• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

বঙ্গবন্ধু মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ পাদ্ৰিদের অপপ্ৰচার থামাতে মাঠে নামেন

Usbnews.
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৬
বঙ্গবন্ধু মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ পাদ্ৰিদের অপপ্ৰচার থামাতে মাঠে নামেন
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক মাহমুদ শাহ কোরেশী ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বাংলাদেশের একটি জাতীয় পত্রিকাতে লিখেন – মুনশী মেহেরুল্লাহ এক অসামান্য ব্যক্তিত্ব

লেখক : সাবেক মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমি – একসময়ে উপযুক্ত তথ্যের অভাব ছিল প্রকট। তাই আমাদের অতীতের সমাজ নায়কদের সম্পর্কে লেখতে গেলে খুবই অসুবিধা হতো। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে আমার অভিসন্দর্ভের প্রয়োজনে ইউরোপে বসে মুনশী মেহেরুল্লাহ সম্পর্কে লিখতে গিয়ে আমি সমস্যায় পড়ে যাই। আমার হাতের কাছে রয়েছে বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত গ্রন্থে অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল হাই সাহেবের মূল্যবান আলোচনা ও বিলাতের গ্রন্থাগারে নোট করা শেখ হাবিবুর রহমান রচিত কর্মবীর মুনশী মেহেরুল্লাহ গ্রন্থের কিছু তথ্য। এখন হঠাৎ হাতে এলো মুস্তফা নূরউল ইসলামের ‘মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ’ শীর্ষক অতি ক্ষুদ্র, মাত্র ৪৬ পৃষ্ঠার কিন্তু প্রচুর তথ্যসমৃদ্ধ জীবনী গ্রন্থ। এটি কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড থেকে ১৯৭০ সালে প্রকাশিত মাত্র ১ (এক) টাকা দামের অত্যন্ত মূল্যবান বই।
মুস্তাফা সাহেবের লেখায় রেফারেন্সস্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে ড. আনিসুজ্জামানের প্রবন্ধ ‘মেহেরুল্লাহ ও জমিরুদ্দিন’ (সাহিত্য পত্রিকা শীত সংখ্যা ১৩৬৭-তে প্রকাশিত) এর কথা। যা হোক সে সময়ে আমি ফরাসি ভাষায় বেশ কিছু লিখেছিলাম (১৯৬৫/১৯৭১) যা এ বছর আল্লাহর মর্জি হলে ইংরেজিতে ছাপা হবে।
বিখ্যাত ফরাসি লেখক অঁদ্রে মালরো বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা প্রদান প্রসঙ্গে লিখেছিলেন, ‘তার কাছে বই যে শুধু প্রয়োজনীয় রূপে থাকবে তা নয়, একজন বুদ্ধিজীবীর জীবনে আসলে একটি আদর্শ তাকে ঘিরে রাখবে এবং তার জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করবে।’

বঙ্গবন্ধু মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ সর্ব প্রথম ব্রিটিশদের বলেছিলেন –

এক সভায় ভারতবর্ষের মানুষকে বলতেছিলো তোমাদের দেশের মানুষ-বাটু,লম্বা,খাটো,বড়,কালো,ধলো কেন। আর আমাদের দেশে সব সাদা। ইংরেজদের কথার উওরে তিনি বলেনঃ “শুওরক্য বাচ্ছা এক কিছিম হ্যায়- টাট্টু ক্যা বাচ্ছা হ্যারেক রকম হ্যায়”

