• ২১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

রাশেদ চৌধুরী ও আগস্ট বিপ্লব

usbnews
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
রাশেদ চৌধুরী ও আগস্ট বিপ্লব
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

বাংলাদেশের পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিলেন যে রাশেদ চৌধুরী “শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত হত্যাকারী।” কিন্তু এই দাবির পেছনে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ আজও তারা উপস্থাপন করতে পারেননি। বিগত দুই দশকের বেশি সময় ধরে এই অভিযোগ প্রচারের ফলে একসময় গ্রামের এক সাধারণ ছেলে আজ পুরো বিশ্বে ভুল কারণে আলোচিত পরিচিত (Celebrity) একজন ব্যক্তি। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁকে “গেম চেঞ্জার” হিসেবে দেখা হয়, যার মৃত্যু (Execution) নাকি ছিল বাংলাদেশের ভবিষ্যতের চাবিকাঠি!

১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এ শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যের প্রাণ হারানো ছিল নিঃসন্দেহে এক মর্মান্তিক ঘটনা। তবে সেই সফল সামরিক অভ্যুত্থানকে পুরো জাতি উদযাপন করেছিল, স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন হিসেবে। সেই সময়ের সংবাদমাধ্যম সাক্ষ্য দেয় যে অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারীদের সুর্যসন্তান হিসেবে সম্মান, অভিনন্দন জানানো হয়েছিল, জাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে উদ্ধার করার জন্য এবং জনগণের বহুদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষা পুনরুদ্ধার করার জন্য ।

এরপর মুজিবের কন্যা, শেখ হাসিনা, ২১ বছরের পর প্রধানমন্ত্রী হন এবং “মুজিব হত্যাকাণ্ড”-এর নামে একটি পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচার পরিচালনা করেন। বিচারের নামে যা হলো, তা ছিল একটা প্রহসন। অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সামান্য অনুরোধও আদালত প্রত্যাখ্যান করেছিল। দীর্ঘ সাজানো নাটকের পর, ২০১০ সালে যে কজন অভিযুক্ত পাওয়া গেল তাঁদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয় এবং বাকিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালানো হয়।

কিন্তু এই কথিত বিচারের দলিলে রাশেদ চৌধুরীকে শেখ মুজিবের হত্যাস্থলের আসে পাশেও পাওয়া যায়নি। এমনকি কোথায়, কবে এবং কাকে তিনি এই হত্যার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তা আজও পরিষ্কার নয়।

শেখ হাসিনার প্রশাসনের এই “আত্মস্বীকৃত হত্যাকারী” তকমা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট, ভুতুড়ে কাহিনী।

১৯৭৫ সালের আগস্টের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, সামরিক অভ্যুত্থানটি ছিল জাতিকে ফ্যাসিবাদী ধ্বংসযাত্রা থেকে রক্ষা করার একটি মহৎ পদক্ষেপ। মুজিব শাসনের ৪৪ মাসে ৩০,০০০ দেশপ্রেমিক নিহত হয়েছিলেন, ৬২,০০০ রাজনৈতিক বিরোধী কারাগারে বন্দি হয়েছিলেন এবং অভূতপূর্ব দুর্নীতির ফলে ১৫ লাখ মানুষ অনাহারে প্রাণ হারিয়েছিলেন। ১৫ আগস্টের ঘটনাটি জাতিকে বাকশালের একদলীয় শাসনের করালগ্রাস থেকে বাঁচিয়েছিল । পরবর্তী ২১ বছরে পাঁচটি সরকার এই ঘটনার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছিল এবং এর সত্যতা মেনে নিয়েছিল।

ভেবে দেখার মতো কিছু পয়েন্ট:

১. ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থান ছিল একটি বিপ্লব: এটি জাতি ও জনগণকে রক্ষার জন্য পরিচালিত হয়েছিল। রাশেদ চৌধুরী এতে অংশগ্রহণ করতে পেরে গর্বিত, যদিও তিনি ঐতিহাসিক ঘটনায় যোগ দেন ঘটনার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে। সেদিন তাঁর একমাত্র দায়িত্ব ছিল ঢাকার কেন্দ্রীয় রেডিও স্টেশন দখল করা এবং তা সুরক্ষিত করা, যে কাজ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছিল।

২. মুজিব হত্যা মামলার দলিলপত্র: এসব দলিলে রাশেদ চৌধুরীকে হত্যার স্থানের কাছাকাছিও কোথাও উল্লেখ করা হয়নি, কারণ সত্য হলো, তিনি সেখানে ছিলেন না।

৩. অন্য কারও ভুলের দায় চাপানো: অভ্যুত্থানের অন্য কোনো জায়গায় যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে থাকে, তবে তার জন্য রাশেদ চৌধুরীকে দায়ী করা বিচারিক বা প্রক্রিয়াগত কোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই যুক্তিযুক্ত নয়।

৪. অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ৫০০ জনের দায়: সেদিনের ঘটনায় সরাসরি ৫০০ জনের মতো ইউনিফর্মধারী অংশগ্রহণ করেছিলেন। যদি রাশেদ চৌধুরীকে দায়ী করা হয়, তবে তাঁদের সবাইকেই একইভাবে দায়ী করতে হবে।

৫. সামরিক বাহিনীর সমর্থন: ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানে পুরো সামরিক বাহিনী সমর্থন দিয়েছিল। প্রতিরক্ষা বাহিনীর সকল প্রধান, পুলিশ, বাংলাদেশ রাইফেলস, রক্ষীবাহিনী এবং আনসার সকলে নতুন রাষ্ট্রপতির প্রতি পূর্ণ আনুগত্য ঘোষণা করেছিলেন। যদি রাশেদ চৌধুরীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, তবে পুরো দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও দোষী হতে হবে।

৬. গণমানুষের সমর্থন: পুরো জাতি ১৫ আগস্টের বিপ্লবকে অভিনন্দন জানিয়েছিল। স্বৈরাচারী শাসনের পতনের আনন্দে মানুষ উল্লাস করেছিল। কোথাও কোনো প্রতীকী প্রতিবাদও হয়নি।

শেষ কথা:

পলাতক শেখ হাসিনার প্রশাসন বা অন্য কোনো প্রশাসন এখন পর্যন্ত প্রমাণ করতে পাারেনি। তারা প্রমাণ করুক, কীভাবে, কোথায়, এবং কখন রাশেদ চৌধুরী শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি এই হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তি কাকে, কবে এবং কীভাবে দিয়েছেন? যদি তারা এই কাল্পনিক ঘটনার কোনো প্রমাণ দিতে পারে, তাহলে রাশেদ চৌধুরী খুশি মনে ফাঁসির মঞ্চে উঠবেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বেঁচে ফেরা এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া রাশেদ চৌধুরী আজ ৭৮ বছর বয়সে এটাকে জাতির জন্য, জনগণের জন্য, এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁর শাহাদত হিসেবে গ্রহণ করবেন।

  • আবু আদনান