মাদার অফ মাফিয়া শেখ হাসিনার হেলমেট বাহিনী, লাঠিয়াল বাহিনী ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বেশির ভাগ নেতাই পলাতক এবং অনেক নেতা কারাগারে। কিছু নেতার বিচার চলছে। শীর্ষ নেতাদের কাঁপনি চললেও এখন মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা। তারা কার্যত এখনো বেপরোয়া।
শেখ হাসিনা পালালেও শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা এখন রিকশা শ্রমিক লীগের হয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকের নামে রাজধানী ঢাকায় কয়েকদিন ধরে সড়ক ও রেলপথ অবরোধের নামে তাণ্ডব চালাচ্ছে। হাইকোর্টের দেয়া আদেশ অমান্য করে তারা প্রতিদিন ঢাকার বিভিন্ন সড়ক, রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে, পথচারীদের হয়রানি করছে। কোথাও কোথাও লাঠি হাতে কোথাও দেশীয় অস্ত্র হাতে তারা বেপরোয়া হয়ে ত্রাস করছে। সাধারণ রিকশা চালক যারা রিকশা চালাচ্ছেন তাদের রিকশা আটকে দিয়ে চালকদের মারধোর করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও রিকশার যাত্রীদের হয়রানিও করা হচ্ছে। সড়ক অবরোধ করায় একদিকে যানজটে লাখ লাখ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছে অন্যদিকে লাঠি-অস্ত্র এবং মারমুখি ভাঙচুরে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। রাজধানী ঢাকায় ব্যাটারি চালিত রিকশা চালাতে দেয়ার দাবিতে ত্রাস সৃষ্টিকারী শ্রমিক লীগের নেতারা সুকৌশলে ব্যানারে বিএনপির নেতাদের ছবি ব্যবহার করছে।
গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী, জাতীয় প্রেসক্লাব, মিরপুর, মালিবাগ, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, আগারগাঁও, নাখালপাড়া, রামপুরা, খিলগাঁও মহাখালীতে সড়ক অবরোধ করে রেখে বিক্ষোভ করে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালক নামধারী শ্রমিক লীগের সন্ত্রাসীরা। মূলত ঢাকা মহানগর এলাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপে হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিবাদে চালকের নামে শ্রমিক লীগ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। টানা কয়েকদিন ধরে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকের নামে শ্রমিক লীগ ও রিকশা শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীদের ভয়াবহ তাণ্ডব। রাজপথ অবরোধ কর্মসূচি পালনের নামে রাজধানীকে অচল করে দেয়ার চেষ্টা করছে। রাজধানীর বিভিন্ন ব্যস্ত সড়ক সকাল-বিকাল অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করছেন তারা। দেশি অস্ত্র ও লাঠি হাতে মহড়া দিচ্ছেন এবং ভাঙচুর করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। অথচ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অনেকটা অনুনয় বিনয় করে তাদের সড়ক থেকে তুলে দেয়ার চেষ্টা করছে। অবরোধের কারণে যানজটে ভুক্তোভোগীদের অভিযোগ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হলে শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা রিকশা চালকের বেশ ধরে রাস্তায় তাণ্ডব চালাতে পারতো না। শর্ষের ভিতরে ভুতের মতোই শ্রমিক লীগ নেতারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যকে হয়তো ম্যানেজ করেছে।
ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহারসহ ১১ দফা দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় বেলা ১১টার দিকে জড়ো হন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক নামধারী রিকশা শ্রমিক লীগের হাজারো কর্মী। এ সময় পল্টন-প্রেসক্লাব ও হাইকোর্ট এলাকার সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই পথে চলাচলকারী বাসে আটকে থাকা শত শত যাত্রী।
সকালে যাত্রাবাড়ীর চৌরাস্তা এলাকায় রিকশা শ্রমিক লীগ নেতাদের নেতৃত্বে কিছু অটো-রিকশা চালক সড়ক অবরোধ করেছিলেন বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের যাত্রাবাড়ী অঞ্চলের সহকারী কমিশনার আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, সকাল ৯টার পর তারা পৌনে এক ঘণ্টার জন্য সড়ক অবরোধ করেছিলেন। সে সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকাল পৌনে ১০টার দিকে তারা সেখান থেকে সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনকারীরা যানবাহন ভাঙচুর করলে আশপাশের ফুটপাতের ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় জনতা ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের ওপর ধাওয়া করে। আসাদগেট এলাকা থেকে সাভার পরিবহনে চড়ে আসা একজন যাত্রী শহীদুল ইসলাম জানান, তাকে বহন করা বাসটি মৎস্য ভবনের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর যানজটের কারণে আটকে পড়ে। পরে তিনি জানতে পারেন প্রেসক্লাবের দিকে রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন চলছে। উপায় না পেয়ে গাড়ি থেকে নেমে তিনি হেঁটে রওনা দেন গুলিস্তানের উদ্দেশে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ পালিয়েছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে দিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছে। