• ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহের দেশভিত্তিক তথ্য প্রকাশ : রেমিট্যান্স আহরণে প্রথম স্থানে উঠে এলো যুক্তরাষ্ট্র

usbnews
প্রকাশিত নভেম্বর ১৫, ২০২৪
বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহের দেশভিত্তিক  তথ্য প্রকাশ : রেমিট্যান্স আহরণে প্রথম স্থানে উঠে এলো যুক্তরাষ্ট্র
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। এতে ‘চমক’ দেখাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৮৯৩ কোটি ৭১ লাখ (৮.৯৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। আর রেমিট্যান্সের এই উল্লম্ফনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী প্রবাসীরা; দেশটি থেকে জুলাই-অক্টোবর সময়ে ১৪১ কোটি ৮৩ লাখ (১.৪২ বিলিয়ন) এসেছে, যা মোট রেমিট্যান্সের ১৬ শতাংশ। আর গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি এসেছে চলতি বছর। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে ১০৪ শতাংশ। এর মধ্যদিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে পেছনে ফেলে রেমিট্যান্স আহরণে হঠাৎ করেই শীর্ষ দেশের তালিকায় উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের চেয়ে অনেক কম বাংলাদেশি অবস্থান করেন যুক্তরাষ্ট্রে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহের দেশভিত্তিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে আরব আমিরাত থেকে এসেছে ১৩৬ কোটি ৫৮ লাখ (১.৩৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স। সৌদি আরব থেকে এসেছে ১১৭ কোটি ৬১ লাখ (১.১৭ বিলিয়ন) ডলার। মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ৮১ কোটি ৫২ লাখ ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ৭৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলার।

১৯৭৪-৭৫ অর্থবছর থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা শুরু হয় বাংলাদেশে। ওই বছরে ১ কোটি ১৮ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেই রেমিট্যান্স দুই হাজার গুণের বেশি বেড়ে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।
গত অর্থবছরের আগে পঞ্চাশ বছরে প্রতিবারই সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সৌদিকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। শুধু তাই নয়, রেমিট্যান্স আহরণের তালিকায় সৌদি আরব নেমে যায় চতুর্থ স্থানে। দ্বিতীয় স্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্র; তৃতীয় স্থানে যুক্তরাজ্য।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সৌদি আরবের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ রেমিট্যান্স আসে আমিরাত থেকে। ওই অর্থবছরে সৌদি থেকে ২৭৪ কোটি ১৫ লাখ ডলার আসে। আমিরাত থেকে আসে ৪৬০ কোটি ডলার। আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৯৬ কোটি ১৬ লাখ ডলার এসেছিল। এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ সময়ে সৌদি আরব থেকে ৩৭৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার এসেছিল। আরব আমিরাত থেকে এসেছিল ২৪.১০ শতাংশ কম, ৩০৩ কোটি ৩৮ লাখ। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে এসেছিল যথাক্রমে ৩৫২ কোটি ২০ লাখ ও ২০৮ কোটি ৪ লাখ ডলার।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) হিসাবেও সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল আরব আমিরাত থেকে; ১০৩ কোটি ২২ লাখ ডলার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৯২ কোটি ৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। সৌদি আরব থেকে আসে ৮৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছিল ৫৬ কোটি ৫৬ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স বড় উল্লম্ফন দেখা যায়। এই মাসে দেশটিতে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ৫০ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সৌদি আরব থেকে এসেছে ৩১ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ১৯ কোটি ৭৮ লাখ ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদরা বলেন, প্রথমত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিও এক ধরনের চাপের মধ্যে পড়েছিল; মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। দেশটির মানুষের পাশাপাশি সেখানে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদেরও খরচ বেড়েছিল। সে কারণে সেখানকার প্রবাসীরা দেশে পরিবার-পরিজনের কাছে কম টাকা পাঠিয়েছিলেন। এখন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি কমে স্বাভাবিক হয়েছে; ২ শতাংশে নেমেছে। অর্থনীতিও চাঙ্গা হচ্ছে। তাই এখন আমাদের প্রবাসীরা বেশি টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন। তারা বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে গত ১৯শে সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র এক ধাপে নীতি সুদহার ০.৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়েছে। এর আগেও কয়েক দফা বাড়িয়েছিল। বিপরীতে বাংলাদেশে সুদহার বাড়ছে। আবার বৈদেশিক মুদ্রায় সঞ্চয়ের বিভিন্ন নীতিমালা সহজ হয়েছে। আবার সামপ্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাহায্য, সরকার পরিবর্তনের পর হুন্ডি কমাসহ বিভিন্ন কারণে রেমিট্যান্স বাড়তে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানকারীদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের ভালো অর্থনৈতিক অবস্থাও দেশটি থেকে রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন তারা। তাদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা পেশাগতভাবে তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে আছেন। ফলে তাদের উপার্জনও বেশি। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যারা দেশে টাকা পাঠান, তারা তুলনামূলকভাবে একটু বেশি অর্থ দেশে পাঠাতে পারেন। তাদের অনেকেই আবার বন্ডে বিনিয়োগ করেন।