা লালকার্ড দেখাই। এমন কাউকে আমরা উপদেষ্টা প্যানেলে চাই না। উপদেষ্টা নিয়োগে আঞ্চলিকতাকে ইস্যু করা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ থেকে কোনো উপদেষ্টা নেই, অথচ আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ উত্তরবঙ্গের। এই সরকারের যারা ফ্যাসিবাদের দোসর তাদেরকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।

উপদেষ্টা করার মতো লোকের কি অভাব পড়ে গেল?

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, ফ্যাসিস্টের দোসর, সফট আওয়ামী লীগ ও সফট শাহবাগীদেরকে উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এর অর্থ হলো আহত ও শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানী করা। গত রোববার যে উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়েছে ছাত্র-জনতাকে জানানো হয়নি। এদেরকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। উপদেষ্টাদের কাজের স্পষ্টতা থাকতে হবে, নিয়োগ প্রক্রিয়া, দুর্নীতি দমন সবকিছু স্পষ্ট করতে হবে। আপনারা প্রতি সপ্তাহের কাজের বিবরণী তুলে ধরতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন উপদেষ্টাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত রয়েছে।

এর আগে রোববার নতুন করে শপথ নেন তিন উপদেষ্টা। তারা হলেন- ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিন, চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।

যাদেরকে নিয়োগ দিচ্ছেন গত ১৬ বছরে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তাদের অবদান কী?

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ৫ই জুন থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের সবচেয়ে বড় আইরনি হলো তিন মাস পরেও হাসিনার বিচার চাইতে হয়। শিক্ষার্থীরা মুজিববাদ এবং আওয়ামী দোসরদের তাড়াতে ব্যস্ত। অন্যদিকে তখন আমরা খবর পাই ধানমণ্ডি-৩২কে যারা কা’বা মনে করে তাদেরকে উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আপনারা যদি মনে করেন ছাত্র-জনতার রক্তকে পুঁজি করে উপদেষ্টা হবেন, তাহলে ভুল বুঝছেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমরা জানতে চাই কাদের প্রেসক্রিপশনে আওয়ামী দোসরদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ছাত্র-জনতার রক্তকে উপেক্ষা করে মশকরা করছেন। চব্বিশ পরবর্তী বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট দোসরদের পুনর্বাসন চাই না। যাদেরকে নিয়োগ দিচ্ছেন গত ১৬ বছরে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তাদের অবদান কী? তাদের লড়াইয়ের ইতিহাস জানতে চাই। আর যদি সমঝোতা করে থাকেন, তাহলে মনে রাখবেন আমাদের জীবনে আর হারানোর কিছুই নেই। আমরা খুনি হাসিনাকে উৎখাত করেছি, তার লিগ্যাসি রক্ষা করার জন্য না। তিনি বলেন, দু’জন ছাত্র উপদেষ্টার প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। আমাদের প্রতিবাদের মুখে বঙ্গভবন থেকে মুজিবের ছবি সরানো হয়েছে। শুধু ছবি নয়, আমরা ফ্যাসিবাদের সকল সিম্বলের রিমুভাল চাই।

ফ্যাসিবাদের দোসরদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে আনা হচ্ছে। বিপ্লব রক্ষার জন্য যা দরকার সবই করবো

উপদেষ্টা পরিষদকে উদ্দেশ্য করে সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, কথা ছিল আবু সাঈদ, ওয়াসিম, মুগ্ধদের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ হবে এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হবে। কথা ছিল গণঅভ্যুত্থানের অংশীদাররা সরকার চালাবে। আপনারা মাঠে বলছেন ছাত্র-জনতার সরকার। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। ফ্যাসিবাদের দোসরদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে আনা হচ্ছে। বিপ্লব রক্ষার জন্য যা দরকার সবই করবো। জুলাই বিপ্লবের শহীদদের আকাঙ্ক্ষা আমরা বাস্তবায়ন করবোই।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর উদ্দেশ্যে সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, সংস্কৃতি বলতে আপনি কী বোঝেন? পশ্চিম থেকে ধার করে আনা জিনিস না কি বাংলাদেশের প্রতিদিনের জীবনচর্চা। প্রাত্যহিক জীবনচর্চা ও মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ কারও মধ্যে না থাকে তাহলে সে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে ধারণ করে না। যারা ধানমণ্ডি-৩২কে কা’বা মনে করে তাদেরকে আমরা লালকার্ড দেখাই। এমন কাউকে আমরা উপদেষ্টা প্যানেলে চাই না। এই সরকারে যারা ফ্যাসিবাদের দোসর আছে তাদেরকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। আঞ্চলিকতার অভিযোগ করে তিনি বলেন, উপদেষ্টা নিয়োগে আঞ্চলিকতাকে ইস্যু করা হচ্ছে। শুধুমাত্র একটা অঞ্চল থেকে উপদেষ্টা নিয়োগে প্রাধান্য পাচ্ছে। আন্দোলনের সময় উত্তরবঙ্গের মানুষের প্রয়োজন হয়, কিন্তু উত্তরবঙ্গ থেকে কোনো উপদেষ্টা নাই। দ্বিতীয় স্বাধীনতার প্রথম শহীদ আবু সাঈদ উত্তরবঙ্গের সন্তান। উত্তরবঙ্গকে বঞ্চিত করা হলে আমরা লালকার্ড দেখাতে বাধ্য হবো।

