রাজধানীর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের দৃশ্যকে হিন্দু বিরোধী সংঘর্ষ দাবি করে অপপ্রচার চলানো হয়েছে। বুধবার রিউমর স্ক্যানারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্তত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) থেকে ভারতীয় একাধিক এক্স অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশে হিন্দু বিরোধী সহিংসতার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রাজনীতিবিদ ও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলের বর্তমান নেতা এবং নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীও একই ভিডিও পোস্ট করে হিন্দুদের ওপর হামলার দাবি বলে প্রচার করছেন।
উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উপরোল্লিখিত ভিডিওগুলো সম্মিলিতভাবে প্রায় ৪ লক্ষ বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় ২০ হাজারটি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওগুলোতে লাইক দেওয়া হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশে হিন্দু বিরোধী সহিংসতার দৃশ্যের নয়। এটি গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের দৃশ্য। যার সঙ্গে ধর্মীয় কোনো প্রাসঙ্গিকতা বা সম্পৃক্ততা নেই।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে বিডিনিউজ২৪ ডটকমের ফেসবুক পেজে গত ২৫ নভেম্বরে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যার সঙ্গে আলোচিত দাবির ভিডিও হুবহু সাদৃশ্য রয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে ভিডিওটি সম্পর্কে বলা হয়, ‘‘মেগা মানডে’: সংঘাতে রণক্ষেত্র মোল্লা কলেজ, আহত শতাধিক। ঢাকার মাতুয়াইলের মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছে’।
একই শিরোনামে বাংলাদেশের শীর্ষ সকল সংবাদ মাধ্যমের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সোমবার (২৫ নভেম্বর) বেলা ১২টা থেকে মোল্লা কলেজের সামনে প্রায় দুই ঘণ্টার এ সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। একই প্রতিবেদন থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত ও মূল ঘটনার সম্পর্কেও জানা যায়।
এ বিষয়ে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেলে মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদারের মৃত্যুর ঘটনায় গত রোববার (২৪ নভেম্বর) ঘেরাও কর্মসূচি দেয় মোল্লা কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। ‘সুপার সানডে’ নামের ওই কর্মসূচি থেকে ন্যাশনাল মেডিকেল ও পাশের সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। হামলার সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে স্নাতকের পরীক্ষা দেওয়া কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরাও আক্রান্ত হন। স্থগিত হয় তাদের পরীক্ষা। এর প্রতিবাদে ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচি দিয়ে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা ডেমরা সড়ক–সংলগ্ন মোল্লা কলেজে গিয়ে সোমবার (২৫ নভেম্বর) হামলা ও লুটপাট করেন। এ সময় সেখানে দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রচুর শিক্ষার্থী আহত হন।
মূলধারার সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। তবে কোথাও ঘটনাটিকে হিন্দু বিরোধী সহিংসতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি এবং ধর্মীয় কোনো প্রাসঙ্গিকতাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ঢাকার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের দৃশ্যকে বাংলাদেশে হিন্দু বিরোধী সহিংসতার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
গত ২৬ নভেম্বর ঢাকার সকল প্রিন্ট মিডিয়াতে ছাপা খবরে প্রকাশিত
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির ভুয়া এবং ভিত্তিহীন ভিডিও পোস্ট
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রাজনীতিবিদ ও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলের বর্তমান নেতা এবং নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীও একই ভিডিও পোস্ট করে হিন্দুদের ওপর হামলার দাবি বলে প্রচার করছেন। যা সম্পূর্ণ ভুয়া এবং ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের সকল মিডিয়ায় ফলাও করে খবরটি ছিল ছাত্রদের মধ্যে মারামারি ভাঙচুর। গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের দৃশ্য। যার সঙ্গে ধর্মীয় কোনো প্রাসঙ্গিকতা বা সম্পৃক্ততা নেই। যা গত ২৬ নভেম্বর ঢাকার সকল প্রিন্ট মিডিয়াতে ছাপা খবরে প্রকাশিত হয়।