বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সিলেট পর্বে টিকেট নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন দর্শকরা। তাদের মতে ঢাকার মতো সিলেটে টিকেট ব্যবস্থাপনার অভিযোগ নেই, বরং মাঠের ভেতরের পরিবেশে তারা সন্তুষ্ট।
সিলেট পর্ব শুরুর একদিন আগে গতকাল রোববার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিম জানিয়েছিলেন, ঢাকার মতো অভিযোগ আর শুনতে চান না। সিলেট পর্ব থেকে দর্শকদের সন্তুষ্ট করতে চান তারা।
আজ সোমবার বেলা দেড়টায় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই পর্ব শুরু হয়। স্বাগতিক সিলেট স্ট্রাইকার্স ও রংপুর রাইডার্সের ম্যাচ দিয়ে শুরু হওয়া দিনে দ্বিতীয় ম্যাচে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ফরচুন বরিশালের মুখোমুখি হয়েছে দুর্বার রাজশাহী।
প্রথম ম্যাচে রংপুরের কাছে স্বাগতিক সিলেট ৮ উইকেটে হারলেও দর্শক গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। ১৮ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার গ্যালারিজুড়ে ছিল সিলেট স্ট্রাইকার্সে প্ল্যাকার্ড, ছিল উৎসব মূখর পরিবেশ।
গ্যালারির ক্লাব হাউজে বসে খেলা দেখছেন, সরওয়ার হোসেন রনি নামের একজন দর্শক। মাঠের ক্রিকেট উপভোগ করার পাশাপাশি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। রনি বলেন, আমরা ঢাকার নিউজ শুনে খুব শঙ্কায় ছিলাম, কিন্তু সিলেটে খেলা দেখতে এসে সে ধারণা ভুল প্রমাণ হয়েছে। সিলেট স্টেডিয়ামে বিসিবির ব্যবস্থাপনা, টিকেট বিক্রি প্রক্রিয়া সব চমৎকার।
বন্ধুদের খেলা দেখতে এসেছেন রনি। সবার আশা ছিল, ঘরের মাঠে সিলেট জিতবে, রানও হয়েছিল ভালো। শেষ পর্যন্ত রংপুরের কাছে সিলেট হেরে গেছে।
গ্যালারিতে শিশুসন্তানকে নিয়ে খেলা দেখছিলেন উম্মে সাবিত রুমা। ভবিষ্যতে ছেলেকে ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্ন তার। রুমা বলেন, সিলেটে কোনো ম্যাচ হলে খেলা দেখতে আসার চেষ্টা থাকে। লোকমুখে শুনে এবার নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কাবোধ করছিলাম। তবে এসে দেখছি সব ঠিকঠাক, গেটে প্রবেশে শৃঙ্খলা, গ্যালারির পরিবেশ সব ভালো লেগেছে।
সিলেট পর্বের প্রথম দিনই দর্শক সাড়া মিলেছে। প্রথম ম্যাচে স্টেডিয়াম গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। দ্বিতীয় ম্যাচের এক ঘণ্টা আগে লাক্কাতুরাস্থ মূল ফটকের পাশে থাকা বুথে সব টিকেট শেষ হয়ে গেছে।
এবারের বিপিএলে দর্শকদের জন্য নানা সুবিধা তৈরি করেছে বিসিবি। গ্যালারি ও মাঠের বাইরে, প্রবেশপথে দর্শকদের জন্য রয়েছে মুগ্ধ পানি কর্নার। যেখানে রয়েছে বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি পানের ব্যবস্থা। একইসঙ্গে রয়েছে পরিবেশসম্মত প্লাস্টিক বোতলমুক্ত স্টেডিয়াম। শীতের বিকেলে রোদের মধ্যে তৃষ্ণা পেলে কাগজের পরিবেশসম্মত গ্লাস নিয়ে পানি খেতে পারেন দর্শকরা।
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আহতদের খেলা দেখার বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে রয়েছে আলাদা জোন। নগরের শাহী ঈদগাহ থেকে খেলা দেখতে মাঠে উপস্থিত হয়েছেন আন্দোলনে আহত রেজাউল ইসলাম নাহিদ। তিনি এই বিশেষ ব্যবস্থার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং আন্দোলনে আহত সবাইকে মাঠে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান।
