ইসকন নিষিদ্ধ ও এডভোকেট সাইফুল হত্যার বিচারের দাবিতে সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।ইসকন ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভ চলছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব নিয়ে বিতর্ক চলছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী নেটিজেনদের অনেকেই ইসকনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছে। কয়েকজন লিখেছেন, ইসকন সমগ্র হিন্দুদের সংগঠন নয়। সংগঠনের নেতারা যদি রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ড করে তাদের আইনের আওতায় বিচার করা হোক।
আইনজীবী সুরক্ষা অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবি
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যার ঘটনায় ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ আইনজীবী অধিকার পরিষদ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট বার প্রধান ফটকে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে অবিলম্বে আইনজীবী সুরক্ষা অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারির দাবি করা হয়। বাংলাদেশ আইনজীবী অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট নুরে এরশাদ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক মো. খালিদ হোসেনের সঞ্চালনে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার মহিউদ্দিন ইউসুফ, অ্যাডভোকেট শেখ শওকত হোসেন, হাবিবুর রহমান, সাজেদুল ইসলাম রুবেল, মমিনুল ইসলাম, মেহেদী হাসান প্রমুখ।
মানববন্ধনে অ্যাডভোকেট নুরে এরশাদ সিদ্দিকী বলেন, নতুন বাংলাদেশে আইনজীবীরা নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে পারে না। সরকারি আইন কর্মকর্তাগণ হত্যার শিকার হলে ন্যায়বিচার বিঘিœত হবে। আইন আদালতের প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থা কমে যাবে। তাই অবিলম্বে আইনজীবী সুরক্ষা অধ্যাদেশ জারি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ইসকন একটি আন্তর্জাতিক উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন। বিশ্বের নানা দেশে উগ্রবাদী ও উসকানিমূলক কর্মকা-ের কারণে ইসকনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও সম্প্রতি চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
মানববন্ধন শেষে আইনজীবী অধিকার পরিষদ সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে।
চিন্ময় দাশকে ডিভিশন দেয়া নিয়ে আইনজীবীদের প্রশ্ন
কোন ধারায় চিন্ময়কে ডিভিশন দেয়া হয়েছে জানতে চেয়ে আইনজীবী নেতা নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি চিন্ময় দাশকে ডিভিশন দেয়া হয়েছে। জেল কোডের নিয়ম এবং আইনের কোন ধারা অনুযায়ী আপনি রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামিকে ডিভিশন দিয়েছেন? জেল সুপার এবং সিনিয়র জেল সুপারকে অনুরোধ করবো আপনি ডিভিশন প্রত্যাহার করবেন। তাকে সাধারণ কয়েদির সঙ্গে রাখবেন। সে এমন কোনো ইম্পর্টেন্ট ব্যক্তি নয়। বিগত সরকার আমাদের অনেক রাজনৈতিক নেতাকে ডিভিশন না দিয়ে অসম্মান করেছে।’
‘বহিষ্কৃত চিন্ময়ের দায় নেবে না ইসকন’
চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে অনেক আগেই ইসকন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি ইসকন বাংলাদেশের কেউ নন। তাই তার কোনো বক্তব্য বা কার্যক্রমের দায় ইসকন নেবে না। গতকাল রাজধানীর স্বামীবাগে ইসকন বাংলাদেশের আশ্রমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনটা জানিয়েছেন ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাশ ব্রহ্মচারী।
লিখিত বক্তব্যে চারু চন্দ্র দাশ বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইসকন বাংলাদেশকে নিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার ছড়ানোর এক ধারাবাহিক প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষত চট্টগ্রামের বিশিষ্ট আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর এ অপচেষ্টা চরমে পৌঁছেছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা এবং চলমান আন্দোলনের সঙ্গে ইসকন বাংলাদেশের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। এই মিথ্যাচার এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সড়ক দুর্ঘটনার মতো বিষয়গুলোকেও ইসকনের চক্রান্ত বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। চারু চন্দ্র দাশ বলেন, গত ৩রা অক্টোবর আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমে ইসকন’র পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ইসকন বাংলাদেশের মুখপাত্র নন। তাই তার বক্তব্য সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত। ইসকন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলমান মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে সুনাম ক্ষুণ্নের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, ধর্মীয় সহনশীলতা বজায় রাখা ও দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যেকোনো প্রকার উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা এবং সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান চারু চন্দ্র দাশ।
