• ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সংবিধানে গণভোটের বিধান বহাল , ‘সংবিধান থেকে ‘জাতির পিতা’ ও ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ বাতিলের পক্ষে যুক্তি অ্যাটর্নি জেনারেলের

usbnews
প্রকাশিত নভেম্বর ১৩, ২০২৪
সংবিধানে গণভোটের বিধান বহাল , ‘সংবিধান থেকে ‘জাতির পিতা’ ও ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ বাতিলের পক্ষে যুক্তি অ্যাটর্নি জেনারেলের
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

সংবিধান থেকে ‘জাতির পিতা’, ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’, ‘সমাজতন্ত্র’ এবং ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা’ বিষয়গুলো বাদ দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বুধবার (১৩ নভেম্বর) পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে জারি করা রুলের শুনানিতে এ কথা বলেন। শুনানি হয় বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চে।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে এই নয় যে, হাজার হাজার মানুষকে গুম করা হবে, ৬০ লাখের বেশি মানুষকে গায়েবি মামলায় আসামি করা হবে, বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হবে। যাদের কোনো হাত নেই, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এমনকি হজে থাকা ব্যক্তিরাও আসামি হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে এসব কিছু হতে পারে না।”

তিনি আরো বলেন, “সংবিধানের ৭(খ) অনুচ্ছেদ গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। এটি গণতন্ত্রের মূলনীতি নয়, বরং সমাজতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া হয়েছে, যা আমরা চাই না। শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে অস্বীকার করা যায় না, কিন্তু ‘জাতির পিতা’ তকমা নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করেছে।”

অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, “পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ‘জাতির পিতা’ শব্দটি সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছিল, কিন্তু স্বাধীনতার পর প্রথম সংবিধানে তা ছিল না। এটি জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে কথা বললে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে গণ্য করা হচ্ছে। এটা সংবিধানের মৌলিক স্পিরিটের পরিপন্থী।”

তিনি ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা’ প্রসঙ্গে বলেন, “বাংলাদেশের ৯০% মুসলমান, তাই রাষ্ট্রের ধর্ম নিরপেক্ষ শব্দটি রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। আগে যেমন ছিল, তেমনি থাকতে হবে। সংবিধানের ২(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল হবে এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে।”

তবে সবচেয়ে বড় বিতর্কের বিষয় ছিল ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’। অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, “সংবিধানের ৯ অনুচ্ছেদে বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলা হয়েছে, যা সাংঘর্ষিক। এটি একটি জাতীয়তাবাদের সংকট তৈরি করে, যা সংবিধানের মূল ভাবনার সাথে মেলে না।”

তিনি আরো বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের কারণে দেশের মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে, মৌলিক অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ৯০-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ২৪ জুলাই বিপ্লবের সাথে সাংঘর্ষিক।”

অ্যাটর্নি জেনারেল দাবি করেন, “যদি পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল না করা হয়, তবে ২৪ জুলাই বিপ্লবের শহীদরা, বিশেষ করে আবু সাঈদ, মুগ্ধ ও অন্যান্য শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে না।”

এভাবে তিনি আরও যুক্তি দেন, যে পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্যে যা রয়েছে, তা সংবিধানের মূল উদ্দেশ্য ও দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে জারি করা রুলের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সংবিধানে গণভোটের বিধান বহাল করতে হাইকোর্টের কাছে আর্জি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান ছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের এই বিধান তুলে দেওয়া হয়েছিল, আমরা গণভোটের এই বিধানটি বহাল চাই। যারা নিশি রাতে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে এমপি হয়েছিলেন, তাদের ভোটে এই বিধান বাতিল হয়।

বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে অ্যাটর্নি জেনারেল এসব বক্তব্য তুলে ধরেন।

গত ১৯ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেছিলেন। সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত এ রুল জারি করেন।

২০১১ সালের ৩০ জুন শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি

২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই সংশোধনীর দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।এ ছাড়া, জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বিদ্যমান ৪৫-এর স্থলে ৫০ করা হয়।