• ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সময়ের দাবি ‘দিল্লির আধিপত্য ঠেকাতে জাতীয় ঐক্য’ , সরকার উৎখাতে ভারতীয় ষড়যন্ত্র

usbnews
প্রকাশিত নভেম্বর ২৬, ২০২৪
সময়ের দাবি ‘দিল্লির আধিপত্য ঠেকাতে জাতীয় ঐক্য’ , সরকার উৎখাতে ভারতীয় ষড়যন্ত্র
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়/যখন শকুন নেমে আসে এই সোনার বাংলায়; নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়; যখন আমার দেশ ছেয়ে যায় দালালেরই আলখাল্লায়/ নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়; যখন আমার স্বপ্ন লুট হয়ে যায়; আমার কণ্ঠ বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়’ (সৈয়দ শামসুল হক)। প্রায় আড়াইশ’ বছর আগে ‘ব্রিটিশ খেদাও’ আন্দোলনে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ফুলচৌকি গ্রামের নবাব নুরুউদ্দিন মোহাম্মদ বাকের জং ডাক দিয়েছিলেন, ‘জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়?’ ইংরেজ শকুন হটাতেই তিনি এই ডাক দেন। বাংলাদেশে এখন ভারতীয় শকুন, দিল্লির দালালের আলখাল্লায় ভরে গেছে। সিকিমের লেন্দুপ দর্জির মতো শেখ হাসিনাকে ‘নাচের পুতুল’ বানিয়ে ১৬ বছর বাংলাদেশকে পদানত করে রেখেছিল হিন্দুত্ববাদী ভারত। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা দিল্লিতে পালিয়ে যাওয়ার পর সেই ভারত ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের মেতে উঠেছে। একের পর এক ষড়যন্ত্র করছে, আন্দোলনের কার্ড ছুঁড়ছে এবং বিপুল অর্থ ব্যয়ে ঢাকায় দালালচক্র সৃষ্টি করেছে। এই চক্র কখনো সম্মিলিত ভাবে কখনো বিক্ষিপ্ত ভাবে নানান মোড়কে বাংলাদেশে বিশৃংখলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এখন দেশ বাঁচাতে বিএনপি, জামায়াত, ডান-বাম, ছোট-বড় সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। নুরুউদ্দিনের মতো ঐক্যবদ্ধভাবে ‘জাগো বাহে কোনঠে সবায়’ ডাক দিয়ে হিন্দুত্ববাদী ভারতের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে হবে। সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর লালসালু উপন্যাসের সেই উক্তি ‘ধান দিয়ে কী হইব মানুষের জান যদি না থাকে?’ এর মতোই বলতে হচ্ছে রাজনীতি করে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গিয়ে কি হবে দেশের সার্বভৌমত্ব যদি না থাকে’।

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ বা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) হলো গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদের অনুসারী একটি হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ১৯৬৬ সালে নিউ ইয়র্কে অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে হিন্দু নেতা বা হিন্দু ধর্মাবলম্বী হিসেবে গ্রেফতার করা হয়নি। বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে তিনি দেশবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উপরে ইসকনের পতাকা উড়িয়ে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ করেছেন। চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বাংলাদেশকে হুমকি দিয়েছে। ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে শুভেন্দু বলেছে, ‘২৫ নভেম্বর রাতের মধ্যে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে মুক্তি না দিলে ২৬ নভেম্বর থেকে সীমান্ত সনাতনীরা অবরোধ করবে। ভারত থেকে পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে কোনও পরিষেবা বাংলাদেশে ঢুকতে দেব না’। একই সঙ্গে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনারের অফিসও টানা ঘেরাও অবস্থানের হুঁশিয়ারি দিয়েছে এই বিজেপি নেতা।