ইসকন বাংলাদেশের কার্যনির্বাহী কমিটি ও শিশু সুরক্ষা দলের সদস্য হৃষীকেশ গৌরাঙ্গ দাশ বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের বিরুদ্ধে কয়েকটি শিশু অভিযোগ করেছিল যে তাদের সঙ্গে অসদাচরণ ও খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে। এটা জানার পরে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চিন্ময়কে চিঠি দেয়া হয়। তখন তদন্তের স্বার্থে তিন মাসের জন্য তাকে সংগঠন ও পুণ্ডরীক ধামের পদ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। তবে তিনি তা মানেননি। সংগঠনের নির্দেশনাও শোনেননি। এ কারণে তাকে ইসকন বাংলাদেশ থেকে স্থায়ীভাবে গত জুলাইয়ে বহিষ্কার করা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা ও রাজ্যের বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ইসকন একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন, ভারত থেকে পরিচালিত নয়। কোনো ব্যক্তি কী বললেন, সেটা তাদের বিষয়। আগামী রোববার ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের সঙ্গে ইসকন বাংলাদেশের একটি বৈঠক রয়েছে। তাতে সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ইসকন বাংলাদেশের সভাপতি সত্যরঞ্জন বাড়ৈ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। বলেন, ইসকন বাংলাদেশ একটি অরাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সংগঠন, যা সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মীয় সহনশীলতা এবং মানবকল্যাণে নিবেদিত। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইসকন বাংলাদেশের কোষাধ্যক্ষ জ্যোতিশ্বর গৌর দাশ ব্রহ্মচারী, কার্যনির্বাহী সদস্য বিমলা প্রসাদ দাশ ও চিন্ময় গদাধর দাশ ব্রহ্মচারী প্রমুখ।
চট্টগ্রামে আইনজীবীদের কর্মবিরতি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের ওপর হামলা, সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৫ জনকে। আলিফকে খুনের প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করছেন আইনজীবীরা। ‘ইসকন নেতা’ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে ঘিরে আদালত প্রাঙ্গণের ঘটনা ও আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী নেতারা। আগামী ৩ ডিসেম্বর চিন্ময় কৃষ্ণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে হওয়া মামলার শুনানি না করার দাবি জানান তারা।
আলিফ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনজীবী নেতা নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পুরো ঘটনার পেছনে পুলিশের ইন্ধনও দেখছেন তিনি। চিন্ময়কে প্রিজনভ্যানে তোলার পর পুলিশের নিস্ক্রিয়তা, প্রিজনভ্যানে চিন্ময় দাসের হাতে হ্যান্ডমাইক কিভাবে গেল- তিনি তারও জবাব চেয়েছেন। আইনজীবী আলিফকে হত্যার সময়ে ‘জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে পর্যাপ্ত পুলিশ, আর্মি, বিজিবি ছিল’ উল্লেখ করে তাদের কেন ডাকা হয়নি তা নিয়েও প্রশ্ন রেখেছেন। এমনকি এসবের জন্য পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেছেন, নইলে টেনে হিঁচড়ে নামানোরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার বিচার চেয়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এসব প্রশ্ন রাখেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির শীর্ষ এ নেতা। আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ‘ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে এতে জেলা আইনজীবী সমিতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, নিপীড়ন বিরোধী আইনজীবী সমাজসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরাও যোগ দেন।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজের দাবি ঘটনার দিন পুলিশ পেশাদারিত্বের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। বলেন, ‘পুলিশ শুরু থেকেই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে ছিল। এছাড়া বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতেও প্রস্তুত ছিল। গত পরশু সৃষ্টি হওয়া বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি পুলিশ সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে মোকাবিলা করেছে।’ তার দাবি ঘটনার দিন পুলিশ পেশাদারিত্বের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে।
এদিকে আইনজীবী আলিফকে হত্যার ঘটনায় ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মিডিয়াকে কাজী মো. তারেক আজিজ সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় ইসকনের তান্ডব, প্রিজনভ্যান থেকেই মাইকে বক্তব্য
গতকাল আলিফ হত্যার প্রতিবাদে জেলা আইনজীবী সমিতির বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আইনজীবী নেতারাও ওই দিন পুলিশের ভ‚মিকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী হ্যান্ডমাইক দিয়ে বক্তব্য দেওয়ার ঘটনায় নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজের কাছে জবাব চেয়েছেন আইনজীবীরা। সমাবেশে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন বলেন, আমরা পুলিশকে নিষ্ক্রিয় দেখেছি। পুলিশ প্রিজনভ্যান ছেড়ে দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে ছিল। আমরা এটার পেছনে পুলিশের ইন্ধন আছে বলে মনে করি। আমরা বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আসলাম চৌধুরী, মীর নাছির উদ্দিন ও জামায়াতের শাহজাহান চৌধুরীকে আদালতে আনতে দেখেছি। তাদের সমর্থকদের পুলিশ প্রিজনভ্যানের পাশেও দাঁড়াতে দেয়নি। কোন উদ্দেশ্যে তাহলে সেদিন পুলিশ প্রিজনভ্যান ফেলে চলে গেছে?