মফস্বলের বাংলায় বসবাস করেও এ রকমের এক অসামান্য ব্যক্তিত্ব আমরা প্রত্যক্ষ করেছি মুনশী মেহেরুল্লাহর মধ্যে। খুব স্বল্প শিক্ষিত অনেকটা স্বশিক্ষিত এই মুনশী কিন্তু সমকালে তার স্বধর্মীদের ওপর এমন মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন যে, তাকে মুসলিম বাংলার রামমোহন আখ্যা দেয়া হয়েছিল (মোহাম্মদ আব্দুল হাই ও সৈয়দ আলী আহসান, বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পৃ. ১৬ ১২৫, ১২৮-১২৯)।
মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ (১৮৬১-১৯০৭) ধর্মীয় ঐতিহ্যসম্পন্ন এক দরিদ্র পরিবারে যশোহরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই তার পিতৃবিয়োগ ঘটে। কিন্তু মায়ের প্রভাবে মেহেরুল্লাহ বাল্যে বিদ্যালয়ের পড়াশোনা, পরে জ্ঞানচর্চায় উদ্বুদ্ধ হন। কৈশোরে ছ’বছর তিনি দুই মহানুভব ব্যক্তির আশ্রয়ে থেকে আরবি, ফার্সি ও উর্দু ভাষা আয়ত্তে আনার প্রয়াস চালান।

 

খ্রিস্টানদের সমস্ত অপপ্রচারের জবাব দিতে ছুটে চলেন বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা ও আসামের অলিতে গলিতে। এ সময় করকাতার নাখোদা মসজিদে আরো দুইজন আলেমের সাথে বৈঠক করে তিনি গঠন করেন ‘নিখিল ভারত ইসলাম প্রচার সমিতি’। সমিতির পক্ষ থেকে মেহেরুল্লাহকে বাংলা ও আসামে ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব দেয় হয়।

মুন্সী মেহেরুল্লাহ শুধুমাত্র প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর গভীর জ্ঞানতৃষ্ণা মেটানোর অভিপ্রায়ে নিজগৃহ ত্যাগ করেন। এ সময় তিনি মোসহাব উদ্দীন এবং মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন নামে দুজন শিক্ষকের কাছে আরবে- ফারসি ও উর্দু ভাষা শিক্ষালাভ করেন।

