• ১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২০শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রয়োজন , জুলাই ঘোষণা সর্বদলীয় বৈঠকে ঐকমত্যের তাগিদ

usbnews
প্রকাশিত জানুয়ারি ১৭, ২০২৫
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র  প্রয়োজন , জুলাই ঘোষণা সর্বদলীয় বৈঠকে ঐকমত্যের তাগিদ
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চ‚ড়ান্ত করতে খসড়া ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐতিহাসিক সংলাপ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ঐতিহাসিক একই কারণে যে, এর আগে কোনো সরকারপ্রধানকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়ার ঘটনা ঘটেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতি জোর দিয়েছেন। আলোচনায় অংশ নেয়া প্রায় সব দল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়নে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য হয়েছে। তবে এটি প্রণয়নে তাড়াহুড়ো না করে বিশদ আলোচনার ভিত্তিতে প্রণয়নের পক্ষে তারা। সবাই বলেছেন, এই ধরনের একটি ঘোষণাপত্র করার দরকার আছে। তবে এখানে অনেক সাজেশন আসছে মোটাদাগে হলো, ঘোষণাপত্রে সবার অবদান বলতে হবে, ধারাবাহিকতা উল্লেখ করতে হবে। ঘোষণাপত্রের রাজনৈতিক বা আইনগত প্রকৃতি কী হবে সেটি স্পষ্ট করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টাও রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহŸান জানিয়ে বলেছেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হবে। ঐক্যে ফাটল ধরলে ষড়যন্ত্রকারীরা বিপর্যয় ঘটাতে পারে।


হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, খেলাফত মজলিস, হেফাজতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এনডিএমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারাও বৈঠকে অংশ নেন। প্রায় সবাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। জাতীয় পার্টিকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে এমনটিই জানিয়েছেন সরকারের আইন বিচার ও সংসদ-বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। তবে বৈঠকে ছিল না এলডিপি, সিপিবি, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের কোনো প্রতিনিধি। আলোচনায় অংশ না নেয়া দলগুলোর নেতারা জানান, তারা ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও আলোচনায় অংশ নিতে পারেননি। মূলত যে বিষয়ে মতামত দেবেন সে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ যথাসময়ে পাননি।

এর আগে বৈঠকে অংশ নিতে দুপুর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আসতে শুরু করেন। পরে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বৈঠক শুরু হয়। বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এসে পৌঁছান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বেলা ৩টা ২৪ মিনিটে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রবেশ করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদসহ জামায়াত পতিনিধি দল। এর কিছুক্ষণের মধ্যে প্রবেশ করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান ও যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল আলম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা এবং গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। পৌনে চারটার দিকে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রবেশ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এরই মধ্যে বৈঠকস্থলে প্রবেশ করেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এসময়ে প্রবেশ করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ও যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলনের আরিফ সোহেল, জাতীয় নাগরিক কমিটির নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারি, আখতার হোসেন প্রমুখ।

বৈঠকের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মাঝখানে ছাত্ররা এসে বললো তারা একটি ঘোষণা দেবে। সেখানে আমাকেও থাকতে হবে। আমি বুঝতে চাইলাম কী ঘোষণা দিচ্ছে। আমি বললাম এটা হবে না। আমার যাওয়াটাও হবে না তোমাদেরও করা ঠিক হবে না। তোমরা যদি ৫ই আগস্টে ফিরে যেতে চাও সেদিনের পরিপ্রেক্ষিতে যেটা হয়েছিল সেটাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেদিনের পুরো অনুভূতি ছিল একতার অনুভূতি। কেউ বলেনি তুমি অমুক আমি অমুক। কাজেই তোমরা করতে চাইলে সবাইকে নিয়ে করতে হবে। এটা পরিষ্কার। এটা না করলে ঠিক হবে না।