‘সুবিধাভোগীরা ঢুকে যাচ্ছেন’

‘আওয়ামী সুবিধাভোগীদের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসনের প্রতিবাদে’ বিক্ষোভ মিছিল করেছে ফ্যাসিবাদবিরোধী বিপ্লবী ছাত্র-জনতা। গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিল মৎস্য ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

মিছিল শুরুর আগে সমাবেশে বক্তব্য দেন গণ অধিকার পরিষদের বিভিন্ন পদে থাকা নেতারা। তাঁরা বলেন, উপদেষ্টা পরিষদে আওয়ামী সুবিধাভোগীরা ঢুকে যাচ্ছেন। কয়েকজন উপদেষ্টার সমালোচনা করে বলা হয়, তাঁরা বিগত সরকারের সুবিধাভোগী। যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করার দাবি জানান তাঁরা।

উপদেষ্টা নিয়োগের একতরফা সিদ্ধান্ত; রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদ বিক্ষোভ

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং ছাত্র-জনতার অংশীদারিত্ববিহীন সিদ্ধান্তে উপদেষ্টা নিয়োগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সোমবার (১১ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় নগরীর তালাইমারি বিজয় ২৪ চত্বরে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।

সমাবেশ থেকে তিনটি দাবি উত্থাপন করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাবির অন্যতম সমন্বয়ক মো. ফাহিম রেজা দাবিগুলো পাঠ করেন। সেগুলো হলো:

১. এককেন্দ্রিকতা বাদ দিয়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এই আন্দোলনের সব অংশীদারকে রাষ্ট্রগঠনে সমানভাবে সুযোগ দিতে হবে।

২. ছাত্র-জনতার মতামত না নিয়ে উপদেষ্টা নিয়োগের জবাবদিহি করতে হবে। কোন প্রক্রিয়ায় এবং কোন আঁধার ঘরে বসে সচিবালয়ে উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয় তা অবিলম্বে জাতির সামনে স্পষ্ট করতে হবে।

৩. ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণ ও ঐক্যমতের ভিত্তিতে ছায়া সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যা এই সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের প্রতি দায়বদ্ধ করবে।

এসময় আন্দোলনকারীরা ‘উপদেষ্টায় ওরা কারা, জবাব চায় বিপ্লবীরা’, ‘উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলা, চলছে কেন অবহেলা’, ‘ঢাকাকেন্দ্রিক রাষ্ট্রগঠন, চলবে না চলবে না’, ‘আমার ভাই কবরে, ফারুকী কেন সরকারে’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘আওয়ামী লীগের দালারেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মো. মেশকাত চৌধুরী বলেন, ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্রদের সঙ্গে আবার প্রতারণা করা হচ্ছে। সরকার গঠনে ছাত্রদের অংশদারত্ববিহীন সিদ্ধান্তে ফ্যাসিবাদের দোসরদের ডেকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এই দেশে পুনরায় স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠার যে চক্রান্ত করা হচ্ছে, তা কখনো বাস্তবায়ন হবে না।’

আরেক সমন্বয়ক মো. ফাহিম রেজা বলেন, ‘রাষ্ট্রগঠন ও রাষ্ট্র পুনঃগঠনে ঢাকার বাইরে কাউকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। অথচ রাষ্ট্র প্রত্যেকটি জনগণের। এখানে কোনো বঙ্গের বন্ধুত্ব চলবে না। প্রত্যেকটি অঞ্চলকে এই রাষ্ট্রগঠনে সমান সুযোগ দিতে হবে।’

ঢাকার এসি রুমে বসে তৃণমূলের জনগণের মন বোঝা সম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে এ সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ক্রমান্বয়ে জনগণের রোষানলে পড়তে থাকবে। আজ বিভিন্ন কায়দায় উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যারা গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকারকে ফুয়েল দিয়ে লালন-পালন করেছেন, তারা কীভাবে উপদেষ্টা প্যানেলে জায়গা পান?’