জ্ঞানতাপসরা বলেছেন, ধার্মিকতা আর ধর্মান্ধতা এক জিনিস নয়। ধার্মিকতা মানুষকে আলোর পথে নিয়ে যায় আর ধর্মান্ধতা মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। অতএব বাস্তবতা হলো ইসকনরা ধার্মিক নয় তারা ধর্মান্ধ। ধর্মান্ধ ইসকন কি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন? শুভেন্দু অধিকারীরা পশ্চিমবঙ্গেই পাত্তা পায় না, অথচ সে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হুংকার দেয়। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুর্বলতা ও নতজানুতার কারণে শুভেন্দুর মতো ব্যক্তি বাংলাদেশকে হুমকি দিচ্ছে। ইনকন অনুসারীরা ভারত সীমান্তে অবরোধ করলে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বিজিবি আঙ্গুল চুসবে কিনা সেটাই প্রশ্ন। কারণ, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর বিডিআর নাম পরিবর্তন করে বিজিবি হওয়ার পর থেকে সীমান্তে সফলতা তেমন দেখাতে পারেনি। অথচ শেখ হাসিনার নির্দেশে জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার ওপর নির্বিচারে গুলি ছুঁড়েছে বিজিবি’র কিছু সদস্য। হিন্দুত্ববাদী ভারতে প্রতিদিন সেদেশের মুসলমান নাগরিকদের উপর নির্যাতন হচ্ছে। দু’দিন আগেও উত্তর প্রদেশে ৫ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে। এ জন্য কি পাকিস্তান বা বাংলাদেশ সীমান্ত অবরোধের হুংকার দিয়েছে? ৯২ ভাগ মুসলমানের বাংলাদেশে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধসহ সব ধর্মাবলম্বী সৌহার্দ্য সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করছে শত শত বছর ধরে। অথচ হাসিনা পালানোর পর ভারত নানাভাবে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে ও বাংলাদেশ বিরোধী অপকাণ্ড করেই যাচ্ছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইসকনের আন্দোলনে দেশি-বিদেশি ইন্ধন রয়েছে। দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করাই বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর লক্ষ্য।

হাসিনা পালানোর পর ভারত একের পর এক ষড়যন্ত্র কার্ড ছুঁড়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছে। সংখ্যালঘু নির্যাতন, জুডিশিয়াল ক্যু, আনসার দিয়ে সচিবালয় ঘেরাও, ১৫ আগস্ট ঢাকা অবরোধ, গার্মেন্টসে অস্থিরতা, পাহাড়ে অশান্তিসহ নানা অপকাণ্ড করেছে। প্রতিটি ষড়যন্ত্রই ব্যর্থ হয়েছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ‘ফেইক’ নিউজ দেশের এবং ভারতের কিছু গণমাধ্যম ফলাও করে প্রচার করলেও দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা মন্দির প্রহরা দিয়েছে এমন দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এমনকি হিন্দু-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত এমন ঘটনায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। ফলে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ কার্ড ব্যর্থ হয়েছে। এখন ইসকনের চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীরা পলাতক হাসিনার পক্ষে অবস্থান নিয়ে ‘বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ’ নাম দিয়ে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের ফেইক তথ্য প্রচার করছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীদের যে ভারত মাঠে নামিয়েছে তা শুভেন্দু অধিকারীর হুংকারে পরিষ্কার।

এখন ৫ আগস্ট ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ ধরে রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের বিকল্প নেই। সরকারকে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে এবং আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এনজিও চালানোর মতো উপদেষ্টাদের সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করে সময় পার করার চেষ্টা দেশের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা নতুনভাবে স্বাধীনতা পেলেও এখনও আমাদের দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত থেমে নেই। তবে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে ষড়যন্ত্রকারীরা কখনোই সফল হবে না।