এবারের আসরে মোট ১২ ম্যাচ গড়াবে সিলেটে। সিলেটের উইকেট স্পোর্টিং হিসেবে খ্যাত। স্বাভাবিকভাবে মিরপুরের তুলনায় এখানে রান বেশি হয়। বিপিএলের এবারের আসরে মিরপুরেও রানের দেখা মিলেছে। সেঞ্চুরির পাশাপাশি দলীয় দুই শতাধিক রান এসেছে একাধিক ম্যাচে। আজ প্রথম ম্যাচেই ২০৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় পেয়েছে রংপুর রাইডার্স। এ্যালেক্স হেলসের ঝড় দেখেছে সিলেট স্টেডিয়াম। তার ব্যাটে ৫৬ বলে ১১৩ রানের ইনিংস রংপুরকে সহজ জয় এনে দিয়েছে।
রংপুরকে বড় লক্ষ্য দিলো সিলেট
দুই ব্যাটার রনি তালুকদার ও জাকির হাসানের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) এর ১১তম আসরের সিলেট পর্বের প্রথম ম্যাচে রংপুর রাইডার্সকে ২০৬ রানের টার্গেট দিয়েছে স্বাগতিক সিলেট স্ট্রাইকার্স। টুর্নামেন্টের নবম ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ২০৫ রান করে সিলেট। রনি ৫৪ ও জাকির ৫০ রান করেন।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দিনের প্রথম ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দারুন শুরু করেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের দুই ওপেনার রনি তালুকদার ও স্কটল্যান্ডের জর্জ মুনসি। ৩০ বলে ৪৭ রান যোগ করেন তারা।
পঞ্চম ওভারের শেষ বলে মুনসিকে থামিয়ে রংপুরকে প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন পেসার আকিফ জাভেদ। ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ১২ বলে ১৮ রান করেন মুনসি।
তিন নম্বরে নামা জাকির হাসানকে নিয়ে সিলেটের রানের চাকা সচল রাখেন রনি। ৩০ বলে টি-টোয়েন্টিতে ১২তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে সাজঘরে ফিরেন রনি। রংপুরের স্পিনার মাহেদি হাসানের বলে এলবিডব্লিউ হন ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩২ বলে ৫৪ রান করা রনি। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে জাকিরের সাথে ২৩ বলে ৪১ রান যোগ করেন রনি।
তৃতীয় উইকেটে পল স্টার্লিংকে নিয়ে ৩১ বলে ৩৬ রানের জুটিতে সিলেটের রান ১শ পার করেন জাকির। ২টি চারে ১৬ বলে ১৬ রান করে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের শিকার হন স্টার্লিং।
১৪তম ওভারে দলীয় ১২৪ স্টার্লিং ফেরার পর ক্রিজে জাকিরের সঙ্গী হন অ্যারন জোন্স। দলের বড় সংগ্রহের পথ তৈরি করতে রংপুরের বোলারদের উপর চড়াও হন জাকির ও জোন্স। ২৯ বলে ৪৭ রানের জুটিতে দলের রান ১৭১ রানে নেন তারা। ৩৬ বলে টি-টোয়েন্টিতে সপ্তম অর্ধশতক করে সাইফুদ্দিনের দ্বিতীয় শিকার হন জাকির। ৪টি ওভার বাউন্ডারিতে ৩৮ বলে ৫০ রান করেন জাকির।
আকিফের করা ইনিংসের শেষ ওভার থেকে ৪টি ছক্কায় ২৭ রান তুলেন জোন্স ও জাকের আলি। এরমধ্যে জাকের ৩টি ও জোন্স ১টি ছক্কা মারেন। এতে ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ২০৫ রানের বড় সংগ্রহ পায় সিলেট। এবারের বিপিএল চতুর্থবার দলীয় রান ২’শ স্পর্শ করলো।
৪টি চার ও ১টি ছক্কায় জোন্স ১৯ বলে ৩৮ এবং ৩টি ওভার বাউন্ডারিতে ৫ বলে ২০ রানে অপরাজিত থাকেন জাকের।
সাইফুদ্দিন ৩১ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট।
- এমজেড এম আলম , বাংলাদেশ থেকে