• ১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২০শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

মুখোমুখি অবস্থানে ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা : আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সংঘাত তৈরির অপচেষ্টা মনে করছেন অভিজ্ঞরা ,সভা ডেকেছেন ঢাবি উপাচার্য

usbnews
প্রকাশিত জানুয়ারি ২৭, ২০২৫
মুখোমুখি অবস্থানে ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা : আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সংঘাত তৈরির অপচেষ্টা মনে করছেন অভিজ্ঞরা ,সভা ডেকেছেন ঢাবি উপাচার্য
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে এসে উত্তেজনামূলক স্লোগান দিতে থাকেন। ওদিকে ঢাবির হল থেকে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী জমায়েত হয়ে পাল্টা অবস্থান নেন। এতে ওই এলাকায়  উত্তেজনা দেখা দেয়।  এক পর্যায়ে ঢাবি শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিলে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পিছু হটেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে।

৭ কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে জরুরি সভা ডেকেছেন ঢাবি উপাচার্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে জরুরি সভা ডেকেছেন ঢাবি উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমদ খান। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম খান এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানান।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সঙ্গে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অধ্যক্ষদের এক জরুরি সভা আগামীকাল ২৭ জানুয়ারি (সোমবার) দুপুর সাড়ে ১২টায় উপাচার্য কার্যালয় সংলগ্ন সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। সভায় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

ঢাবি প্রো-ভিসি অফিসে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের হট্টগোল, ডাকা হলো জরুরি সভা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) প্রফেসর ড. মামুন আহমেদের কার্যালয়ে অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ব্যাপক হট্টগোল করেছে। এ নিয়ে সাত কলেজের প্রিন্সিপালদের সঙ্গে আগামীকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় জরুরি সভা ডেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যা ৭টায় এ ঘটনা ঘটে। অর্ধশত শিক্ষার্থীদের একটি দল প্রো-ভিসির অফিসে গিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে। ৫ই জানুয়ারি ভিসি প্রফেসর ড. নিয়াজ আহমেদ খানের কাছে তাদের দেয়া এক স্মারকলিপিতে বর্ণিত দাবি-দাওয়া সমূহ এখনো কেন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না- এ নিয়ে তারা জবাবদিহিতা চান।

এ বিষয়ে প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মামুন আহমেদ বলেন, তারা যে দাবিগুলো করছে এ দাবি সংবলিত স্মারকলিপি তারা এ মাসের শুরুতে ভিসি স্যারের কাছে জমা দেয়। সবশেষ তথ্যমতে, একটি কমিটি ইউজিসির আন্ডারে গঠিত হয়েছে তাদের দাবিকৃত বিষয়টি সমাধানের জন্য।

আজকে আবার অর্ধশতাধিক ছাত্রছাত্রী এসে পড়ে। আমি বলি যেকোনো দু’জন আসো। কিন্তু তারা ৪০-৫০ জন একসঙ্গে ঢুকে পড়ে ব্যাপক হট্টগোল সৃষ্টি করে। বিষয়টি আমাদের হাতে নেই, এ কথা তাদেরকে আমি বলি এবং তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করি। এভাবে তারা বেশ কিছুক্ষণ উত্তেজনা সৃষ্টি করে চলে যায়। তারপরও আমি ব্যক্তিগতভাবে যা যা করা যায় সব করবো বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এরপর তাদেরকে অপমান করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ তোলে এবং বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে। তাদের দাবিগুলোর বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসি ও সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।

এদিকে, ঘটনার পর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা মিরপুর রোড অবরোধ করে। এতে ওই এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন ওই পথের যাত্রীরা।

যেভাবে সূত্রপাত হচ্ছে –
মুখোমুখি অবস্থানে ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা, উত্তপ্ত পরিস্থিতি

মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুপক্ষের ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় ওই এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

রোববার রাত ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকা কলেজের সামনে থেকে মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে অবস্থান নেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে ঢাবি শিক্ষার্থীরা লাঠি নিয়ে অবস্থান নেন। এ সময় দুপক্ষ ঢিল মারতে থাকেন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়।

mzamin
মুখোমুখি অবস্থানে ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা

ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। তবে দুপক্ষের উত্তেজনাময় এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেন্ড ছুড়েছে।

এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের সহায়তায় চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম।

এর আগে রোববার (২৬ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে ঢাকা কলেজের সামনে থেকে মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে পৌঁছান সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থীরা হলের সামনে অবস্থান নেন।

মুখোমুখি অবস্থানে ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা, উত্তপ্ত পরিস্থিতি

