• ২১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

অস্ত্র-অর্থ-সাংগঠনিক শক্তি এখনো অক্ষত অজ্ঞাতে সংগঠিত হচ্ছে আওয়ামী লীগ

usbnews
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪
অস্ত্র-অর্থ-সাংগঠনিক শক্তি এখনো অক্ষত অজ্ঞাতে সংগঠিত হচ্ছে আওয়ামী লীগ
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

দৈনিক ইনকিলাব – তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে’ (মহাভারত) জ্যোতিষীরা রাজা কংসকে সতর্ক করে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব এবং বেড়ে ওঠা নিয়ে এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারেরঅতিমানবিকতামহানুভব নীতি সুযোগে মাদার অফ মাফিয়া শেখ হাসিনার অলিগার্করা অগোচরেই প্রকাশ্যে আসছে, সুসংগঠিত হচ্ছে। আগস্টের চেতনা কর্পেটের নীচে চাপা রেখে বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগের জুলুমবাজ, খুনি, লুটেরা, হত্যা মামলার আসামী, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে শত শত ছাত্রহত্যার খুনি আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য, অসৎ ব্যবসায়ী এবং পিচাষিণী হাসিনার স্তবকদের প্রতি নমনীয় হলে তলে তলে তারা সুসংগঠিত হয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। শুধু তাই নয়, হাসিনার সব ধরণের অপকান্ডে সঙ্গে জড়িত সরকারি কর্মকর্তাকর্মচারীদের (সিভিল প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন) গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখলে তারাও সুযোগ বুঝে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ফঁনা তুলতে পারে। শেখ হাসিনার একের পর এক ভাইরাল ফোনালাপ, তিন মাস দেশে অবস্থান করে নির্বিঘেœ ভারতে পালিয়ে যাওয়া, জাহাঙ্গীর কবির নানকেরফেসবুক লাইফবক্তব্য সে বার্তাই দেয়। ওবায়দুল কাদের আশঙ্কা করে বলেছিল, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে এক রাতে আওয়ামী লীগের ১০ লাখ লোককে হত্যা করা হবে ওবায়দুল কাদেরের বয়ানকে মিথ্যা প্রমাণ করায় অন্তর্বর্তী সরকার সাধুবাদ পাবে। আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়নি। কিন্তু যারা খুনের আসামী, লুটেরা, জুলুমবাজ, দখলদারি করেছেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শত শত মানুষকে হত্যা করেছেন তাদের কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগের অর্থ, অস্ত্র এবং সাংগঠনিক শক্তি (সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা নেতাকর্মী) অটুট রয়েছে। আগস্টের পর কিছুদিন গ্রেফতার ভয়ে পালিয়ে থাকলেও তারা এখন নিজ নিজ এলাকায় প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছেন। তাদের গ্রেফতার বিচারের ব্যাপারে সরকারআঞ্জুমানের মফিদুল ইসলামভুমিকায় অবতীর্ণ হওয়ায় সুযোগ পেলেই তারা অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপর ছোঁবল মারবে।

  অন্তর্বর্তী সরকারের গত মাসে হত্যা, গুম, খুন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে রেকর্ডসংখ্যক মামলা দায়ের করলেও সে তুলনায় গ্রেফতারের সংখ্যা খুবই কম। অর্ধশতাধিক বিতর্কিত সাবেক মন্ত্রীএমপি, নেতা, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাসিনা রেজিমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন সারাদেশে মাঠ পর্যায়ের এমন কিছু অপরাধী নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেকেই সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে লাখ লাখ টাকা খবর করে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। দীর্ঘ তিন মাস দেশের ভিতরে নির্বিঘেœ থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খুনি ওবায়দুল কাদের গত নভেম্বর সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে পালিয়ে যান। পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ (ভাতের হোটেল হারুন), বিপ্লব কুমার সরকার, মনিরুল ইসলামের মতো খুনিরা ভারতে পালিয়ে গেছেন। আন্দোলনের সময় আইন শৃংখলা বাহিনীর বহু সদস্য আইনের পোশাক পড়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন তাদের অনেকেই কাজে যোগদান না করলেও দেশেই আত্মগোপনে রয়ে গেছেন। বিতর্কিত এই ব্যাক্তিরা কার সহায়তায় পালিয়ে গেলেন এবং পুলিশ কেন তাদের গ্রেফতার করেনি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি ওই সময় হত্যাকা জড়িত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলার আসামী এমন অনেকেই চাকরি করছেন বলেও জানা গেছে।

সুত্রের দাবি, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০ থেকে ২৫ হাজার অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়। এদের মধ্যে ছাত্রলীগের নেতা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগের পাড়া মহল্লার নেতা, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সুশীলরাও অস্ত্রের লাইসেন্স পান। ওই সব বৈধ অস্ত্র ছাত্র আন্দোলন ঠেকানোর কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। মাফিয়া রানি হাসিনার শাসনামলে প্রকাশ্যে অস্ত্রের ঝনঝনানি মানুষে দেখেছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগের হেলমেট বাহিনী, লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যরা প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোকে মোকাবিলার জন্য অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে মহড়া দিয়েছে। বিএনপির আন্দোলন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দেখা গেছে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে ছাত্রলীগযুবলীগ নেতার অস্ত্র হাতে প্রহরা দিচ্ছে। কোথাও কোথাও আইন শৃংখলা বাহিনীর সঙ্গে তারা মহড়া দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের হলে হলে অস্ত্রের স্তুপ করে রাখা হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের সাধারণ শিক্ষার্থী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওই অস্ত্র দিয়ে গুলি করেছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হলেও ওই সব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা রহস্যজনকভাবেআওয়ামী লীগের প্রতি নমনীয়হওয়ায় ওই সব অস্ত্র এখনো রয়ে গেছে তাদের হাতেই।