তিনি বলেন, যে একতা দিয়ে তোমরা ৫ই আগস্ট সৃষ্টি করেছিলে এটার অবমাননা হবে। তারা খুশি হয়নি আমার কথায়। কিন্তু ক্রমেই তারা বুঝলো যে, ৫ই আগস্ট যদি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হয় তাহলে এভাবে করতে হবে। একত্রে করতে হবে। সে কথা থেকেই এ আলাপ শুরু কীভাবে একত্র করা যাবে। আজকের আলোচনাটাও এটাকে কেন্দ্র করে হবে। যেখানে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা করতে পারবো না তাহলে এটার উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। এটার দরকারও না। দরকারটা হলো ওটুকু স্মরণ করে দেয়া যে, আপনাকে দেখে আমার সাহস আসে। সবার মনে সাহস আসে। সারা দেশ চমকে উঠবে যে আমরা জেগে আছি। আমাদের অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায়নি চাঙ্গা আছে। জাতি হিসেবে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আছি।

রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দোয়া করবেন, আমি যতদিন আছি এ একতা নিয়ে থাকবো। কাজেই সেই পথে আমাদের চলতে হবে। আমাদেরকে সেই সাহসটা আপনারা দেন যখন আপনাদের সঙ্গে বসি। আজকে খুবই সাহসী মনে হচ্ছে আপনাদের দেখে। ৫ই আগস্টের কথা স্মরণ করে যে- আমরা একতাবদ্ধভাবে আছি। এখন কীভাবে সেটা মানুষের সামনে প্রকাশ করবো, ৫ই আগস্টের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবো সেটাই আসল কাজ। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যদি সর্বসম্মতিভাবে আমরা একটি সিদ্ধান্তে আসতে পারি তাহলে দেশের জন্যও ভালো, আন্তর্জাতিকভাবেও ভালো।

মূলত প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় থেকে হঠাৎ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ, আমন্ত্রণ প্রক্রিয়া যথাযথ না হওয়া, অনেক নেতাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ম্যাসেজ দিয়ে দাওয়াত দেয়া এবং তড়িঘড়ি করে ‘অনুষ্ঠান আয়োজন’ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের অনেকেই লিখেছেন, প্রধান উপদেষ্টার আন্তরিকতা থাকলেও তার কার্যালয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মূল কাজের চেয়ে সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে বেশি মনোযোগ দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ঘোষণাপত্র সরকারের সব ধরনের কাজ করার বৈধতা নিশ্চিত করবে। সম্প্রতি সংবিধান বিশেষজ্ঞ বিচারপতি আবদুর রহমান বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থান বা বিপ্লব-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য ১০টি জিনিস খুবই প্রয়োজন। প্রথমটি হচ্ছেÑ ঘোষণাপত্র, আর দ্বিতীয়টি জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচনের আয়োজন করা।

মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করতে চেয়েছিল। এ ঘোষণাপত্র নিয়ে তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়। কয়েক ঘণ্টা আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সংবাদ সম্মেলন করে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ সরকার ঘোষণা দেবে জানানোর পর ছাত্ররা সেদিন কর্মসূচি পরিবর্তন করে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) কর্মসূচি পালন করে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই ‘ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের জন্য ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল।
জানা যায়, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ খসড়া নিয়ে আলোচনার জন্য সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অনেক দলের কাছে যথাসময়ে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ খসড়া পাঠানো হয়নি। তাদের কেউ কেউ বলছেন, যে ঘোষণাপত্র নিয়ে মতামত দিতে হবে সেটি যথাসময়ে হাতে এলে তা পড়ে বুঝে মতামত দেয়া যেত।

বিএনপির অভিমত : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের কাছে সবচাইতে জরুরি ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যকে ধরে রাখা। যে জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। সেই জাতীয় ঐক্যকে গণঐক্যে রূপান্তরিত করে সেটিকে রাজনৈতিকভাবে আমরা যেন সাংস্কৃতিক চর্চা করতে পারি, রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে নিয়ে আসতে পারি এবং সেই ঐক্যকে ধরে রেখে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারিÑ সেটিই আমাদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, আমাদেরকে প্রধান উপদেষ্টা আহŸান করেছিলেন, আমরা কথা বলেছি, আমাদের পরামর্শ যা দরকার রাষ্ট্র পরিচালনা হিসেবে এবং বিভিন্ন বিষয়ে সেটি আমরা দিয়েছি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কিত ঘোষণাপত্র নিয়ে কিছু আলোচনা হয়েছে, সব রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের বিভিন্ন পরামর্শমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা প্রশ্ন করেছি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র আসলেই সাড়ে পাঁচ মাস পরে কোনো প্রয়োজন ছিল কি-না? যদি থেকে থাকে তার রাজনৈতিক গুরুত্ব, ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও আইনি গুরুত্ব কী? সেটি নির্ধারণ করতে হবে।

