বিমান বিশেষজ্ঞদের দাবি, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের গায়ে যে গর্ত এবং বিমানটি যে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার ধরন দেখে মনে করা হচ্ছে ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হয়েছিল সেটি। তাদের দাবি, ৯০-৯৯ শতাংশ সম্ভাব্য কারণ এটিই। যদিও রাশিয়া এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দিয়েছে।
পাখির ধাক্কা, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, না কি রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, এই নানাবিধ তত্ত্ব নিয়ে হইচইয়ের মধ্যেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের বিমানের দ্বিতীয় ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার হল শুক্রবার।
২৫ ডিসেম্বর (বুধবার) দেশটির জরুরি পরিষেবা মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল , সকালে ৬৭ আরোহী নিয়ে উড্ডয়ন করা বিমানটিতে হঠাৎ আগুন ধরে যায়।
এরপর রাশিয়ার বিমান চলাচল পর্যবেক্ষণ সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল – প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, পাখির ঝাঁকের সঙ্গে ধাক্কার পর পাইলট জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
আকতাউ শহরটি আজারবাইজান ও রাশিয়া থেকে কাস্পিয়ান সাগরের বিপরীত তীরে অবস্থিত। কাজাখস্তানের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কী ঘটেছে তা তদন্তের জন্য একটি সরকারি কমিশন গঠন করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ তার রাশিয়া সফর সংক্ষিপ্ত করেন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, দুর্ভাগ্যবশত আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ সেন্ট পিটার্সবার্গ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন (যেখানে একটি শীর্ষ সম্মেলন ছিল)। পুতিন এরই মধ্যে তাকে ফোন করেছেন এবং বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় সমবেদনা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এই বিমান দুর্ঘটনায় যারা তাদের স্বজন ও বন্ধুদের হারিয়েছেন তাদের প্রতি আমরা গভীর সহানুভূতি জানাই এবং যারা বেঁচে আছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।
বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ নিয়ে নানা গুঞ্জনের পর এবার সামনে এসেছে ভয়ংকর তথ্য। রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে এ বিমান।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আজারবাইজানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন সূত্রের বরাতে আজারবাইজানের সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, বিমানটি গ্রোজনি শহরের কাছে যাওয়ার সময় প্যান্টসির ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে এটিতে হামলা চালানো হয়। ব্যবস্থা দ্বারা আক্রমণ করা হয়েছিল। রাশিয়ার ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম ব্যবহারের কারণে বিমানটির যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে অচল হয়ে পড়ে। ফলে দেশটির আকাশসীমায় থাকা অবস্থায় বিমানটি রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এতে আরও বলা হয়, বিমানটি কাস্পিয়ান সাগরের আশপাশের অঞ্চলে থাকাকালে পুনরায় রাডারে শনাক্ত হয়েছিল।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করার আহ্বান জানান।
এর আগে আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) কাজাখস্তানের আকতু শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে আছড়ে পড়ে আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের ইআরজে-১৯০ বিমান। ওই বিমানে মোট ৬৭ জন ছিলেন। তাদের মধ্যে ৬২ জন যাত্রী এবং পাঁচজন বিমানকর্মী।
বিমানটির গন্তব্য ছিল রাশিয়া। স্থানীয় সময় ভোর ৩টা ৫৫ মিনিটে আজারবাইজানের বাকু থেকে রাশিয়ার চেচনিয়া প্রদেশের গ্রজনির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল ওই বিমান। কিন্তু মাঝ আকাশে পাইলট খবর পান, গ্রজনিতে ঘন কুয়াশা রয়েছে। তাই সেখানে বিমান অবতরণে সমস্যা হতে পারে।
এরপর কাজাখস্তানের আকতুতে ওই বিমানের জরুরি অবতরণ করানোর চেষ্টা করা হয়। সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের অনুমতিও চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই পাইলট বিমানের নিয়ন্ত্রণ হারান।
ওই সময়ে সংবাদমাধ্যম জানায়, ঘন কুয়াশার কারণেই জরুরি অবতরণের চেষ্টা কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। রাশিয়ার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে অন্য কিছু কারণও উঠে আসে। কেউ কেউ দাবি করেন, বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি হয়েছিল। সে কারণে পাইলট জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। অনেকে আবার দাবি করেন, মাঝ আকাশে একঝাঁক পাখির সঙ্গে ধাক্কার ফলে বিমানটি জরুরি অবতরণ করাতে বাধ্য হন পাইলট।
বিমান দুর্ঘটনার ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, মাটিতে আছড়ে পড়ার আগে বেশ কয়েক মিনিট আকাশে ‘বিভ্রান্ত’ হয়ে ঘুরপাক খেয়েছে বিমানটি। বিমানবন্দর থেকে কিছুটা দূরে আকাশে ক্রমাগত চক্কর কাটতেও দেখা যায়। অন্তত তিন মিনিট ‘বিভ্রান্ত’ হয়ে ঘোরার পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তা একটি খোলা জায়গায় আছড়ে পড়ে।