• ২৬শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৮শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ছাত্র-জনতার বিপ্লব : গৌরব গাঁথা জানালায় দাঁড়াতেই হেলিকপ্টার থেকে বুলেট এসে কেড়ে নিল শিশু সামিরের জীবন

usbnews
প্রকাশিত মার্চ ১৬, ২০২৫
ছাত্র-জনতার বিপ্লব : গৌরব গাঁথা জানালায় দাঁড়াতেই হেলিকপ্টার থেকে বুলেট এসে কেড়ে নিল শিশু সামিরের জীবন
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিল অনেক শিশু-কিশোর। তাদের ও তাদের পরিবারের স্বপ্নটা আর কোনো দিন পূরণ হবে না। প্রায় শতাধিক শিশু-কিশোর শহীদ হয় জুলাই বিপ্লবের সময়। ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে শহীদ হন শিশু সাফকাত সামির। ১১ বছর বয়সী শিশু সামির পড়তেন নূরানী মাদ্রাসায়। ১৯ জুলাই ২০২৪ নিজের বাসায় বুলেটবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন আমাদের ছোট্ট সামির। জানালার পাশেই সামিরের পড়ার টেবিল। পড়ার বই, প্লাস্টিকের খেলনা, ঘরের মেঝেতে এখনো ছোপ ছোপ রক্তের দাগ।

১৯ জুলাই ২০২৪ শুক্রবার জানালা দিয়ে আসা একটি বুলেট সামিরের চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার খুলি ভেদ করে বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ১১ বছরের সাফকাত সামির। এত শিশু-কিশোরকে কেন গুলীতে মরতে হলো প্রশ্ন সাধারণ মানুষের?

যেভাবে শহীদ হন সামির: ১৯ জুলাই ২০২৪ শুক্রবার সারাদিন শিশু সামির বাসায় ছিল। সে স্থানীয় জামিউল মাদ্রাসায় লেখাপড়া করত। বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে খেলতে নামার কথা ছিল। কিন্তু আতঙ্কের কারণে বাবা তাকে বাসা থেকে বের হতে দেয়নি। সন্ধ্যায় বের হয়ে চটপটি খাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সন্ধ্যায় এলোপাতাড়ি গুলী করা হলে জানালা বন্ধ করতে গেলে গুলীবিদ্ধ হয়ে শিশুটি মারা গেছে।

May be an image of 1 person, child, bangs and smiling

শুক্রবার ১৯ জুলাই ২০২৪ কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে মিরপুরে কাফরুল থানার সামনের সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়া ঢুকছিল সামিরের ঘরে। জানালা বন্ধ করতে গেলে বাইরে থেকে বুলেট এসে বিদ্ধ করে শিশুটিকে। গুলীটি তার চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। ঘরে ছিল তার চাচা মশিউর রহমান (১৭)। গুলী থেকে রেহাই পায়নি তার দশম শ্রেণীতে লেখাপড়া করা চাচাও। তার ডান কাঁধে গুলী লেগেছে। ১৪টি সেলাই লেগেছে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাদেরকে বাসার অদূরে মিরপুর-১৪ নম্বরে রাস্তার উত্তর পাশে অবস্থিত মার্কস মেডিকেল কলেজ হসপিটালে নেয়ার পর জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশু সামিরকে মৃত ঘোষণা করেন। আর তার চাচাকে কাঁধে সেলাই দিয়ে চিকিৎসা ও ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দেন।

১৯ জুলাই ২০২৪ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুর-১৪ নম্বর এলাকায় দোতলার নিজ বাসায় এই নির্মম মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। ঘটনার পর থেকে এক মাত্র শিশু সন্তানকে হারিয়ে পরিবারে এখন চলছে শোকের মাতম। শিশুটির রক্তাক্ত গেঞ্জি হাতে নিয়ে কাঁদছে মা। কাফরুল থানায় অভিযোগ করতে গেলেও পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেন। মুচলেকা রেখে লাশ নিয়ে গেছেন। এরপর মিরপুরে বাসার কাছে প্রথম জানাযা হয়। এরপর আশুলিয়ায় দ্বিতীয় জানাযা শেষে শনিবার সকালে শিশুটিতে দাফন করা হয়।

বাবা সাকিবুর রহমান (৩৪) মিরপুরের ছোট্ট বাসাটিতে ফিরে এসে সন্তানের স্মৃতি হাতড়াচ্ছেন। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ছোট চাকরি করেন। শিশু সামির একটি মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। সাকিবুর রহমানের সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন তাঁর চোখের পানি থামছিলই না। তিনি বলেন, শুক্রবার ১৯ জুলাই ২০২৪ বিকেলে তিনি পাশেই বকুলতলা মাঠের কাছে ছিলেন। হেলিকপ্টার থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলী হচ্ছিল দেখে বাসার দিকে রওনা দেন তিনি। এমন সময় এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে বাসায় গুলি ও রক্তের সংবাদ পান। দ্রুত বাসায় এসে দেখেন, তাঁর একমাত্র সন্তান রক্তাক্ত হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে। তাকে কোলে নিয়ে ছুটে যান পাশের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে। চিকিৎসক বলেন, শিশুটি আর বেঁচে নেই। তাদের গ্রামের বাড়িতে নোয়াখালীর চাটখিলে।

ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের জন্য আওয়ামী লীগ ও পুলিশ যেভাবে চাপ দিয়েছিল : সন্তানের লাশ হাসপাতালে থাকা অবস্থায় এলাকার মুরব্বি ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য মো. ইসমাইল হোসেন হাজির হন। তিনি সাকিবুর রহমানকে নিয়ে যান কাফরুল থানায়।

 

প্রকাশ : রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫, দৈনিক সংগ্রাম