• ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

তুরিন আফরোজ আমাকে জামায়াতের রোকন বানিয়ে নির্যাতন করেছে: তুরিন আফরোজের মা

usbnews
প্রকাশিত নভেম্বর ২৫, ২০২৪
তুরিন আফরোজ আমাকে জামায়াতের রোকন বানিয়ে নির্যাতন করেছে: তুরিন আফরোজের মা
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন করা ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিচার চেয়েছেন তার মা শামসুন্নাহার তাসলিম। তুরিন তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্টার্স ফোরামের সামনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

শামসুন্নাহার তাসলিম বলেন, ‘তুরিন আমাকে নিজ বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আমাকে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। পৌনে এক বছর যাবত আমি উত্তরার বাসা থেকে বের হয়েছি। গ্রামের বাড়ি নীলফামারীতেও আমার বাবার জায়গা দখলের চেষ্টা করছে। আমি মানবাধিকার বঞ্চিত হচ্ছি। আমি বিচার চাই।’

তুরিন আফরোজের মা আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর থাকা অবস্থায় তুরিন ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাকে পুলিশ দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে। তুরিন সে সময় আমাকে জামায়াতের রোকন বানিয়ে দিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশালীন মন্তব্য লিখেই যাচ্ছে। আমাকে হয়রানি করেই যাচ্ছে। আমি তার বিচার চাই।

পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শামসুন্নাহার তাসলিম বলেন, আমি জিডি করতে থানায় গেছি। পুলিশ ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাকে বসিয়ে রেখে ফেরত দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার চলে গেছে। এতদিন আমি কারও কাছে বিচার চাইতে পারিনি। এখন আমি বিচার চাই।

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের কাছে নিগৃহীত হয়ে নিজ বাড়িতে ফিরতে এর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছিলেন তার মা শামসুন্নাহার তাসলিম।

 

এর আগে গত ২০ জুন ২০১৯ তারিখে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তুরিন আফরোজের ছোট ভাই শাহনেওয়াজ শিশির।

তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে গর্ভধারিণী মায়ের যে অভিযোগ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের গর্ভধারিণী মা অভিযোগ করেছেন, মেয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এরপর ৬০ শতাংশ অকেজো কিডনি নিয়ে এখন তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। উত্তরার নিজ বাড়িতে ফেরার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তুরিনের মা। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে আইন, বিচার, মানবাধিকার ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তুরিন আফরোজের মা শামসুন নাহার তসনিম।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তুরিন আফরোজের ছোট ভাই শাহনেওয়াজ শিশির।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, তার ৬০ শতাংশ কিডনি অকেজো। এ অবস্থায় বাড়ি ভাড়ার টাকাসহ চিকিৎসার টাকাও নিয়ে গেছে তার মেয়ে।

তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে তার মায়ের যে অভিযোগ

শামসুন নাহার তসনিম বলেন, ‘আজ দুই বছর তিন মাস ঊনিশ দিন আমি আমার বাসার বাইরে। আমার স্বামী মারা যাওয়ার আঠারো দিন পরে তুরিন আমাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। আমার দোষ তার (তুরিন আফরোজ) কিছু অনৈতিক আচরণের প্রতিবাদ করা। যেমন- আমাদের ভাড়াটিয়াদের থেকে সবসময় ভাড়ার টাকা আমিই নিতাম। আমার স্বামী অবসরে যাওয়ার পর থেকেই বাড়িভাড়ার টাকায় আমাদের সংসার, ওষুধ খরচ চলতো। এরপর ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সে বাসা ভাড়ার টাকা জোর করে নিয়ে নেয়। অপরিচিত লোকদের রাত-বিরাত ঘরে প্রবেশ নিয়ে দারোয়ান ও ভাড়াটিয়ারা অভিযোগ করলে তার সঙ্গে প্রায়ই লাগতো (ঝগড়া)। এসব বিষয়ে নিষেধ করলে ডিজিএফআই, র‌্যাব, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে ভয় দেখাতো এবং বলতো ওরা সবাই তার বন্ধু। কোনো কিছু বললেই ৫৭ ধারায় গ্রেফতার করার ভয় দেখাতো। আমি তো ধারা বুঝি না। আরও বলতো, পৃথিবীর যেখানেই থাকো সেখান থেকেই ধরে নিয়ে আসবো।’