জামায়াত : জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করার জন্য বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম। সেখানে রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে একটি খসড়া পাঠানো হয়েছে। আলোচনায় প্রত্যেক দলের এবং বিশিষ্টজনের মতামত চাওয়া হয়েছে। তবে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। একটি কথা মোটাদাগে বলতে পারি, প্রত্যেকটি দল একটি ঘোষণাপত্র হওয়া প্রয়োজন, সেটি অনুভব করেছে। তবে তাড়াহুড়ো করলে ৫ আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মূল চেতনাকে ধারণ করে ঘোষণাপত্র তৈরিতে ভুলভ্রান্তি হতে পারে। সময় নিতে হবে। সবার সাথে মতবিনিময় করতে হবে। তবে খুব বিলম্ব করে অন্য কোনো অরাজকতা ও ষড়যন্ত্রের জন্য অপেক্ষা করে তারা যেন সুযোগ না পায়।

হেফাজত : হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরীর সভাপতি জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, ঘোষণাপত্রের জন্য আমরা একটি কথা বলে এসেছি, অনেকগুলো বিষয় যেহেতু এখানে উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু সেই জায়গায় ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের গণহত্যাকেও সেখানে সংযোগ করতে হবে। সে কথাটি আমরা বলে এসেছি। ২০২১ সালে পাখির মতো গুলি করে ওলামায়ে কেরামকে হত্যা করা হয়েছে, হাজার হাজার ওলামায়ে কেরামকে গ্রেফতার করে বছরের পর বছর জেলখানায় বিনাবিচারে আটক রাখা হয়েছে, সেটিও এখানে উল্লেখ থাকতে হবে।

গণতন্ত্র মঞ্চ : ঘোষণাপত্র তৈরিতে তাড়াহুড়ো ও যেনতেন প্রক্রিয়া যেন না করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখার আহŸান জানিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা বলেছি, এটি যেন তাড়াহুড়ো করে, যেনতেন প্রক্রিয়া না করা হয়। ঘোষণাপত্র তৈরির জন্য সরকারের দিক থেকে এই উদ্যোগটি নেয়া দরকার। যে প্রেক্ষাপট ও গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের আকাক্সক্ষা প্রকাশ পেয়েছে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের যেই দিকনির্দেশনা দেয়, এ বিষয়গুলো একটি দলিলে একত্রিত হতে পারে। তবে তার একটা পদ্ধতিগত দিক কী হবে? দলিলটি কীভাবে তৈরি হবে? এ বিষয়ে আমরা আমাদের প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেছি। আশা করি, সেই অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্মপন্থা তৈরি করবে।

এবি পার্টি : আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের খসড়া এবি পার্টিকে দিয়েছিলেন। আমরা একটি লিখিত পরামর্শ দিয়েছি। ঐতিহাসিক দলিল তৈরিতে উদ্যোগ নেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফুয়াদ বলেন, শব্দে শব্দে সব দলের একমত হওয়া কঠিন বা দরকারও নেই। আমাদের প্রক্রিয়ায় একমত হওয়া দরকার। কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গণ-অভ্যুত্থানের ফরমান লিখিত হবে, সব দল তা সম্মতির ভিত্তিতে গ্রহণ করবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মতো।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, যদিও আমরা ১৫ জানুয়ারি মধ্যে ঘোষণাপত্র জারি করতে পারবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু সরকারকে সেভাবে ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। তারপরও তারা যে উদ্যোগ গ্রহণ করছে তার জন্য সাধুবাদ জানিয়েছি। গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজন মিলে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছি। গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজন ও সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করা হবে, এটি এখন নিশ্চিত। পরবর্তী ধাপে আলোচনা করব জুলাই ঘোষণাপত্রে কী কী থাকবে। যা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে রাজপথে নেমে আসা ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হবে। আমরা আশাবাদী, অবিলম্বে ঐকমত্যে পৌঁছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আশা-আকাক্সক্ষাকে জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারব।