এটা ঠিক ভারত বুঝে গেছে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে লাভ নেই। ৫ আগস্ট পালিয়ে দিল্লিতে আশ্রয় নেয়ার পর ভারত নানাভাবে বাংলাদেশে হাসিনাকে ফেরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে হাসিনার বদলে অনুগত কাউকে বসানোর চেষ্টায় ফন্দিফিকির করছে। মূলত শেখ হাসিনা ছিল ভারতের সৃষ্ট সিকিমের লেন্দুপ দর্জির কার্বনকপি। সাম্রাজ্যবাদী ভারত এক সময় স্বাধীন সার্বভৌম সিকিমে লেন্দুপ দর্জি সৃষ্টি করেছিল। ১৯৭৪ সালে প্রধানমন্ত্রী করা হয় লেন্দুপ দর্জিকে। লেন্দুপ দর্জি ১৯৭৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিকিমকে ভারতের ২২তম রাজ্যে পরিণত করেন। সেই সিকিমের মতোই ভারতের নীল নকশায় হাসিনা বাংলাদেশে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে পাতানো নির্বাচন করেন। বিশ্বাসঘাতক লেন্দুপ দর্জিকে দীর্ঘদিন ভারতেই আশ্রয়ে থেকে ২০০৭ নিঃসঙ্গ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সেই লেন্দুপ দর্জির মতো হাসিনা দীর্ঘদিন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে দিল্লির করদরাজ্য করে রেখেছিল। কিন্তু ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে গিয়ে সেই ভারতেই আশ্রয় নিয়েছে।

গণহত্যাকারী হাসিনাকে কেবল আশ্রয় দেয়াই নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র চলছেই। বাংলাদেশের অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য ইসকনকে যে ভারত মাঠে নামিয়েছে তার প্রমাণ শুভেন্দু অধিকারীর হুমকিই শুধু নয়; ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে দাবি করা হয় বাংলাদেশে ‘উগ্রপন্থীদের’ দ্বারা হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের পাশাপাশি মন্দির অপবিত্রতার ঘটনাও ঘটেছে। ভারতের এই বিবৃতি জানান দেয়, তারা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। শুভেন্দু অধিকারী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হুমকি দিয়ে ভারতের গণমাধ্যম ও বাংলাদেশের ‘দিল্লির সেবাদাস’ কিছু গণমাধ্যমের মাথা ব্যথা নেই। ভারত ও বাংলাদেশের ওই গণমাধ্যমগুলো ঢাকার বিপক্ষে গিয়ে দিল্লির পক্ষ নিয়ে ইসকন ও ভারতের এসব মনগড়া অভিযোগ ফলাও করে প্রচার করছে। হিটলারের সেই গোয়েবলস মন্ত্রীর মতো প্রচারণায় ‘মিথা+মিথ্যা+মিথ্যা= সত্য’ থিউরি কাজে লাগাচ্ছে। বিশেষ করে কয়েকটি টিভি চ্যানেল ইসকন নেতা গ্রেফতার এবং ইসকন অনুসারীদের অন্তর্বর্তী সরকার বিরোধী বক্তব্য যেভাবে প্রচার করছে তা সাংবাদিকতার থিউরিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। অথচ অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নীরব দর্শক!

রাজধানী ঢাকায় কয়েকদিন থেকে চরম নৈরাজ্য চালানো হচ্ছে। দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে মানুষকে। ২৫ নভেম্বর ব্যাটারিচালিত রিকশা চালক পরিচয়ে শ্রমিক লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পুরান ঢাকার সোহরাওয়ার্দী, কবি নজরুল কলেজ ও যাত্রাবাড়ির ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছিল। অথচ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা, ডিবি, এসবি, এনএসআই, ডিজিএফআইসহ গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কি অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে যথাযথভাবে কাজ করছে না? সেনাবাহিনীকে দুই মাসের জন্য ম্যাজিষ্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। পরে এ সময় আরো দুই মাস বাড়ানো হয়। কিন্তু রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন বিশৃংখলা লেগেই আছে। রাজধানী ঢাকায় আগাম ‘ঘোষণা’ দিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। অহিংস অভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামের সংগঠন মাসের পর মাস সারাদেশে বিনা সুদে লাখ টাকা ঋণ দেয়ার নাম করে প্রচারণা চালিয়ে বাস ভর্তি করে লোকজন শাহবাগে এনেছে অথচ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কিছুই জানতে পারেনি?

