দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বিদেশে চিকিৎসা নিতে প্রতিবছর চার বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী। শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্বাস্থ্য খাতে বিদেশমুখিতা কমাতে দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি’ বিষয়ক সেমিনারে এ কথা জানান তিনি। ঢাকা চেম্বার অডিটোরিয়ামে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের মাথাপিছু ব্যয় ১১০ ডলার, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে ব্যয় হয় ৪০১ ডলার।
তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ৩০,১২৫ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের মাত্র ৩.৭৮ শতাংশ। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতার কারণে দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিশ্বের অন্যান্য দেশের সেবা নিয়ে থাকে। বিদেশে চিকিৎসা নিতে প্রতিবছর ব্যয় ৪ বিলিয়ন ডলার। ২০১২ সালে বিদেশে স্বাস্থ্য সেবা নেয়ায় বাংলাদেশিদের ব্যয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার।
তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ৫,৪৬১ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে, যার মধ্যে ১৮১০টি ঢাকা বিভাগে অবস্থিত, পাশাপাশি ৩৬টি স্পেশালাইজড হাসপাতালের মধ্যে ১৯টি ঢাকাতে অবস্থিত হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী লোকজন উন্নত স্বাস্থ্য সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত ঢাকার উপর চাপ বাড়ছে।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ডব্লিউটিও-এর তথ্যমতে বাংলাদেশের ৪৯ ভাগ মানুষই মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পায় না, সেই সাথে স্থানীয় সেবায় প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক মান না থাকায় বিদেশে স্বাস্থ্য সেবা নেয়ার প্রবণতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখাতের উন্নয়নে বিশেষকরে উন্নত অবকাঠামো ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, বাজেট সহায়তা বাড়ানো, আন্তর্জাতিক হাসপাতলসমূহের চেইন কার্যক্রম বাংলাদেশে চালুকরণ, বিদেশি ডাক্তার ও নার্সদের বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজীকরণসহ স্বাস্থ্যখাতের সকল ধরনের লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়নের প্রক্রিয়াগত জটিলতা নিরসন এবং ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রবর্তন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেসরকারিখাতে হাসপাতাল কার্যক্রম চালু উৎসাহিতকরণে কর অব্যাহতি সুবিধা প্রদানের উপর জোরারোপ করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
ডিসিসিসিআই’র সভাপতি আশরফ আহমেদ বলেন, ক্রমবর্ধমান হারে মধ্যবৃত্ত পরিবারগুলো সম্প্রতি বিদেশে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে যাচ্ছে, যদিও অনেক চিকিৎসা স্থানীয়ভাবেও পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, রোবোটিক সার্জারির মতো স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা সেবা পাওয়া সম্ভব হলেও তুলনামূলকভাবে কম আত্মবিশ্বাস এবং গ্রাহকদের সন্তুষ্টির অভাবে বিদ্যমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, গ্রাহক সন্তুষ্টি কেবল চিকিৎসা থেকে আসে না, বরং পুরো হাসপাতালের ইকো-সিস্টেম যথা: নার্স, প্রশাসন, টেকনোলোজিস সবাই এর সাথে সম্পৃক্ত। মানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ব্র্যান্ডিং-এর জন্য, বিদেশি ডাক্তার, নার্স ও টেকনোলজিস দেশে আসার প্রক্রিয়া আরো সহজতর করতে হবে।