গণসংহতি আন্দোলন : জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা বলেছি, এটি যেন তাড়াহুড়ো করে, যেনতেন প্রক্রিয়ায় না করা হয়। ঘোষণাপত্র তৈরির জন্য সরকারের দিক থেকে এই উদ্যোগটি নেয়া দরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের আমন্ত্রণে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনকে ডাকা হয়েছিল। সেই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র কিভাবে তৈরি করা যাবে। গণ-অভ্যুত্থানের যে প্রেক্ষাপট, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের চেয়ে আকাক্সক্ষা প্রকাশ ঘটেছে, গণ-অভ্যুত্থান ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের যেই দিকনির্দেশনা দেয়, এ বিষয়গুলো একটি দলিলে একত্রিত হতে পারে। তবে তার একটি পদ্ধতিগত দিক কী হবে? দলিলটি কীভাবে তৈরি হবে? এ বিষয়ে আমরা আমাদের প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেছি। আশা করি, সেই অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্মপন্থা তৈরি করবে।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. নেতৃত্বে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়নের বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিএনপি, জামায়াত, হেফাজত ইসলাম, বামমঞ্চ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সব রাজনৈতিক শক্তি অংশগ্রহণ করেছে। বৈঠক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়নের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। সবাই বলেছেন, এ ধরনের একটি ঘোষণাপত্র করার দরকার আছে। তবে এখানে অনেক সাজেশন আসছে, মোটাদাগে হলোÑ ঘোষণাপত্রে সবার অবদান বলতে হবে, ধারাবাহিকতা উল্লেখ করতে হবে। তিনি বলেন, ঘোষণাপত্রের রাজনৈতিক নেচার বা লিগ্যাল নেচার কী হবে সেটি স্পষ্ট করতে হবে। বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এই ঘোষণাপত্র আরো বেশি আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে রাজনৈতিক শক্তি ছাত্র-জনতার সবার মধ্যে আলোচনা করে সর্বসম্মতিতে এটিকে প্রণয়ন করতে হবে। এর জন্য যত সময় প্রয়োজন নেয়া যেতে পারে, তবে এটিও বলছেÑ যাতে অযথা কালবিলম্ব না করা হয়, সেই মতামত দিয়েছে। সবাই ঐকমত্য হয়েছে, আরো নিবিড় পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এ ধরনের ঘোষণাপত্র হওয়া উচিত। সবাই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেনÑ এই প্রক্রিয়ায় আমরা সফল হতে সক্ষম হবো। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সবাই একত্রিতভাবে ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি, তেমনি সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এই ঘোষণাপত্র তৈরি করতে পারব।

সময়সীমা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দল ও ছাত্রদের সংগঠনের যারা অংশ নিয়েছে, সবাই বলেছেÑ ঐকমত্য পোষণ করে সর্বসম্মতিক্রমে একটি ঘোষণাপত্র তৈরি করার জন্য। যত সময় লাগুক তা যেন নেয়া হয়। তাড়াহুড়ো যেন না করা হয়। অযথা কালক্ষেপণ না করা হয়। এই লক্ষ্যে অনেকে প্রস্তাব করেছে আলোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করার জন্য। আমরা এই প্রস্তাবগুলো দ্রæত বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো। ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কোনোরকম দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি। শুধু কী পদ্ধতিতে করা হবেÑ বিভিন্ন রকম মতামত আসছে। সব মতামতকে আমরা স্বাগত জানাই। কোথাও আমরা অনৈক্যের সুর দেখি না; বরং সবাই বলছেÑ এই ঘোষণায় যেন সবার মালিকানা থাকে, সেই বিষয়ে বিভিন্ন মতামত আসছে। আমরা এমন মতামত ঐক্য আরো সুদৃঢ় হবে। ঘোষণাপত্র নিয়ে আরো আলোচনা হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আলোচনা হতে পারে, কমিটি হতে পারে, ওনাদের (রাজনৈতিক দল) মতামত নিয়ে খুব দ্রæত একটি কর্মকৌশল ঠিক করব।

