পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপত্তাবাহিনীর ব্যাপক বাধার মুখেও কিছু পিটিআই কর্মী এরই মধ্যে ডি-চকে পৌঁছে গেছে। সরকার ও বিরোধী দলটির মধ্যে আলোচনায়ও অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর হামলার অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। মূলত রোববার দলটির নেতাকর্মীরা রাজধানী ইসলামাবাদের দিকে যাত্রা শুরু করে। তবে সরকারি বাধায় তা থমকে যায়। পরে ইসলামাবাদের দিকে ফের যাত্রা শুরু করে তারা।
পিটিআইয়ের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যা শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ সফল করতে মরিয়া ইমরান খানের দল। অন্যদিকে তাদের থামিয়ে দিতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসলামাবাদের আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে।
ইসলামাবাদের ডি-চকে জড়ো হওয়া ইমরান খানের কর্মী সমর্থক
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বহু বাধা উপেক্ষা করে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থকরা দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদের প্রাণকেন্দ্র ডি-চকে জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স তাদের লক্ষ্য করে তাজা গুলি ছুড়ে। এতে মুহূর্তে সমাবেশস্থল ইসলামাবাদের ডি-চক জনশূন্য হয়ে যায়। কিন্তু গুলি ও টিয়ার গ্যাসের মধ্যেই আবারও জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন তারা। প্রতিবারই পুলিশ ও রেঞ্জার্স-এর বাধার মুখে বিক্ষোভকারীরা একপর্যায়ে ডি-চকের আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন।
পাকিস্তানের রাজাধানী ইসলামাবাদের সব মার্কেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে এ নির্দেশ জারি করা হয়।
জিও নিউজ বলছে, শ্রীনগর হাইওয়েতে মর্মান্তিক এক ঘটনার পরে সেনা মোতায়েন ও ‘দুবৃত্তদের’ গুলি করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। সেখানে পিটিআই কর্মীরা রেঞ্জার্স সদস্যদের ওপর একটি গাড়ি উঠিয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে। যার ফলে দুই পুলিশ অফিসারসহ চারজন রেঞ্জার্স সদস্য নিহত হয়েছেন এবং অন্য আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন। নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মতে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর হামলায় এ পর্যন্ত চারজন রেঞ্জার এবং দুইজন পুলিশ কর্মকর্তার প্রাণ গেছে। এছাড়া শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। মূলত ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে পার্লামেন্টের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে পিটিআই। বিক্ষোভকারীদের আটকে দেওয়ার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ দু’দিন ধরে ইসলামাবাদে নিরাপত্তা লকডাউন ঘোষণা করেছে। ইসলামাবাদের আশপাশের সব মহাসড়কে ব্যারিকেড তৈরি করে বিক্ষোভকারীদের বাধা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইসলামাবাদের প্রধান প্রধান সব সড়ক ও মহাসড়কে শিপিং কনটেইনার ব্যবহার করে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। পিটিআইয়ের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে ইসলামাবাদে দাঙ্গা পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) বিক্ষোভকারীদের বাধা দেয়ার জন্য পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাব প্রদেশের একাধিক শহর ও টার্মিনালের মাঝে চলাচলকারী সব ধরনের গণপরিবহনও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা অন্যান্য ইস্যুগুলোর মধ্যে কারাবন্দি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মুক্তি চায়। প্রসঙ্গত, ইসলামাবাদে পার্লামেন্ট অভিমুখে পিটিআইয়ের এবারের পদযাত্রাকে ‘চূড়ান্ত আহ্বান’ বলে অভিহিত করেছেন ইমরান খান। গত বছরের আগস্টে পিটিআইয়ের এই প্রতিষ্ঠাতাকে কারাগারে পাঠানোর পর থেকে তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে দলটি।
পিটিআই সমর্থকদের উপরে টিয়ারশেল-রাবার বুলেট নিক্ষেপ : পাকিস্তানের কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর ওপর টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। গতকাল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থকরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দেশটির রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করার চেষ্টার সময় এ ঘটনা ঘটে।
ইসলামাবাদের পশ্চিমাঞ্চলে লাঠিসোঁটা ও গুলতি নিয়ে সশস্ত্র বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। দেশটির সরকার জানায়, গত দুই দিনের সংঘর্ষে একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত এবং ৯ জন গুরুতর আহত হয়েছে। ইমরান খানকে গত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে দাঁড়াতে বাধা দেয়া হয়। এ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ রয়েছে। ইমরান খান অভিযোগ করেন, নির্বাচনে তাকে প্রতিহত করতে বিভিন্ন মামলা দেওয়া হয়েছে। তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সরকারের দমন-পীড়নের মধ্যেই ইসলামাবাদ এবং অন্যান্য বড় শহরগুলোতে জনসমাগম করার লক্ষ্যে নিয়মিত বিক্ষোভ করছে।
গত শনিবারের পর থেকে রাজধানীতে ব্যাপক বিক্ষোভ করা হচ্ছে। শহরে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা কয়েকবার বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং ঢাল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সজ্জিত ২০ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য সড়কে নামানো হয়েছে। গত সপ্তাহে ইসলামাবাদ নগর প্রশাসন জনসমাবেশের ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে। কিন্তু পিটিআইয়ের বিক্ষুব্ধ কর্মীদের বহর তাদের শক্ত ঘাঁটি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া ও পাঞ্জাব প্রদেশে থেকে রাজধানীর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।