আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) এর সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেছেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তার কাজ ও বক্তব্য একান্তই তার নিজের। এর দায় নেবে না ইসকন। তিনি এখন ইসকনের সঙ্গে সংপৃক্ত নয়।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর স্বামীবাগ আশ্রমে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের দায় নিতে অস্বীকার ইসকনের
চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ঘিরে ভারতের মন্তব্যে বা অবস্থানের সঙ্গেও ইসকনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কোনো দেশের কোনো ব্যক্তি চিন্ময়কে নিয়ে কি উদ্যোগ নিলো বা কি বললো তার জন্য ইসকন দায়ী নয়।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম আইনজীবী হত্যায় ইসকনকে অন্যায়ভাবে জড়িয়ে মিথ্যাচার চলছে। একই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনায়ও ইসকন দায়ী নয়। শিশুর সঙ্গে খারাপ কাজসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে অনেক আগেই চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২৫ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পর বিবৃতি দেয় ইসকন। যেখানে ভারতকে আলোচনা করতে বলা বাংলাদেশের সঙ্গে। পরদিন তাকে চট্টগ্রামের আদালতে তুললে সেখানে হট্টগোল করে ইসকনের সমর্থকরা। ভাঙচুর চালানো হয় মসজিদে। এ সময় একজন আইনজীবীকে তুলে নিয়ে কুপিয়েও হত্যা করে ইসকন সদস্যরা। যদি এসব বিষয় এখন অস্বীকার করছেন তারা।
বাংলাদেশের ইসকন বহিষ্কারের দাবি করলেও তাকে আটকের পর বৈশ্বিক ইসকনের পক্ষ থেকে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিও দেয়া হয়েছে।
বিবিসি বাংলা বিভিন্ন ইসকন মন্দিরের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছে ‘বহিস্কৃত’ হলেও মি. দাস এখনো ইসকন পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন।
তবে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় যে আন্দোলনটি করছেন সেটি করা হচ্ছে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের ব্যানারে।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিমলা কুমার ঘোষ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ইসকন থেকে বহিষ্কৃত। সে রাষ্ট্রবিরোধী কোন কাজ করলে আমরা তার দায় নিবো না”।
আটকের পর ইসকন পরিচালিত পুণ্ডরীক ধামের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে মি. দাসের পূর্বে ধারণকৃত একটি বক্তব্যও প্রচার করা হয়েছে।
বিশেষত গত অক্টোবরে চট্টগ্রামে একটি মিছিলের সময় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
এর আগে গত তেসরা জুলাই ইসকন পরিপন্থী বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত থাকায় তাকে ইসকন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি সত্য রঞ্জন বাড়ৈ তাকে সতর্ক করে চিঠি দেয়। সেখানে তার বিরুদ্ধ পাঁচটি অভিযোগও আনা হয়।
পরে গত ৯ই নভেম্বর ইসকন বাংলাদেশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস জানান সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইসকনের যাবতীয় কার্যক্রম থেকে চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ইসকন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা বিমলা কুমার ঘোষ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে সতর্কীকরণের পরও যখন কথা শোনেনি তখন তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তিনি দলের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করে”।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে, বহিষ্কারের কারণে মি. দাস ইসকনের হয়ে জনসম্মুখে বক্তব্য বিবৃতি বা ধর্মীয় কোন কাজ করতে পারবে না।
ইসকনের পক্ষ থেকে মি. দাসকে বহিষ্কার করা হলেও তিনি চট্টগ্রামের ইসকন পরিচালিত পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষের দায়িত্বে কিভাবে থাকেন সেই প্রশ্ন করা হয়েছিল ইসকনের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে।
জবাবে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা বিমলা কুমার ঘোষ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “তাকে আমরা পদ পদবী থেকে বহিষ্কার করে দিতে পারি।কিন্তু তার গুরু শিক্ষা থেকে তো সরানোর ক্ষমতা আমাদের নেই”।
শিশু যৌন নিপীড়নে ইসকনের নিষেধাজ্ঞায় পড়েন চিন্ময়
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, যিনি ইসকনের চট্টগ্রামের হাটহাজারী পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ, শিশু সুরক্ষা সম্পর্কিত অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইসকনের আন্তর্জাতিক শিশু সুরক্ষা কার্যালয় (ইসকন ইন্টারন্যাশনাল চাইল্ড প্রোটেকশন অফিস-সিপিটি) তাকে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। গত বছরের ৬ অক্টোবর, যুক্তরাজ্যস্থ ইসকনের সিপিটি থেকে একটি চিঠি জারি করা হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা এখনও কার্যকর রয়েছে।
ইসকনের চিঠিতে জানানো হয়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর, তার ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে, তিনি ইসকনের কোনো ব্যবস্থাপনা বা নেতৃত্বের পদে থাকতে পারবেন না, কোনো কীর্তন বা ক্লাস নিতে পারবেন না, এবং শ্রীল প্রভুপদের পূজা আর্চনায় অংশ নিতে পারবেন না। এছাড়া, ১৮ বছর বয়সের নিচে কোনো ব্যক্তির সঙ্গে তার যোগাযোগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং বাংলাদেশে ইসকনের কোনো সম্পত্তিতে রাতযাপনও তার জন্য নিষিদ্ধ। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ১০ দিনের মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে হবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে হবে।