যা আছে ঘোষণাপত্রের খসড়ায় : জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় এই ভ‚খÐের মানুষের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যুগের পর যুগ সংগ্রামের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়। পাকিস্তান আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জন, ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কথা তুলে ধরা হয়।
এর পরের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে কীভাবে ছাত্র-জনতার উত্তাল গণবিক্ষোভ গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান, সে প্রসঙ্গও রয়েছে জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায়।

খসড়ায় বলা হয়, ‘…আমরা, ছাত্র-জনতা সেই অভিপ্রায়বলে আত্মমর্যাদা, সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের যে আদর্শে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে, সেই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য সার্বভৌম জনগোষ্ঠী হিসেবে নিজেদের সংগঠিত করিলাম। আমরা, প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ ভেঙে দেয়ার আহŸান জানাচ্ছি এবং ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও অখÐতা রক্ষার্থে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আহŸান জানালাম। আমরা সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি রোধ নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করবে, এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম।’

খসড়ায় আরো বলা হয়, ‘আমরা ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারকে লালন করার দলিল ১৯৭২ সালের সংবিধান সংশোধন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম। আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুটপাটের অপরাধগুলোর উপযুক্ত বিচার করা হবে, এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম।’
এতে আরো বলা হয়, ‘আমরা এই ঘোষণা প্রদান করলাম যে, ১৯৭২ এবং ১/১১ কালের রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পরিবর্তন ঘটানোর জন্য আমাদের একটি নতুন জনতন্ত্র (রিপাবলিক) প্রয়োজন, যা রাষ্ট্রে সব ধরনের নিপীড়ন, শোষণ ও বৈষম্যের অবসান ঘটাবে এবং এ দেশের তরুণসমাজের প্রত্যাশাকে ধারণ করতে পারবে। আমরা এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম যে, এই ঘোষণাপত্রকে উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হবে।’

সর্বদলীয় বৈঠক শেষে যা বললেন বিএনপির সালাহউদ্দিন

ছাত্র-জনতার অভ্যুথানের সাড়ে পাঁচ মাস পর রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিকভাবে জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে, সেই ঐক্যকে গণঐক্যে রূপান্তরিত করে সেটাকে আমরা যাতে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে চর্চা করতে পারি, সেই ঐক্যকে ধরে রেখে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, সেটাই আমাদের এখনকার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক বক্তব্য আমরা দিতে চাই। কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি বা ফ্যাসিবাদের দোসরেরা যাতে আমাদের ভেতরে অনৈক্যের বীজ বপন করতে না পারে, সেদিকে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আজ আমাদের আহ্বান করেছিলেন, আমরা এসেছি, কথা বলেছি। আমরা আমাদের পরামর্শ, রাষ্ট্র পরিচালনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে যেসব চিন্তাভাবনা আমাদের দেওয়া প্রয়োজন, সেটা আমরা দিয়েছি।’

জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে অংশগ্রহণ শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে কথা বলেন বিএনপির এই নেতা।