তাছাড়া ধর্ম বিষয়ে অধিকতর জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে সব সময় সচেষ্ট থাকেন।জীবিকা হিসেবে তিনি দর্জির কাজ গ্রহণ করেন এবং অল্প বয়সেই এতে দক্ষতা অর্জন করেন। এ পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে খ্রিস্টান ধর্মের প্রচার তাকে প্রভাবিত করে। তার আশপাশে অনেকেই খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু মেহেরুল্লাহ ধর্মান্তর গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। শুধু তাই নয়, তিনি খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারকদের পদ্ধতি অবলম্বন করে ইসলামের মাহাত্ম্য বর্ণনা করে হাটে-বাজারে বক্তৃতা করতে থাকেন। এ সময়ে ধর্মান্তরিত মুসলমান জন জমিরুদ্দিন ‘আসল কোরান কোথায়?’ শীর্ষক এক রচনা করে বিশ্বাসীদের মধ্যে হতাশার সূচনা করেন। তখন মুনশী মেহেরুল্লাহ সাপ্তাহিক ‘সুধাকর’ পত্রিকায় ‘ইশায়ী বা খ্রিস্টানী ধোঁকা ভাজন’ শীর্ষক এক দীর্ঘ প্রবাদ প্রকাশ করে (২০ চৈত্র, ২৭ চৈত্র, ২ বৈশাখ, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৩০০) জমিরুদ্দিনের জবাব দেন। তারপর ‘আসল কোরান সর্বত্র’ শীর্ষক ভিন্ন রচনায় এই বিতর্কের অবসান ঘটান। খোদ জমিরুদ্দিন রণে ভঙ্গ দিয়ে পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করেন। দু’য়ের মধ্যে বিশেষ বন্ধুত্ব হয় এবং মেহেরুল্লাহ জমিরুদ্দিনের ইসলাম গ্রহণ শীর্ষক পুস্তিকা প্রকাশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, একদা আর্থিক অনটনে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মেহেরুল্লাহর অর্থে এ ছাড়াও ইসমাইল হোসেন শিরাজীর ‘অনল প্রবাহ’ ও শেখ ফজলুল করিমের ‘পরিত্রাণ কাব্য’ প্রভৃতিও সেদিন প্রকাশ লাভ করতে পেরেছিল।
তবে মুনশী মেহেরুল্লাহর রচিত গ্রন্থাদি বা পুস্তিকাসমূহ সেকালে খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল কেননা তিনি খুব জোরালো ভাষায় ইসলামের পক্ষাবলম্বন করে বিরোধী কুৎসা ও অপপ্রচার প্রতিহত করেন। বর্তমানে তার সমস্ত রচনা প্রায় অদৃশ্য হয়ে গেলেও নানা সূত্রে তার রচিত নিন্মোক্ত রচনাবলীর নাম এবং কখনো কখনো কিছু স্মৃতি পাওয়া যায়
খ্রিস্টীয় ধর্মের অসারতা,
খ্রিস্টান-মুসলমানে তর্কযুদ্ধ
রদ্দে খ্রিস্টীয়ান ও দলিলোল ইসলাম
হিন্দু ধর্ম-রহস্য ও দেবলীলা,
মেহেরুল ইসলাম/ইসলাম রবি,
বিধবা গঞ্জনা ও বিষাদ-ভা-ার,
পাঞ্জেনামা, সাহেব মুসলমান,
জোওয়াবোন্নাছারা,
বহু ঈশানম-ল এবং চার্লস ফ্রেঞ্চের এসলাম গ্রহণ!
জন জমিরুদ্দিনকে লেখা (১৩০৪ সালের ১৮ বৈশাখ) একটি পত্রে মেহেরুল্লাহ বিনয়ের সঙ্গে লেখেন :
“যদিও আমি ভাল বাঙ্গালা জানি না; তথাপি ক্রমে কয়েকখানি পুস্তক-পুস্তিকা প্রকাশ করিয়াছি। তাদ্বারা সমাজের কতদূর উপকার সাধিত হইয়াছে, বলিতে পারি না, তবে এই মাত্র জানি যে এখন আমি খোদার ফজলে সমুদয় বঙ্গীয় মুসলমানের ¯েœহ আকর্ষণ করিয়াছি। আমি দরিদ্র লোকের সন্তান হইলেও আমার আর কোনো বিষয়ের অভাব অনুভব করিতে হয় না।”
‘হিন্দু-ধর্ম-রহস্য ও দেবলীলা’ গ্রন্থে তিনি লিখেছেন :
“ধরিতে গেলে, বর্তমান ক্ষেত্রে হিন্দু ও মুসলমান এই সম্প্রদায়ই ভারতের প্রধান অধিবাসী। বাস্তবিক আমাদের এই দুয়ের মধ্যে বিবাদ-বিসম্বাদ হওয়াই সর্ব প্রকার অমঙ্গলের কারণ হইয়াছে। আমার ধর্মের বিভিন্নতাই সে বিবাদের মূল। হিন্দু যাহাকে পুণ্য, মুসলমান তাহাকে পাপ ও মুসলমান যাহাকে পুণ্য, হিন্দু তাহাকে পাপজ্ঞানে একজন অন্যজনকে ঘৃণা ও হিংসার চক্ষে দেখিতেছেন। অতএব, আসুন, আমরা অকপট মনে, আমাদের বিবাদীয় বিষয়গুলোর সূক্ষ্মালোচনা দ্বারা মীমাংসা এবং কল্পনার অনুসরণ পরিত্যাগপূর্বক প্রকৃত সত্যানুরাগী হইয়া পরস্পর বিবাদ নিষ্পন্ন করি।”
মুনশী মেহেরুল্লাহর অসামান্য ব্যক্তিত্ব উনিশ শতকের শেষপাদে মুসলমান সম্প্রদায়কে বিধর্মী প্রচারণা থেকে উদ্ধার করেছে এবং হানাফী মতাবলম্বীদের শক্ত অবস্থানে উন্নীত করেছে।

