শেখ হাসিনার পতনের খবরে ৫ আগস্ট গাজীপুরের মাওনায় আনন্দ মিছিল আসতে থাকে চারদিক থেকে। সেই মিছিলে হাজারো জনতার সঙ্গে যোগ দেন আবু সুফিয়ান রাব্বী (১৮)। সেখানে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তিন দিন যন্ত্রণা ভোগ করে মায়ের কোলে মাথা রেখেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রাব্বী।
৫ আগস্ট সকাল থেকেই মাওনা শহীদি মোড় এলাকায় একদল বিজিবি সদস্যবাহী বহরকে আটকে দিয়েছিল স্থানীয় জনতা। বিকালে আওয়ামী লীগের গুটিকয়েক নেতাকর্মীর উসকানিতে বিজিবি এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। একটি গুলি বিদ্ধ হয় রাব্বীর পায়ে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান মাওনার আল-হেরা হাসপাতালে। দরিদ্র রিকশাচালক বাবা তারাম উদ্দিন কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছিলেন না। পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা ধার করে পরদিন ছেলেকে নিয়ে ভর্তি করান ময়নসিংহ মেডিক্যাল
কলেজ হাসপাতালে। তিন দিন যন্ত্রণা ভোগ করে ৯ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন রাব্বী।
আবু সুফিয়ান রাব্বী ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চর পুবাইল গ্রামের তারাম উদ্দিনের ছেলে। দারিদ্রের কশাঘাতে পিষ্ট এ তারাম উদ্দিন গাজীপুরের মাওনায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া থাকেন।
তারাম উদ্দিনের তিন ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে রাব্বী দ্বিতীয়। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে পড়তেন। বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে কোরআনের হাফেজ বানাবেন। বাবার সে স্বপ্নও থেমে গেল গুলির ঘটনায়।
তারাম উদ্দিন বলেন- গরিব মানুষ, দিন আনি দিন খাই। রাজনীতির ভাষা বুঝি না। তবে মনেপ্রাণে আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় চাইতাম। এর বিনিময়ে যে ছেলেকে হারাতে হবে, সেটা বুঝতে পারিনি। সেদিন রাব্বী সকালের নাস্তা খেয়ে কাউকে কিছু না বলেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। বিকালে খবর আসে গুলি লেগেছে তাকে। টাকার অভাবে একদিন বিনা চিকিৎসায় রাখি ছেলেকে। পরদিন টাকা জোগাড় করে ময়মনসিংহে নিয়ে গেলাম, তবে বাঁচাতে পারলাম না।
রাব্বীর মা সুফিয়া বেগম বলেন, গুলির পর তিন দিন কান্নাকাটি করেছে আমার ছেলেটা। এক সময় যন্ত্রণা নিয়েই আমার কোলে ঘুমিয়ে গেল আমার মানিক। আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম। কত স্বপ্ন ছিল ছেলে আমার হাফেজ হবে, তা অধরাই রয়ে গেল। একটি গুলি সব তছনছ করে দিল। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।
প্রকাশিত – দৈনিক আমাদের সময় , ০৩ জানুয়ারি ২০২৫