• ২১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহের বিষয়ে সরকারের অবস্থান খোলাসা করতে দরকার দ্রুত কূটনৈতিক ব্রিফিং

usbnews
প্রকাশিত নভেম্বর ২৯, ২০২৪
সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহের বিষয়ে  সরকারের অবস্থান খোলাসা করতে দরকার দ্রুত কূটনৈতিক ব্রিফিং
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় যেসব মিথ্যাচার হচ্ছে সরকারের সবাই বলছেন। টকশো , সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা। ফেক্টচ্যাক করার পর ধরা পড়ছে ভুয়া খবরের প্রচারের বৃত্তান্ত। ভারতের বেশিরভাগ মিডিয়া বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার অব্যাহত রেখেছে। ভারতের নেতারা প্রায়ই বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বক্তব্য দেন। এসব দু’দেশের সম্পর্কোন্নয়নের চরম অন্তরায়।

ধর্মীয় সংখ্যালঘু ইস্যুতে ( যদিও আমরা সকল নাগরিকদের সমান মর্যাদায় দেখি , সংখ্যালঘু বাক্যের বিরুদ্ধে আমরা ) কূটনীতিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা জরুরি । আশা করি সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখবেন। সেই সঙ্গে ইসকনসহ সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহের বিষয়েও সরকারের অবস্থান খোলাসা করা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে খুব প্রয়োজন । ইসকন এর বহিস্কৃত বিতর্কিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানানো জরুরি । যাতে কেবল রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স বা মিশন প্রধানই নন, যেকোনো ডিপ্লোমেট ব্রিফিংয়ে অংশ নিতে পারেন। তবে ডিপ্লোমেটিক মিশন নয় এমন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সংগঠনের প্রতিনিধিদের কূটনৈতিক ব্রিফিং এর বাহিরে রাখতে হবে।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু এবং পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া যেভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে, সেটি দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক সুন্দর ও মসৃন নয়। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর একটি কাজ হওয়া উচিত, ভারতীয় মিডিয়ার মিথ্যাচার তুলে আনা এবং তাদের এই বিষয়গুলো সত্যতার সাথে উপস্থাপন করা।

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ৪র্থ মিডিয়া অলিম্পিয়াডে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনের পতনের মাধ্যমে ভারতের পররাষ্ট্র নীতির মারাত্মক বিপর্যয় ঘটেছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার এই পরাজয় ভারত যে সহজে মেনে নেবে না তার প্রমাণ প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছে দেশবাসী’।

মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদের অনুসারীরা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে, তাই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

দেশের মূল ধারার মিডিয়ার কঠোর সমালোচনা করে আমার দেশ সম্পাদক বলেন, পশ্চিমা মিডিয়ার ইসলামোফোবিয়া কঠোরভাবে অনুসরণ করছে দেশের গণমাধ্যম। ইসকন ইস্যুতে দেশের মূলধারার মিডিয়া ছাড়াও বিবিসি ও রয়টার্সের মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম একপেশে এবং বিভ্রান্তিকর ‌শিরোনামে সংবাদ পরিবেশন করছে। পাশাপাশি ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করলেও দেশের মিডিয়া হাউসগুলো তার প্রতিবাদ করেনি। কারণ স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে ভারতীয় আধিপত্যবাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। যে কারণে যথেষ্ট যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমার দেশের মতো স্বতন্ত্র মিডিয়া হাউসগুলোকে টিকে থাকতে দেওয়া হয়নি।

 জুলাই বিপ্লবে নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসন আশু প্রয়োজন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি দোষী না নির্দোষ, তার বিচার হবে প্রচলিত আইনে। এ নিয়ে হাসিনার কুমিরের মায়া কান্না কেন?