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে জানা যায় –

মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ (জন্ম: ২৬ ডিসেম্বর ১৮৬১ – মৃত্যু: ৭ মে ১৯০৭) ব্রিটিশ ভারতের বাঙালি ইসলাম প্রচারক, তুলনামূলক ধর্মতাত্ত্বিক ও ব্যবসায়ী ছিলেন। মেহেরুল্লাহর আনুষ্ঠানিক লেখাপড়া কতটুকু ছিল সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না, তবে তাঁর লেখা প্রতিটি বই এতই পান্ডিত্যপূর্ণ ও সুলিখিত যে,বিজ্ঞ পাঠকমাত্রকেই তা অভিভূত করে ফেলে। তার তীক্ষ্ণবুদ্ধি এবং প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের সাহায্যে তৎকালীন উচ্চ শিক্ষিত এবং সরকারি মদদপুষ্ট খ্রিষ্টান পাদ্রিদের ধর্ম প্রচারের গতিকে বিঘ্নিত করেছিলেন। তিনি ইসলাম ধর্ম সহ বিভিন্ন ধর্ম বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেছেন। ইসলাম, দেশ ও দেশের মানুষের জন্য অসামান্য অবদানের জন্য রাজশাহীর অধিবাসী লেখক ও সমাজ সংস্কারক মীর্জা ইউসুফ আলী সর্বপ্রথম মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ কে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন।

তথ্যসূত্র –
শতাব্দীর দর্পন, ফজলুর রহমান, পৃষ্ঠা ৫২, প্রকাশ ১৯৯৫।
মুহম্মদ আবূ তালিব (ডিসেম্বর ১৯৮৩)। মুনশী মোহাম্মদ মেহেরউল্লাহ: দেশ কাল সমাজ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান। ১৯৯৭। পৃষ্ঠা ২৯৩-২৯৪।
“মুনশী মেহেরুল্লাহ এক অসামান্য ব্যক্তিত্ব”। DailyInqilabOnline (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬।

জন্ম ও শৈশব
মেহেরুল্লাহ ১৮৬১ সালে যশোরের ছাতিয়ানতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। যশোর শহরে সামান্য দর্জিগিরি করে জীবকা নির্বাহ করতেন।[৬] এ সময় খ্রিষ্টান পাদ্রিরা ইসলাম ধর্ম বিরোধী প্রচারে এবং ইসলামের কুৎসা রটনায় তৎপর ছিল। মুন্সী জমির উদ্দিন নামে এক মুসলমান, পাদ্রিদের প্ররোচনায় পড়ে খ্রিষ্টানধর্ম গ্রহণ করে এলাহাবাদের ডিভিনিটি কলেজের উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে তিনি রেভারেন্ড জন জমির উদ্দিন নাম ধারণ করেন। পাদ্রি জমির উদ্দিন ইসলাম ও কোরআনের বিরুদ্ধে লিখতে শুরু করেন। তখন মুনশী মেহেরুল্লাহ সাথে এক বিতর্কে তিনি পরাজিত হয়ে পুনরায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় তিনি নিরপেক্ষ থাকেন।[৭] তিনি ১৯০৭ সালে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ইংরেজরা এক সভায় ভারতবর্ষের মানুষকে বলতেছিলো তোমাদের দেশের মানুষ-বাটু,লম্বা,খাটো,বড়,কালো,ধলো কেন। আর আমাদের দেশে সব সাদা। ইংরেজদের কথার উওরে তিনি বলেনঃ “শুওরক্য বাচ্ছা এক কিছিম হ্যায়- টাট্টু ক্যা বাচ্ছা হ্যারেক রকম হ্যায়”

বই
মুনশি মেহেরুল্লাহ তার তাবলিগি মিশনের সহায়ক হিসেবে যে সব বই লিখেছেন তা হল:

খৃষ্টীয় ধর্মের অসারতা
মেহেরুল ইসলাম
বিধবা গঞ্জনা
হিন্দু ধর্ম রহস্য বা দেবলীলা (১৯০৮)
রদ্দে খৃষ্টান ও দলিলুল ইসলাম
পান্দেনামা
জওয়াবে নাসারা।
মৃত্যুর পর ১৯০৯ সালে তৎকালীন সরকার তাঁর বিধবা গঞ্জনা ও হিন্দু ধর্ম রহস্য বই দুটি বাজেয়াপ্ত করে।

বর্তমানে সুহৃদ প্রকাশন (৪৫, বাংলাবাজার, ঢাকা) হতে দু’খণ্ডে মুন্সী মেহেরউল্লা রচনাবলী প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও মুন্সী মেহের উল্লাহ রিসার্চ একাডেমি হতেও তার রচনাবলী প্রকাশিত হয়েছে।