আন্তর্জাতিক পরিচিতি দিয়ে ড. মুহম্মদ ইউনূস প্রভাবশালী দেশ, উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশের পাশে এনেছেন। কিন্তু হিন্দুত্ববাদী ভারত এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের আরো তৎপর হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তারা যেন ‘হেসেখেলে’ চলছেন। বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিস্তেজতা নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের ক্ষমতাসীন দলের নেতা সীমান্ত অবরোধ, কোলকাতার বাংলাদেশের অফিস ঘেরাওয়ের হুমকি দিলেও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো বক্তব্য দেয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কি দিল্লির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন, নাকি ভয় পাচ্ছেন?

জানতে চাইলে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, ভারত অনেকদিন থেকেই বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য নানা চক্রকে ইন্ধন দিচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল ৫ আগস্টের বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কিন্তু সেটা দেখা যাচ্ছে না।

বিএনপি নেতা তারেক রহমান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক নেতাসহ দেশের বিশিষ্টজনেরা বহুবার বলেছেন, ‘ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই। এ সরকার ব্যর্থ হলে এবং ৫ আগষ্টের অর্জন ব্যর্থ হবে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ে যাবে’। ফলে এই সরকারকে সফল করতে হলে ভারতের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করতে হবে। এ জন্য সকল রাজনৈতিক দলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। ভারতকে খুশি করতে জামায়াতের আমীর বারবার ‘ফ্যাসিস্ট’ বলতে চাই না এবং ‘জামায়াত ভারত বিরোধী দল নয়’ বক্তব্য দিয়েছেন। এছাড়াও ইসলামী ধারার দলটি ভারতকে খুশি করতে ‘হিন্দু শাখা’ খুলেছে। দিল্লিকে খুশি করতে এ ধরনের দৃশ্যমান কিছু না করলেও বিএনপি ‘দিল্লি অখুশি হতে পারে’ সে ব্যাপারে সতর্ক থাকছে। ভাবখানা দিল্লির সমর্থন ছাড়া যেন তারা ক্ষমতায় যেতে পারবেন না। বাস্তবতা হচ্ছে ভারতের আগ্রাসন থেকে দেশকে রক্ষা করতে চাইলে দেশের ডান-বাম-মধ্যপন্থী সব দল, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবীকে চীনপন্থী, ভারতপন্থী, পাকিস্তানপন্থী, আমেরিকাপন্থী চেতনা পরিহার করে সকলকে বাংলাদেশপন্থী হতে হবে। তা না হলে ষড়যন্ত্র চলতেই থাকবে। গতকালও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ৫ আগষ্টের পর থেকেই একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে আমাদের দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করার জন্য ক্রমাগত চক্রান্ত করে যাচ্ছে। নিজেরা কোন্দলে জড়িয়ে কুচক্রী এই মহলের হীন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের পথ তৈরি করে দিয়েন না।

গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে আদালতে হামলা ও বিচার সংশ্লিষ্ট হত্যা আইনগতভাবে সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা হিসাবে গণ্য। ২০০৫ সালে জেএমবির জঙ্গীরা বিচারক ও পিপি হত্যা করেছিল এবং সেই ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদ হিসাব বিচার করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলামকে হত্যাও সন্দেহাতীতভাবে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম। এটিকে ধর্মীয় সহিংসতা গণ্য করার সুযোগ নাই। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদেরকে জঙ্গী হিসাবেই দমন করতে হবে। এক্ষেত্রে খুনীদের হিন্দু ধর্মীয় পরিচয় ও সংখ্যালঘুত্বর বিষয়ে কোনো দ্বিধা করা যাবে না। বরং এখনই খুনীদের গ্রেপ্তারে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে অভিযান শুরু করতে হবে। এদেশে যেকোনো ধর্মীয় পরিচয়ে সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা চালানোর সুযোগ নাই।

সৈয়দ শামসুল হক কবিতায় আরো লিখেছেন ‘অভাগা মানুষ যেন জেগে ওঠে আবার এ আশায়; যে, আবার নূরলদীন একদিন আসিবে বাংলায়’। দেশবাসীর প্রত্যাশা ভারতের আধিপত্যবাদী ষড়যন্ত্র ঠেকাতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলে আবার নূরলদীনরা ফিরে আসবে।

 

  • স্টালিন সরকার , দৈনিক ইনকিলাব