পৃথিবীর যেখানেই থাকি সেখান থেকেই আমাকে ধরে আনার হুমকি দিতো উল্লেখ করে সামসুন নাহার তসলিম বলেন, ‘তুরিন আমাদেরকে তার গানম্যান দিয়ে ভয় দেখাত। আমি গ্রামের বাড়ি নীলফামারী যেতে পারি না। সে সেখানে দায়িত্ব নিয়ে গ্রামের বাড়ির জমিজমা ও বাড়ি কুক্ষিগত করেছে। প্রতিবাদ করলে বড় আপু ( শেখ হাসিনা) ও ছোট আপুর (শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা) প্রসঙ্গ টানত।’

তিনি বলেন, গানম্যান দিয়ে ভয় দেখাতো তুরিন। গ্রামের বাড়ি নীলফামারী যেতে পারি না, সে সেখানে দায়িত্ব নিয়ে জমিজমা ও বাড়ি নিজের নামে কুক্ষীগত করেছে। প্রতিবাদ করলে প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম করেও হুমকি দেয়।

মেয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তুরিন আফরোজের মা বলেন, ‘আমার স্বামী অবসরে যাওয়ার পর থেকেই বাড়িভাড়ার টাকায় আমাদের সংসার, ওষুধ খরচ চলত। এরপর ওর বাবা মারা যাওয়ার পর তুরিন বাসা ভাড়ার টাকা জোর করে তুলে নেয়। অপরিচিত লোকদের নিয়ে রাত-বিরাতে ঘরে ঢোকে। দারোয়ান-ভাড়াটিয়ারা অভিযোগ করলে তার সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া লাগত। এ সব বিষয়ে নিষেধ করলে ডিজিএফআই, র‌্যাব, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে আমাদের ভয় দেখাত। বলত ওরা সবাই তার বন্ধু। কোনোকিছু করলে ৫৭ ধারায় গ্রেফতার করার ভয় দেখাত।’

 

ভাইয়ের বিরুদ্ধে তুরিন আফরোজের মামলা হাইকোর্টে স্থগিত

ভাইয়ের বিরুদ্ধে তুরিন আফরোজের মামলা হাইকোর্টে স্থগিত

বোনের চরিত্র নিয়ে মিথ্যা দুর্নাম রটনার অভিযোগ তুলে ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশিরের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের দায়ের করা মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছিল হাইকোর্ট। তখন আগামী ছয় মাসের জন্য এ স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি মামলাটি কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল আদালত।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি- ২০২৩) এ বিষয়ে এক আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আজ আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মনযুর রাব্বি। তার সঙ্গে ছিলেন এম আনিসুজ্জামান।

পরে আদালত থেকে বেরিয়ে আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী মনযুর রাব্বি বলেন, একই দিনে তুরিন আফরোজ এবং তার ভাই শাহনেওয়াজ থানায় জিডি করেন। কিন্তু পুলিশ ভাইয়ের জিডি না নিয়ে বোনের জিডি নিয়ে মামলা ফাইল করে, যা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এই বিবেচনায় মামলাটি বাতিলযোগ্য। আদালত আমাদের শুনানি নিয়ে মামলার কার‌্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন।

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশিরের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন আদালত।

২০১৯ সালের ১৪ জুন বাস ভবনে জোরপূর্বক প্রবেশ করতে চাওয়ার জন্য এবং তুরিন আফরোজকে প্রাননাশসহ নানারূপ অশালীন হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলে উত্তরা পশ্চিম থানাতে নিজের মা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি পাল্টা জিডি করেন তুরিন আফরোজ।

পরবর্তী সময়ে তদন্তে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের করা জিডির (জিডি নং–৭৭৯/১৯) সত্যতা প্রমাণিত হয়। ফলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তুরিন আফরোজের মা ও ভাইএর বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানার নন এফ আই আর নং-১১৯/১৯ মামলা করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি আমলে নেন। ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর আসামি শাহনাওয়াজ শিশিরের বিরুদ্ধে এরেস্ট ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়।

এই মামলায় তিনি ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন নেন। এরপর মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন বিচারিক আদালত। এদিকে মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন তুরিন আফরোজের ভাই শাহনেওয়াজ।