গত শুক্রবার ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিনের ব্যনারেঐক্য, সংস্কার, নির্বাচনশীর্ষক দুদিন ব্যাপী জাতীয় সংলাপের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে সর্বস্তরের প্রতিনিধিরা অংশ গ্রহণ করেন। বেশির ভাগ বক্তাই শেখ হাসিনাসহ অপরাধীদের বিচার, গ্রেফতার, পালিয়ে যাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। আলোচনায় অংশ নেয়া ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে যাত্রাবাড়িতে পুলিশের গুলিতে শহীদ ইমাম হোসেনের ভাই রবিউল ইসলাম জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় আদৌ বিচার হবে কি না সেই প্রশ্ন তোলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, একটি হত্যাকা একজন করে পুলিশ জড়িত থাকলে হাজার পুলিশ গ্রেফতার হতো, দুজন করে জড়িত থাকলে হাজার পুলিশ গ্রেফতার হতো। কিন্তু এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ২৩ জন পুলিশ। হত্যাকাের সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের কতজন গ্রেফতার হয়েছে? তাহলে আমরা বিশ্বাস করব কীভাবে বিচার হবে? ইমাম হোসেনের ভাই রবিউল আলম অভিযোগ করেন, যাত্রাবাড়ীতে গণহত্যায় ডিএমপি কমিশনারের (নাম বলেননি) ভাগনে এডিসি জড়িত। তাকে গ্রেফতারের কথা বললেও এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান বক্তৃতায় ছেলের মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ছেলের জানাজা এলাকায় দিতে দেওয়া হয়নি। দুটি মসজিদে লাশ গোসল করাতে দেওয়া হয়নি।

শুধু হত্যা, খুন, গুম আর প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাদের ওপর পৈচাসিক নির্যাতনই নয়; হাসিনা ক্ষমতা ধরে রাখতে খুলে দিয়েছিলেন দুর্নীতির দুয়ার। আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা সকলকে টাকা কামানোর পরামর্শ দিতেন। তিনি আমাকেও বলেছিলেন, শুধু রাজনীতি করো না টাকা কামাও।হাসিনা ক্ষমতা দীর্ঘয়িত করতে ভারতের সহায়তার পাশাপাশি দেশের ব্যবসায়ীশিল্পপতিদের নানান বৈধঅবৈধ সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন। অনেক ব্যবসায়ীকে টাকা কামানোর মেশিনে পরিণত করেছিলেন। সিিকেট করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারী, ব্যাংক বিমার মালিক টাকা লুট, উন্নয়ন মহাপ্রকল্পের নামে ডলারের ভাগবাটোয়ার, প্রশাসনে নিয়োগবদলি বাণিজ্য করে কয়েকশ নেতা কয়েক হাজার ব্যবসায়ী টাকার কুমির বানিয়েছেন। আগস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সারাদেশে কয়েকশ হত্যাকান্ডের মামলা হয়েছে। কিন্তু হাসিনার সময়ে লুট হওয়া টাকা এবং নানা ফন্দি ফিকির করে বৈধঅবৈধ পথে কামানো টাকার পাহাড়ের মালিকরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। দুর্নীতি দমন কমিশন হাতে গোনা কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বললেও আওয়ামী লীগের নেতাসহ বিপুল সংখ্যক হাসিনার অলিগার্ক বিগত দিনে কামানো টাকা নিয়ে বসে রয়েছেন। তারা আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক ভাবে পুনর্বাসনে সে টাকা খবর করতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে।

ফেসবুক লাইয়ে এসে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা সংবিধান অনুযায়ী এখনো প্রধানমন্ত্রী। তিনি সশরীরে প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করে লিখিত পদত্যাগপত্র দেননি। তার মানে তিনি এখনো বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী। মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার অবৈধ।হাসিনার সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ফোনালাপে দেশে প্রবেশের ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে গত মাসে জুডিশিয়াল ক্যু, আনসার বিদ্রোহ, সংখ্যা লঘু নির্যাতনের ফেইক ইস্যু, গার্মেন্টসে বিশৃংখলা, পাহাড়ে অশান্তির চেষ্টাসহ নানা ভাবে দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেস্টা করেন। এখনো সিভিল প্রশাসনের বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তারা সরকার হুমকি ধমকি আল্টিমেটাম দিচ্ছে। অবস্থায় পর্দার আড়ালে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা হঠাৎ করে মাঠে নেমে আসলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখনো আওয়ামী লীগের অলিগার্করা সক্রিয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখনো হাসিনার বিরুদ্ধে দৃঢ়সংকল্প। তারপরও টিএসসিতে গভীর রাতে শেখ হাসিনারঘৃণাস্তম্ভেরগ্রাফিতি মুছে ফেলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে সে চেষ্টা হয়েছে।