• ২১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

মুজিব বাহিনী, মুজিববাদ, সমাজতন্ত্র, বাকশাল, কুদরত এ খুদা কমিশন ও হাসিনা

usbnews
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
মুজিব বাহিনী, মুজিববাদ, সমাজতন্ত্র, বাকশাল, কুদরত এ খুদা কমিশন ও হাসিনা
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

সশরীরে উপস্থিত থেকে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ শেখ সাহেবের ভক্তরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে মুজিবের নিরঙ্কুশ আধিপত্য নিয়ে বিচলিত ছিল। আর এ লক্ষ্যেই শেখ ফজলুল হক মনি ও শেখ কামালের নেতৃত্বে স্বাধীনতার কিছু পূর্বে ভারতে মুজিব বাহিনী গঠিত হয়।

এদের রাজনৈতিক দর্শন ছিল মুজিববাদ। যদিও মুজিবের এ ধরনের কোনো রাজনৈতিক দর্শন ছিলো না। সমাজতান্ত্রিক আদর্শের ধ্বজাধারীরা এই বালের পক্ষে সোচ্চার ছিল।

৭২ এ এরা শ্লোগান দিতো: দিকে দিকে একই বাদ মুজিববাদ মুজিববাদ। এই সমাজতান্ত্রিক আদর্শের আলোকে দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের গড়ে তোলার লক্ষ্যে ডঃ কুদরত ই খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। এ কমিশন ধর্মবিমুখ খোদাদ্রোহী একটি শিক্ষানীতি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অনুভূতি পদদলিত করে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়াস চালায়।

খুদা কমিশনের ভূমিকায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়: ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে সমাজতান্ত্রিক আদর্শের আদলে গড়ে তোলার জন্য উপযুক্ত নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে এই শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণীত হলো।

কিন্তু এই তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ মূলত ধর্মবিমুখ শিক্ষা নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে শেখ সাহেব এই নীতি থেকে সরে আসতে বাধ্য হন।

শেখ সাহেব তারপরও এই উচ্চাভিলাষী বাম সমাজতান্ত্রিক আদর্শের ধ্বজাধারীদের প্রভাবমুক্ত হতে পারেননি। কারণ, এদের পশ্চাৎ থেকে ইন্ধন দিচ্ছিলো ভারত ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। একি কারণে মুজিব বাহিনী বিলুপ্ত করে রক্ষীবাহিনী গঠন করা হয়। এই রক্ষী বাহিনীকে কেবলমাত্র রেজা শাহের ভয়ঙ্কর সাভাক বাহিনীর সাথেই তুলনা করা যেতে পারে।

বামদের কুপরামর্শে শেখ সাহেব দেশের প্রায় সাত শতাধিক শিল্প কারখানা জাতীয়করণ করে ফেলেন। ফলে ব্যাপকভাবে উৎপাদন হ্রাস পায়। যে কল কারখানা বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব প্রদান করতো সেগুলো দেউলিয়া হয়ে পুরোপুরি ভর্তুকি নির্ভর হয়ে পড়ে।
৭৪ এ দুর্ভিক্ষ ও তার পরিণতিতে চার লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যুর পেছনে এই সমাজতান্ত্রিক জাতীয়করণ অনেকাংশে দায়ী ছিল।

মুজিবের দেউলিয়াত্বের ফলে ব্যাপকভাবে জনরোষ ছড়িয়ে পড়ে। এই সুযোগে সিরাজুল আলম খান তাত্ত্বিক হিসেবে আবির্ভূত হন। মেজর জলিল, রব, শাহজাহান সিরাজ ধীরে ধীরে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হতে থাকেন। দেশের মানুষের মধ্যে মুজিবের জনপ্রিয়তায় ধস নামতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে কলেজে জাসদ ছাত্রলীগের অভূতপূর্ব আবির্ভাব ঘটে। ট্রাকে মিছিলে ছাত্রদের শ্লোগান:

দিকে দিকে একই রব
জলিল রব জলিল রব।

পরিশেষে দেশে জনরোষের এই স্রোতে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভয়ে মুজিব একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে বাধ্য হন। এমনকি তার গড়া আওয়ামী লীগকেও বিলুপ্ত করে ফেলেন।

পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলে সেই সুযোগে আওয়ামী লীগ আবার পুনর্জন্মলাভ করে।

বিভিন্ন ছলে বলে কৌশলে – কখনো মাথায় পট্টি বেঁধে, হাতে তাসবিহ নিয়ে, মদিনা সনদ এর দোহাই দিয়ে এবং সর্বোপরি খাইরুল হকের মাধ্যমে তার অবসরের দু বছর পঞ্চদশ সংশোধনী এনে তার অবৈধ সংসদে এই অনিয়মতান্ত্রিক সংশোধনী পাশ করিয়ে স্বৈরাচার ফেরাউন এর ভূমিকায় আবির্ভূত হয়। কিন্তু হাসিনা ধীরে ধীরে তার বাবার সব আদর্শ কায়েমের চেষ্টা করলেও অর্থনৈতিক দর্শনের ক্ষেত্রে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা পরিহার করে।

অঘোষিত ভাবে বাকশালের বীজ বপন করতে সচেষ্ট হয়। একি ভাবে কুদরত এ কমিশনের সুপারিশ শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রবর্তন করে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলে।

গণতন্ত্রের কবর রচনা, বিরোধীদল নিধন, মানবাধিকার ভোটাধিকার হরণ, মামলা, হামলা, জেল জুলুম নির্যাতন, গুম, খুন শেখ হাসিনা সবকিছু তার বাবা কিছু থেকে শেখা।

বাংলাদেশের জনগণ আর কোনো দিন এ ধরনের দেশ ও গণ বিরোধী দলকে রাজনীতি করার অধিকার দিবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না।

লেখক: আ ম ম আরিফ বিল্লাহ, সাবেক চেয়ারম্যান, ফার্সী ও উর্দু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়