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মহানায়ক জিয়াউর রহমান গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে তিনি এই প্রশ্ন রাখেন।

চিন্ময় কৃষ্ণকে নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আজকে তারা চিন্ময়কে মুক্তি দেয়ার কথা বলে, যখন শেখ হাসিনার পোষ্য সন্তান ছাত্রলীগ-যুবলীগ বিশ্বজিৎকে শিবির সন্দেহে নৃশংসভাবে হত্যা করল, কই সেদিন তো ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোন উদ্বেগ ও বিবৃতি দেখলাম না। ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তর তখন নিশ্চুপ থাকলো কেন? যখন ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের নদীর বাধের পানি ছেড়ে দেয়ার কারণে সৃষ্টি বন্যায় হিন্দু-মুসলিমের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হলো, তখন তো ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের কোন মায়া-দয়া দেখলাম না। রিজভী বলেন, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখা যাবে না।

কয়েকটি টকশোতে হিন্দু ধর্মের অনুসারী কয়েকজন হিন্দু ধর্মীয় নেতারা স্পষ্ট করে বলছেন – ভারতে কীভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে, তা নিয়ে স্পষ্টভাবে প্রশ্ন তোলা যায়। ভারতে প্রতিনিয়ত মুসলমানরা নিপীড়ন-নির্যাতন, এমনকি খুনের শিকার হচ্ছে। শুধু মুসলমানই নয়, দেশটির খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও আক্রমণের লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে। আসামে খ্রিস্টিয়ান ফোরাম বলেছে, আসামে কয়েক বছর ধরে সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছে। একেবারে খোলাখুলিভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ভিন্নমতকে জায়গা দেয়ার মতো বিষয়কে খারিজ করে দেয়া হচ্ছে। বলা বাহুল্য, যার নিজের জামা ছেঁড়া, সে যদি অন্যের জামা ছেঁড়া নিয়ে কথা বলে, তখন একে দ্বিচারিতা বলা ছাড়া কি বলা যেতে পারে? এরই মধ্যে বাংলাদেশের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে ৩৪ ছাত্রসংগঠন একমত হয়েছে। বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।

 

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের অর্থায়নে কার্যক্রম পরিচালিত সংস্থা গ্লোবাল এলায়েন্স ফর পিপুলস রাইটস বিবৃতিতে বলেছে , বাংলাদেশে কখনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি। কখনো কখনো হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি হয়েছে। কিন্তু সেটা রাজনৈতিক কারণে কিংবা সম্পদ নিয়ে হয়েছে। তাকেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রং লাগিয়েছে অনেকেই। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে একজন হিন্দু নিহত-আহত হলে বলা হয়েছে, একজন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে। আর বিএনপির কোনো মুসলিম নিহত-আহত হলে বলা হয়েছে বিএনপির লোক নিহত-আহত হয়েছে। সেখানে কিন্তু মুসলিম বলা হয়নি। অর্থাৎ বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিশ্বখ্যাত সুখ্যাতি নষ্ট করার জন্য পরিকল্পনা মাফিক ষড়যন্ত চলছে দীর্ঘদিন থেকে। হালে সেটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করছে ভারত। অথচ, ভারত হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রধান দেশ।   উগ্রহিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি ও তার ঘরানার দলগুলো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সংখ্যালঘুরা, বিশেষ করে মুসলিম , ক্রিস্টান সহ মনিপুরে নিহত-আহত হচ্ছে, সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে অনেক। উপরন্তু বহু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের মুসলিম নাম বাদ দিয়ে হিন্দুকরণ করা হয়েছে ও হচ্ছে। সেই ভারতই বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ তুলেছে। উপরন্তু রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় চিন্ময় কৃঞ্চ দাস আসামী হয়ে আদালতের নির্দেশে কারাগারে গেলেও তার মুক্তি দাবি করেছে।

 

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল  বলেছেন, ‘ভারতের নিজের মাটিতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর অসংখ্য নির্মমতার ঘটনা ঘটে চলেছে। অথচ সেটা নিয়ে তাদের সংকোচ বা অনুশোচনা নেই। ভারতের এই দ্বিচারিতা নিন্দনীয় ও আপত্তিকর। তিনি বলেছেন, আমরা নিজেরাও দেখেছি, ছাত্রসংগঠন, মাদরাসা, রাজনৈতিক দলসহ বাংলাদেশের মানুষ দুর্গা পূজার সময় কীভাবে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় কাজ করেছে। সর্বশেষ চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যার পরও বাংলাদেশের মুসলমানরা অসীম সংযম ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন।’