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষক ও মানবাধিকারকর্মী রাশেদ রাজন, সমন্বয়ক মাহায়ের ইসলাম ও সালাউদ্দিন আম্মার।

পদত্যাগের দাবিতে যশোরে বিক্ষোভ

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে যশোরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১১নভেম্বর) বিকেল ৫টায় যশোর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোরের আয়োজনে বিক্ষোভ মিছিল হয়।
এসময় বক্তারা বলেন, শেখ বশির উদ্দীন যশোরের মানুষ হওয়ায় আমাদের খুশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বশির উদ্দিন সরাসরি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র হত্যার সাথে জড়িত। তাকে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা শহীদ ভাইদের রক্তের সাথে বেইমানি। অবিলম্বে শেখ বশির উদ্দীনকে উপদেষ্টা পথ থেকে অপসারণ চাই।
বক্তব্য রাখেন, সমন্বয়ক রাশেদ খান, মারুফ হোসেন সুকর্ন, বিএম আকাশ, সোয়াইব হোসেন, আল মামুন লিখন, নুর ইসলাম প্রমুখ।

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্য নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে। ২৪ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের অন্তত ১৩ জনের জন্মস্থান চট্টগ্রাম বিভাগে। এই ১৩ উপদেষ্টার দপ্তর-উপ দপ্তরেও তাদের নিজস্ব এলাকার ব্যক্তিদের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। উপদেষ্টা পরিষদে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঢাকা বিভাগের রয়েছেন ৭ জন। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কেউ উপদেষ্টা পরিষদে নেই। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের একজন করে আছেন। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম এবং কুমিল্লা জেলা থেকে উপদেষ্টা হয়েছেন বেশি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকেই এই বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এমন বৈষম্য দূর করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে।

রাজনৈতিক সরকারের সময়েও মন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভাগ ও অঞ্চল বিবেচনা করে নিয়োগ দেয়া হয় যাতে সব অঞ্চল ও এলাকার প্রতিনিধিত্ব থাকে। কিন্তু অন্তর্বর্র্র্র্র্র্র্র্তীকালীন সরকারে এক্ষেত্রে বড় বৈষম্য তৈরি হয়েছে অঞ্চল বিবেচনায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উপদেষ্টা পরিষদে এই অঞ্চল বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘শুধু ১টা বিভাগ থেকে ১৩ জন উপদেষ্টা; অথচ উত্তরবঙ্গের রংপুর, রাজশাহী বিভাগের ১৬টি জেলা থেকে কোনো উপদেষ্টা নাই! তার উপর খুনি হাসিনার তেলবাজরাও উপদেষ্টা হচ্ছে!’

ওদিকে রোববার রাতে তিন উপদেষ্টার শপথ নেয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অঞ্চল বৈষম্য নিরসন দাবি করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন উত্তরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. নূরুল আমীন বেপারী বলেন, বিভিন্ন জায়গায় কথা উঠেছে সরকার এক বিভাগ থেকেই বেশি উপদেষ্টা নিয়েছে। এ কারণে সরকার বেশি সফলতা পাচ্ছে না বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্মস্থান চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নে। শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের জন্মস্থানও চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী জেলায়।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের পৈতৃক নিবাসও চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। যদিও তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ঢাকায়। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলও চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা জেলার। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারও চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা। একই জেলার যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপের অধিবাসী। একই জেলার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক। ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার চট্টগ্রামের চন্দনাইশের বাসিন্দা। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের পৈতৃক বাড়িও চট্টগ্রামে। বিয়ে ও পরিবার সূত্রে তিনি ঢাকার ধামরাইয়ের বাসিন্দা। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার বাড়ি চট্টগ্রাম বিভাগের খাগড়াছড়িতে। সর্বশেষ উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়া মো. মাহফুজ আলমের বাড়ি চট্টগ্রাম বিভাগের লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের জন্ম কলকাতায়। কলকাতা কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করে পরে তিনি ঢাকায় আসেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ঢাকা বিভাগের নরসিংদী জেলার অধিবাসী। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ঢাকা বিভাগের মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বাসিন্দা। শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানও একই জেলার। বন ও পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার অধিবাসী। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ঢাকা জেলার বাসিন্দা। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী ঢাকার বাসিন্দা।

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বরিশাল বিভাগের একমাত্র উপদেষ্টা।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের জন্মস্থান সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জে। যদিও তিনি কর্মসূত্রে ময়মনসিংহে স্থায়ী। তাকে বাদ দিলে সিলেট বিভাগের একমাত্র উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আর গণশিক্ষা উপদেষ্টাকে সিলেটের বাসিন্দা ধরলে ময়মনসিংহ বিভাগেরও কোনো উপদেষ্টা নেই। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ ঢাকার অধিবাসী। খুলনা বিভাগ থেকে একমাত্র উপদেষ্টা হয়েছেন সেখ বশির উদ্দীন। তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।