এর আগে সন্ধ্যায় অধিভুক্ত সাত কলেজের প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী পাঁচ দফা দাবিতে সায়েন্স ল্যাব মোড় ও টেকনিক্যাল মোড় অবরোধ করেন। এতে সায়েন্স ল্যাব এলাকা, নীলক্ষেত মোড় ও এলিফ্যান্ট রোডসহ আশপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন ঘরে ফেরা মানুষ।

পরে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মামুনের (শিক্ষা) অসদাচরণে প্রতিবাদে তার বাসভবন অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর আগে ঢাবির ভিসিকে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য এক ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন আন্দোলনকারীরা।

প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার বেশি সময় সড়ক অবরোধ করে রাখার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোড়ে এক আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে ঢাবির প্রো-ভিসির বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল রহমান এ ঘোষণা দেন।

নতুন কর্মসূচি দিয়ে সায়েন্সল্যাব ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের বাস ভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে চার ঘণ্টা পর সায়েন্সল্যাব মোড় ছেড়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) রাত ১০টা ২০ মিনিটে এ ঘোষণা দেন সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের ফোকাল পারসন ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান।

তিনি বলেন, আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফার বিষয়ে আপডেট জানতে গেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি মামুন আহমেদ শিক্ষার্থীদের অপমান করে বের করে দেন। এমন আচরণের পর রাস্তা অবরোধ করলেও তিনি ক্ষমা চাইতে আসেননি। আমরা এক ঘণ্টার আলটিমেটাম দিচ্ছি, যদি তিনি আমাদের কাছে ক্ষমা না চান তাহলে হাজার হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে তার বাসভবন ঘেরাও করব।

এর আগে, সন্ধ্যা ৬টার দিকে শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজ সংলগ্ন মিরপুর সড়ক অবরোধ করেন। কিছুক্ষণ পর তারা সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় সায়েন্সল্যাব, নীলক্ষেত মোড় ও এলিফ্যান্ট রোডসহ আশপাশে এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ৪ ঘণ্টারও বেশি সময় সড়ক আটকে থাকার পর অনেকেই পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে রওনা দেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার রাজীব গাইন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ঢাকা কলেজের ছাত্ররা সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় আটকে রেখেছে। আরেকটি অংশ অবস্থান নিয়েছে শাহবাগ মোড়ে।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আফজাল হোসেন বলেন, আমরা পাঁচ দফা দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসির কাছে গেলে তারা আমাদের অপমান করে বের করে দেয়। এখন শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়াসহ সবগুলো দাবি রাতের মধ্যে মেনে নিতে হবে। না মানলে অবরোধ কর্মসূচি চলমান থাকবে।

নয়ন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে আমরা বলেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধীনে আগের নিয়মে ভর্তি না করে নতুনভাবে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী ধারণক্ষমতার ওপর ভর্তি করানো হোক। কিন্তু ঢাবি আগের নিয়মেই ভর্তি করাচ্ছে। গত ৫ জানুয়ারি আমরা একটি স্বারকলিপি জমা দিয়েছিলাম। সেটির আপডেট জানতে গেলে ঢাবির প্রো-ভিসি মামুন আহমেদ আমাদের সঙ্গে বাজে আচরণ করে। এই আচরণের জন্য তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।

পাঁচ দফা দাবি

১. ২০২৪-২৫ সেশন থেকেই সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে হবে।

২. শ্রেণিকক্ষের ধারণক্ষমতার বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো যাবে না।

৩. শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে।

৪. নেগেটিভ মার্ক যুক্ত করতে হবে।

৫. সাত কলেজের ভর্তি ফির স্বচ্ছতা নিশ্চিতে, মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাবি ব্যতীত নতুন অ্যাকাউন্টে ভর্তি ফির টাকা জমা রাখতে হবে।

ঢাবি-সাত কলেজ সংঘর্ষ, শিবির সভাপতির বক্তব্য

অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে নীলক্ষেত মোড় এবং মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে দুপক্ষের ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটে। এতে ওই এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

তবে এ অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীকে কোনো ধরনের সংঘাতে না জড়ানোর অনুরোধ করেছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ।

এস এম ফরহাদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই সাত কলেজ সংক্রান্ত বিষয় অ্যাড্রেস করতে দিন। সংঘাত সম্ভাব্য সব সমাধানকে আরও জটিল করে তুলবে। পতিত স্বৈরাচার আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সংঘাত তৈরি করে ফায়দা লুটতে চায়। আমরা যেন সেই সুযোগ তৈরি করে না দিই।’