বিধানসভার পরে এবার ভারতের লোকসভাতেও বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর জন্য জাতিসংঘকে অনুরোধ জানানোর প্রস্তাব উঠেছে।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) লোকসভায় এই প্রস্তাব উত্থাপন করেছে দেশটির পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) সাংসদরা।
বাংলাদেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে মমতা এই আহ্বান জানান। তার এই প্রস্তাব নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন মহলে।
শান্তিরক্ষীদের ভূমিকা কি, মমতা জানেন কিনা সন্দিহান শশী থারুর
মঙ্গলবার মমতার প্রস্তাবের জবাবে কংগ্রেসের সংসদ সদস্য এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দীর্ঘদিন কাজ করা শশী থারুর বলেন, “মমতা শান্তিরক্ষীদের ভূমিকা সঠিকভাবে বোঝেন কি না, তা নিয়ে আমি সন্দিহান।” তিনি ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সাধারণত পাঠানো হয় না। শুধুমাত্র কোনও দেশের সরকার নিজে অনুরোধ জানালে, তা সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “যখন কোনও দেশ পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, তখনই জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের মোতায়েন করা হয়। তবে সেই দেশের সরকারেরই জাতিসংঘের কাছে এ বিষয়ে অনুরোধ জানাতে হয়। বাংলাদেশে কী ঘটছে, তা নিয়ে নজর রাখা জরুরি। তবে সেখানে শান্তিরক্ষী পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই।”
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় দেওয়া বক্তব্যে মমতা বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হওয়া আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত জাতিসংঘের মাধ্যমে ওইসব অঞ্চলে শান্তিরক্ষী মোতায়েন করা। একইসঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আহ্বান জানান, বাংলাদেশ থেকে নির্যাতিত ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ নিতে।
এছাড়াও, ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কাছে আহ্বান জানান মমতা।
মুখরোচক বিষয় নাকি অজন্তর্জাতিক অঙ্গনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ?
বিধানসভার পরে এবার ভারতের লোকসভাতেও বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর জন্য জাতিসংঘকে অনুরোধ জানানোর প্রস্তাব উঠেছে।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) লোকসভায় এই প্রস্তাব উত্থাপন করেছে দেশটির পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) সাংসদরা।
এর আগে, সোমবার (২ ডিসেম্বর) পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় দেওয়া বক্তৃতায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একই ধরনের দাবি জানিয়েছিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়।
তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় উত্থাপন করতে চাই। আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ; যেখানে সংখ্যালঘু এবং হিন্দুদের নির্যাতন ও হত্যা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী দেশ। আমাদের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাথেও দেশটি সংযুক্ত। আমরা যে আহ্বান জানাচ্ছি তা হলো, ভারত সরকার অবিলম্বে বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর জন্য জাতিসংঘের কাছে আবেদন করুক।’
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতের সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বিবৃতি দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সংসদে এসে বাংলাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের অবহিত করুন। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী গতকাল (সোমবার) পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেছেন, ভারত সরকার যে সিদ্ধান্তই নেবে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই সিদ্ধান্তে অটল থাকবে। আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই।’
তৃণমূলের আর এক সাংসদ কীর্তি আজাদ বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একেবারে ঠিক বলেছেন। ভারত সরকার কী করছে? ওরা (বাংলাদেশ) আমাদের প্রতিবেশী। সেখানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। সরকার কিছু না করে… আমাদের নেত্রী ঠিকই বলেছেন। জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ করা উচিত।’
প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর মোতায়েনের আহ্বান জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ দাবিও করেন তিনি।