তিনি বলেন, এ চিম্ময় দাস হ্যান্ডমাইক দিয়ে ওই প্রিজনভ্যান থেকে বক্তব্য দিয়েছে। বক্তব্যে সে বলেছে, আন্দোলন করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। পুলিশ কমিশনার সাহেব আমি আপনার কাছে জবাব চাই, আপনি যদি ব্যবস্থা না করেন তাহলে চিন্ময় দাসের কাছে হ্যান্ডমাইক কীভাবে গেল। তিনি আরো বলেন, আমাদের এ চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে ও তার আশেপাশে এরকম ঘটনা অতীতে কোনোদিন ঘটেনি। মঙ্গলবার ইসকনের একজন সন্ত্রাসী নেতাকে গ্রেফতার করে আনার পর আদালত তাকে যখন কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন তখন আমরা তার অনুসারীদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম দেখলাম। তাকে প্রিজনভ্যানে তোলার পর ইসকনের সমস্ত সন্ত্রাসীরা গাড়িকে আটকে রেখে প্রায় চার ঘণ্টার মতো উলল্লাস করেছে।
পুলিশ নীরব ভ‚মিকা পালন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের ভাই সাইফুল ইসলাম আলিফ তার পেশাগত কাজ শেষ করে বাড়ি যাচ্ছিলেন। কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে থেকে তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে ওই রঙ্গম সিনেমার গলিতে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করেছে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি। বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে বাংলাদেশে একটি ষড়যন্ত্র চলছে। সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যক্তি আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। পুলিশ নীরব ভ‚মিকা পালন করছে। আমরা মনে করি পুলিশের মধ্যে সরষে ভুত আছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রেতাত্মারা এখনো অবস্থান করছে। তারা এ সরকারকে ব্যর্থ করতে চায়। আমরা সেটা হতে দেবো না।
তিনি আরো বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, চিন্ময় দাসকে নাকি জেলখানায় ডিভিশন দেয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আসামিকে কীভাবে ডিভিশন দেয়? সিনিয়র জেল সুপারকে আমি অনুরোধ করব, আপনি সেই ডিভিশন প্রত্যাহার করবেন। তাকে সাধারণ কয়েদির সঙ্গে রাখবেন। সে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নয়। আমরা অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে আবেদন জানাই, ইসকনকে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধ করা হোক। বিশ্বের অনেক দেশে ইসকন নিষিদ্ধ। বাংলাদেশেও ইসকন নিষিদ্ধ হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবাল বলেন, আমরা আমাদের ভাইকে হারিয়েছি। চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ের ১৮৬ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনা এটা। আমার ভাইয়ের রক্তে আজ আমাদের ক্যাম্পাস লাল হয়ে গেছে। আমরা মানুষকে ইনসাফ দিই, অথচ আমরা আজ বে-ইনসাফের শিকার হয়েছি। আমরা তার দুই বছরের শিশুপুত্রকে কী জবাব দেব? আমরা তার অনাগত সন্তানকে কী জবাব দেব?’ আলিফ হাত্যার প্রতিবাদে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো আদালত বর্জন করেন আইনজীবীরা।
বাদ-জুমা বিক্ষোভ সমাবেশ আজ
দেশ ও রাষ্ট্রবিরোধী ইসকনকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে : বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ
গতকাল অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী বলেছেন, সন্ত্রাসী হিন্দু সংগঠন ইসকন দেশে উগ্র সা¤প্রদায়িকতা সৃষ্টি করছে। স¤প্রতি ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতার অভিযোগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতারের প্রেক্ষিতে তার ভক্তরা তাকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা চালায়। আইনজীবীরা তাদের বাঁধা প্রদান করলে অ্যাড. সাইফুল ইসলাম আলিফকে তারা নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। ইসকন দেশ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাÐে জড়িত। বাংলাদেশে ইসকনকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং শহীদ সাইফুল ইসলাম হত্যাকাÐসহ ইসকন সংঘটিত সব অপরাধের সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুরুল হোসেন হলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা জালাল আহমদ, মাওলানা আবু সাঈদ নোমান, মাওলানা ফয়সাল আহমদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস কাসেমী, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, মাওলানা মুহীউদ্দীন মাসুম, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাড. জাহাঙ্গীর হোসেন ও মুনতাসীর আলী, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজি আবুল খায়ের, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল মাজেদ আতহারী, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা ফারুক আহমদ, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা মুস্তফা তারেকুল হাসান।