বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যাতে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা এবং আগ্রহী বিদেশিরা দেখতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার (২২ মার্চ) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দিলে এ কথা জানান ড. ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে যেগুলো এখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব সেগুলো আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন করে ফেলতে চাই। সে জন্য আমি চাইব সংস্কার কমিশন আশুকরণীয় বা দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা যায় এমন সুপারিশগুলো দ্রুত আলাদাভাবে আমাদের কাছে পেশ করুক।’
সাংবাদিকদের প্রবেশপদের জন্য ন্যূনতম বেতন বিসিএস কর্মকর্তাদের মতো নবম গ্রেডে করার সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক করতে বলেছে কমিশন। একই কোম্পানি বা মালিকের অধীনে একাধিক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান না রাখার সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। এ ক্ষেত্রে তারা ‘ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়ার’ সুপারিশ করেছে।
একই কোম্পানি বা মালিকের অধীনে একাধিক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান না রাখার সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। এ ক্ষেত্রে তারা ‘ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়ার’ সুপারিশ করেছে।, একই কোম্পানি, গোষ্ঠী, ব্যক্তি, পরিবার বা উদ্যোক্তা যাতে একই সঙ্গে একাধিক মাধ্যমের মালিক হতে না পারে, সে জন্য বিশ্বের বহু দেশে ‘ক্রস-ওনার শিপ (টেলিভিশনের মালিক সংবাদপত্রের মালিক হতে পারেন না বা সংবাদপত্রের মালিক টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক হতে পারেন না) নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কামাল আহমেদ বলেন, বস্তুনিষ্ঠ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা প্রয়োজন। এ লক্ষ্য বেতন-ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।সাংবাদিকদের মধ্যে ওয়েজ বোর্ড (মজুরি বোর্ড) নিয়ে আবেগ আছে। এ ওয়েজ বোর্ড নিয়ে একটি মামলার কারণে তা ঝুলে আছে। এটি পুরোপুরি আদালতের বিষয় হওয়ায় মামলা কবে নিষ্পত্তি হবে তা অজানা। এর আগে ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা হয়েছিল তা ১০ বছর হয়ে গেছে। এ কারণেই বিসিএস ক্যাডারদের এন্টি লেভেলের নবম গ্রেডের বেতন স্কেল অনুযায়ী সাংবাদিকদের এন্ট্রি লেভেলও দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি হওয়ায় কমিশন ঢাকার সাংবাদিকদের জন্য ‘ঢাকা-ভাতা’ চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। ঢাকা ভাতার টাকার পরিমাণ কি হবে তা সরকার ও গণমাধ্যমের নীতিনির্ধারকরা নির্ধারণ করবেন।
দেশীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো একটি নির্দিষ্ট স্যাটেলাইট ব্যবহারে বাধ্য বলে বিদেশ থেকে বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দেখা যায় না, কমিশনের পক্ষ থেকে এমন তথ্য পাওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যাতে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা এবং আগ্রহী বিদেশিরা দেখতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে সরকার।’
এসময় কামাল আহমেদের নেতৃত্বাধীন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের এই কাজকে অমূল্য হিসেবে অভিহিত করে এই প্রতিবেদন যেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য মানুষ পড়তে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করার পরামর্শ দেন ড. ইউনূস। এর আগে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন।
এদিন দুপুরে কমিশন প্রধান কামাল আহমেদসহ অন্যান্য সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার হাতে তাদের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।
কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, দ্য ফিন্যানসিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের প্রতিনিধি শামসুল হক জাহিদ, অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন ওনার্স (অ্যাটকো) প্রতিনিধি মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সচিব আখতার হোসেন খান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের ট্রাস্টি ফাহিম আহমেদ, মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক সাংবাদিক জিমি আমির, ডেইলি স্টারের বগুড়া জেলা প্রতিনিধি মোস্তফা সবুজ, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ডেপুটি এডিটর টিটু দত্ত গুপ্ত এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন।
বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) একীভূত করে একটি প্রতিষ্ঠান করার সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। এই প্রতিষ্ঠানের নাম হতে পারে ‘বাংলাদেশ সম্প্রচার সংস্থা বা জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা’। এই প্রতিষ্ঠানের বার্তা বিভাগ হিসেবে বাসসকে একীভূত করতে বলেছে কমিশন। এ ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানে তিনটি বিভাগ থাকবে। এগুলো হলো টেলিভিশন, বেতার ও বার্তা বিভাগ।
কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার নির্ধারিত সময় ছিল ৩১ মার্চ পর্যন্ত। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ কিছুদিন আগে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, সারা দেশে মতবিনিময় এবং জরিপের মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে যেসব মতামত এসেছে সেগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে তারা সুপারিশমালা তৈরি করছেন। গত বছরের নভেম্বরে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। গণমাধ্যমকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষ্যে এই ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হয়।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের ওয়েব সাইডে দেয়া তালিকা এবং রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের সদস্যদের নামের গরমিল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া।
২০১৯-২০২১ মেয়াদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও মাছরাঙা টেলিভিশনের চেয়ারম্যান অঞ্জন চৌধুরী পিন্টুর নাম গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের ওয়েব সাইডে নেই।গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবের অনেকেই বলেছেন এতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি মাইলফলক।
বাই বাংলাদেশী প্রোডাক্ট পেইজে বলা হয়েছে , সাংবাদিকদের প্রবেশপদের জন্য ন্যূনতম বেতন বিসিএস কর্মকর্তাদের মতো নবম গ্রেডে করার সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক করতে বলেছে কমিশন। অন্তত এখন শিক্ষিত সাংবাদিক পাওয়া যাবে।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের একজন সদস্যের নাম উল্লেখ করে রিফর্ম বাংলাদেশ পেইজে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-কমিটির তালিকার স্ক্রিনশট পোস্ট করে বলা হয়েছে ,আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মাছরাঙা টেলিভিশনের চেয়ারম্যান অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু – জুলাই অভ্যুত্থানের পর এরা ঢুকে যায় তাই লীগের পুনর্বাসন এরা চায়।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের ওয়েব সাইডে দেয়া তালিকাতে একজন সদস্যের নাম নেই নিয়ে অনেকেই ভিন্ন রকম মন্তব্যে ভরপুর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
পাঠকের জানার জন্য গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের ওয়েব সাইডে দেয়া তালিকা দেয়া হলো



কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার নির্ধারিত সময় ছিল ৩১ মার্চ পর্যন্ত। শনিবার (২২ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান কমিশন প্রধান কামাল আহমেদ।
কামাল আহমেদ বলেন, এক প্রতিষ্ঠান একটিমাত্র গণমাধ্যমের মালিক হতে পারবেন এমন প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। ওয়ান হাউস ওয়ান মিডিয়ার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারকে স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। দুটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা তৈরি করতে হবে। এই সংস্থাকে স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে।
সাংবাদিকদের বেতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা দিতে হবে। এটি না দেওয়ার ফলে অনেকে অনৈতিক কাজে জড়াচ্ছে। তবে বেতন-ভাতার ওয়েজবোর্ডে আমাদের এখতিয়ার না থাকলেও আর্থিক নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। ন্যূনতম নবম গ্রেড অনুযায়ী একজন সাংবাদিকের বেতন হতে হবে। পাশাপাশি রাজধানীতে কর্মরত সাংবাদিকদের ‘ঢাকা ভাতা’ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার (২২ মার্চ) দুপুরে রাষ্ট্রীয় ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়