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর আমাদের রাজনৈতিক ঐক্য যাতে ফাটল না ধরে সেদিকে দৃষ্টি রাখার জন্য উপদেষ্টাদের আহ্বান জানিয়েছি।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানসম্পর্কিত ঘোষণাপত্র নিয়ে কিছু আলোচনা হয়েছে। সব রাজনৈতিক দলের নেতারা তাঁদের পরামর্শমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা প্রশ্ন করেছি, আসলে সাড়ে পাঁচ মাস পরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের কোনো প্রয়োজন ছিল কি না। যদি থেকে থাকে, সেটার রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক এবং আইনি গুরুত্ব কী, সেগুলো নির্ধারণ করতে হবে। এ ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে যাতে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে ফাটল সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও আমাদের লক্ষ রাখতে হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘যদি কোনো রাজনৈতিক দলিল ঐতিহাসিক দলিলে পরিণত হয়, সেই দলিলটাকে আমরা অবশ্যই সম্মান করি। কিন্তু সেটা প্রণয়ন করতে গিয়ে যাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তাদের পরামর্শ নেওয়া হয়, সেই পরামর্শ আমরা দিয়েছি। সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সব উপদেষ্টাকে নজর রাখা ও সেই হিসেবে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেছি। যাতে জাতীয় ঐক্যে কোনো ফাটল না হয়, আমাদের মধ্যে যাতে কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘রাজনৈতিক দলিল প্রণয়নের বিষয়ে আমরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি।’

ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়ে কোনো আপত্তি আছে কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে উত্তর না দিয়েই সালাহউদ্দিন আহমদ চলে যান।

 

সর্বদলীয় বৈঠক শেষে যা বললেন মিয়া গোলাম পরওয়ার

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠকে বসেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ওই বৈঠক শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টার কিছু আগে শেষ হয়। পরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন বৈঠক অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ।

এদিন বৈঠকে অংশ নিয়ে এমন একটি মূল্যবান দলিল তৈরির পেছনে কোনো অস্থিরতা, অসংগতি ও সমন্বয়হীনতার প্রয়োজন নেই জানিয়ে ঘোষণাপত্রের খসড়ায় ইসলামী মৌলিক বিষয় বাদ পড়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

সর্বদলীয় বৈঠকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অংশ নেন চার সদস্যের একটি দল। পরবর্তীতে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র রচনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে মতবিনিময়ের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। সর্বদলীয় বৈঠকে আমরা আমাদের মতামত পেশ করেছি। মোটা দাগে আলোচলার বিষয়ে বলতে গেলে, প্রথমত জামায়াতে ইসলামীসহ সব রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐক্য ধারণ করার জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রনয়ণ করা হোক, এ বিষয়ে একমত।

তবে ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে দু’দিন আগে থেকে সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া খসড়াগুলো অনেকেই সময়মতো পায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা পরামর্শ দিয়েছি সরকারের এমন একটি মূল্যবান দলিল তৈরির পেছনে কোনো অস্থিরতা, অসংগতি বা সমন্বয়হীনতার প্রয়োজন নেই। ধীরস্থিরভাবে আমাদের এই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের জন্য প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় হওয়া দরকার।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা পরামর্শ দিয়েছি, সরকারের এমন মূল্যবান ঘোষণাপত্রের জন্য আরও মতবিনিময় হওয়া দরকার। তবে ঘোষণাপত্রের খমড়ায় অনেক মৌলিক জিনিস বাদ পড়েছে। বাংলাদেশে ইসলামী শক্তি বড় একটি ইসলামী শক্তি, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে তাদের অস্বাধারণ ত্যাগ, বহু মানুষকে শহিদ করা হয়েছে, নিরীহ-নিরপরাধ নেতৃবৃন্দকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে, ক্রসফায়ার নেয়া হয়েছে- এই সত্য ইতিহাসগুলো ঘোষণাপত্রের কাঠামোয় স্থান পায়নি। ইতিহাস থেকে এমন মৌলিক বিষয়গুলো যেন বাদ না পড়ে আমরা সেগুলো সরকারের দৃষ্টিতে এনেছি। আমরা বলেছি- প্রক্রিয়াটা এমন হওয়া দরকার যাতে সব দলসহ স্টেকহোল্ডাররা মতামত দিতে পারে।

বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ছাড়াও অন্যদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল হাবিবুর রহমান আজাদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের উপস্থিত ছিলেন।