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক লীগ নিষিদ্ধ না হওয়ায় তারা নানা নামে তাণ্ডব চালাচ্ছে। যাত্রাবাড়ী মোড়ে আটকে পড়া হোসেন আলী জানান, ঢাকার অটো-রিকশা গ্যারেজের বেশির ভাগ মালিক শ্রমিক লীগ ও যুবলীগের সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘ ১৫ বছর এরা নানা সুবিধা নিয়েছে এবং এ সেক্টরে হাজার হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছে। এখন তারা হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে রাজপথে ত্রাস করছে। অথচ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাসোহারা অর্থ পাওয়ায় অটো-রিকশা গ্যারেজগুলো উঠিয়ে দিচ্ছে না।
জানা যায়, ১৯৬৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শ্রমিক লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। হাসিনা রেজিমের ১৫ বছরে শ্রমিক লীগের অন্তর্ভুক্ত বেসিক ইউনিয়ন হয় ৩৩৩টি। এর মধ্যে ওয়াসা, রাজউক, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, ডিপিডিসি, এফডিসি, ডেসকো, গণপূর্ত যান্ত্রিক কারখানা, ট্যানারি, জাতীয় জাদুঘর, কম্পিউটার কাউন্সিল, এনটিআরসিএ, ঢাকা ঘাট, হোটেল সোনারগাঁও, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, কাওরান বাজার রিকশা ভ্যান শ্রমিক লীগ, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগ প্রমুখ। এছাড়া শ্রমিক লীগের ১২টি সিটি কমিটি, একটি মহিলা কমিটি, একটি যুবক কমিটি, ৬৪টি জেলা কমিটি, ৩০টি আঞ্চলিক কমিটি, ১৫টি বিদেশি কমিটি, ৪৯১টি থানা/উপজেলা কমিটি ও ৩২৭টি মিউনিসিপালসহ মোট ১ হাজার ৩৬৯টি কমিটি রয়েছে। এসব কমিটির সবগুলোতে একশ্রেণির নেতা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে চাঁদাবাজিতে জড়িত। শ্রমিক লীগের ৭ লাখ সদস্যের মধ্যে ৫ লাখই চাঁদাবাজিতে জড়িত। বিগত সরকারের সময় প্রতিবছর ৪২৬ খাতে ২১৬০ কোটি টাকার চাঁদাবাজি করেছিল। হাসিনার পালানোর পর ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে ছাত্রলীগের অনেকেই এখন শ্রমিক লীগের ব্যানারে সক্রিয় হচ্ছেন। এদের মূল দল আওয়ামী লীগের পলাতক কেন্দ্রীয় কিছু নেতা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা টাকা দিয়ে রিকশা শ্রমিক লীগের নামে ব্যাটারি চালিত রিকশাচালক বেশে আন্দোলনে নামিয়েছেন। তারাই মূলত রাজধানীর মূল সড়কে ব্যাটারি চালিত রিকশা চালাতে দেয়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে ত্রাস সৃষ্টি করছে।
শফিকুর রহমান নামের একজন ব্যবসায়ী শনির আখড়া থেকে যাত্রাবাড়ী মোড়ে অবরোধে আটকে যান। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে রাস্তাঘাটের যে পরিস্থিতি, কথায় কথায় সড়ক বন্ধ করে দেয়। সাধারণ মানুষ নিয়ে কেউ ভাবে না। আন্দোলন তো আরো অনেকভাবেই করা যায়। কিছু হলেই রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার এই প্রবণতা বন্ধ হওয়া উচিত। বিশেষ করে শ্রমিক লীগের ব্যাটারি চালিত রিকশা চালানোর দাবিতে যে আন্দোলন তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আওয়ামী লীগ নেত্রী ভারতে পালিয়ে গেলেও তার অনুগত শ্রমিক লীগ এখনো ঢাকার রাজপথে তাণ্ডব চালাচ্ছে কেন সেটাই প্রশ্ন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির নেতাদের ছবিসহ ব্যানার নিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এ সময় ব্যাটারি চালিত রিকশা চালক নামের সন্ত্রাসীরা আশপাশের রাস্তা বন্ধ করে সাধারণ রিকশা চালকদের রিকশা আটকিয়ে দেয়। তারা রিকশা চালকদের মারধোরও করে। এ সময় যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে তাদের নাজেহাল হতে হয় ব্যাটারি চালিত রিকশা চালক নামধারী শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীদের হাতে। রিকশা যাত্রী এক নারীকে বলতে শোনা যায়, হাসিনা পালিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলে শ্রমিক লীগের সন্ত্রাসীরা রাস্তায় অবরোধ করে কীভাবে? পুলিশ কি জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে। ঢাকার শহরের কোথায় ব্যাটারি চালিত রিকশার গ্যারেজ পুলিশ তা জানে। ওই সব অবৈধ গ্যারেজ ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে না কেন?