বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু -এর (ডব্লিউএইচও) মতে, ছত্রাকজনিত রোগ ক্রমশ জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে যে, ক্যান্ডিডার মতো ওষুধ-প্রতিরোধী সংক্রমণসহ ছত্রাকজনিত রোগগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া রোগীদের, যেমন কেমোথেরাপি নিচ্ছেন বা এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছেন বা অঙ্গ প্রতিস্থাপন করেছেন, তাদের বিশেষভাবে প্রভাবিত করছে। হু সতর্ক করে দিয়েছে যে, কার্যকর চিকিৎসার অভাব এবং সীমিত রোগ নির্ণয়ের ক্ষমতা, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে লক্ষ লক্ষ মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
সংস্থাটি প্রথমবারের মতো একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে ছত্রাক সংক্রমণ মোকাবেলায় উন্নত ওষুধ এবং রোগ নির্ণয়ের সরঞ্জামের জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে।ডব্লিউএইচওর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধের সহকারী মহাপরিচালক ড. ইউকিকো নাকাতানি জানাচ্ছেন, ‘আক্রমণাত্মক ছত্রাকের সংক্রমণ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে, কিন্তু অনেক দেশেই রোগীদের জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাব রয়েছে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দিষ্ট কিছু ছত্রাককে হুমকি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করে, যেখানে মৃত্যুর হার ৮৮% পর্যন্ত। তবে, চিকিৎসার উন্নয়ন এখনও ধীরগতিতে রয়ে গেছে। গত দশকে মাত্র চারটি নতুন অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ অনুমোদিত হয়েছে এবং মাত্র তিনটি ক্লিনিকাল ট্রায়ালের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যার ফলে নিকট ভবিষ্যতে নতুন অনুমোদনের সম্ভাবনা কম। বিদ্যমান অ্যান্টিফাঙ্গাল চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ওষুধের মিথস্ক্রিয়া এবং রোগীর দীর্ঘস্থায়ী হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনীয়তা।
হ-এর প্রতিবেদনে শিশুদের জন্য পেডিয়াট্রিক ফর্মুলেশন এবং ক্লিনিকাল ট্রায়ালের অভাবের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। হু -এর ডায়াগনস্টিক রিপোর্টে দেখা গেছে যে, ছত্রাক সংক্রমণের জন্য বর্তমান পরীক্ষাগুলো প্রায়শই ধীর, ব্যয়বহুল এবং উন্নত পরীক্ষাগার অবকাঠামোর প্রয়োজন হয়। যার ফলে অনেকের কাছেই এগুলো অ্যাক্সেসযোগ্য নয়। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য হু বিশ্বব্যাপী নজরদারিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ওষুধ উন্নয়নের জন্য আর্থিক প্রণোদনা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা-ভিত্তিক চিকিৎসার গবেষণার আহ্বান জানাচ্ছে।
ছত্রাকজনিত রোগের প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা উন্নত করার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের, দ্রুত রোগ নির্ণয়ের সরঞ্জামেরও প্রয়োজন রয়েছে। ছত্রাকের সংক্রমণ ক্রমশ ব্যাপক আকার ধারণ করছে এবং বিদ্যমান ওষুধের বিরুদ্ধে এগুলো প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। তাই হু জোর দিয়ে বলছে যে, ক্রমবর্ধমান চিকিৎসা এবং রোগ নির্ণয়ের ব্যবধান পূরণ করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।