ইসলামিক কাজসমূহ
বিপুলভাবে ইসলামিক প্ৰচারকাজ চালান। এক ঈদগাহে হানাফি ও অন্যান্য মাজহাবের বিরোধ নিরসনে উদ্যোগী হোন। এছাড়া পাদ্ৰিদের অপপ্ৰচার থামাতে মাঠে নামেন।

অন্যান্য গবেষণায় দেখা যায় – মেহেরুল্লাহ দার্জিলিং থেকে তল্পিতল্পাসহ ফিরে এলেন যশোর। আবারো দড়াটানায় দেখা গেল তাকে। তবে দর্জি হিসেবে নয়, তুখোড় বক্তা হিসেবে। এরপরই তিনি খ্রিষ্টানদের অপপ্রচারের দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার জন্য ছুটলেন বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা ও আসামের অলিতে গলিতে। বক্তৃতা করতে লাগলেন, আরো বেগবান করার জন্য কলকাতার নাখোদা মসজিদে প্রখ্যাত মনীষী ও ইসলাম প্রচারক মুন্সী শেখ আবদুর রহীম, মুন্সী রিয়াজুদ্দীন আহমদের মত ব্যক্তিত্বদের সাথে বসলেন। ঐ বৈঠকেই গঠিত হয় ‘নিখিল ভারত ইসলাম প্রচার সমিতি’। সমিতির পক্ষ থেকে মুন্শী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহর ওপর দায়িত্ব দেয়া হয় বাংলা ও আসামে ইসলাম প্রচারের।

মুন্শী মেহেরুল্লাহর আকর্ষণীয় ও যুক্তিপূর্ণ বক্তৃতায় মানুষ এতই আমোদিত হলো যে, দলে দলে অমুসলিমরা মুসলমান হতে লাগলো। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ তার সভা-সমাবেশে উপস্থিত হতো। যাদের মনে নানা দুর্বলতা ছিল, ঘুণে ধরে নষ্ট করেছিল সেসব মনের মানুষগুলো নিজেদেরকে ঠিক ঠাক করে নিলো।  সেই সময়কার ইসলাম ও মুসলমানদের সব থেকে বড় শত্রু জন জমিরুদ্দীন মুন্শী মেহেরুল্লাহর কারণেই পুনরায় মুসলমান হন। এ সময় তিনি সারা উপমহাদেশে এত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন যে, তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তিনি ছিলেন একান্তভাবেই মানুষের হৃদয়ের বন্ধু। অসাধারণ বক্তা হওয়ার কারণে তাঁকে ‘বাগ্মী কুল তীলক’ উপাধিতেও ভূষিত করা হয়।

তিনি যে শুধু অসাধারণ বক্তাই ছিলেন তা কিন্তু নয়। তাঁর কলমের ধার ছিল দু’ধারী খোলা তলোয়ারের মত। তিনি খ্রিষ্টান লেখক জন জমিরুদ্দীনের নানা ঔদ্ধত্যপূর্ণ লেখার যুক্তিপূর্ণ লিখিত উত্তর দেন। যা সেই সময়কার পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া তিনি জাতির কল্যাণের জন্য দশটার মতো গ্রন্থ রচনা করেন। যা তাঁর জীবিত অবস্থায় বহুবার প্রকাশিত হয়।

এ ব্যাপারে তিনি নিজেই বলেছেন, ‘যদিও আমি ভালো বাংলা জানি না তথাপি ক্রমে ক্রমে কয়েকখানি পুস্তক-পুস্তিকা প্রকাশ করিয়াছি, তদ্বারা সমাজের কতদূর উপকার সাধিত হইয়াছে বলিতে পারি না। তবে এই মাত্র জানি যে, এখন আমি খোদার ফজলে সমুদয় বঙ্গীয় মুসলমানের স্নেহ আকর্ষণ করিয়াছি। আমি দরিদ্র লোকের সন্তান হইলেও আমাকে আর কোন বিষয়ের অভাব অনুভব করিতে হয় না।’

তাঁর লিখিত গ্রন্থগুলোর নাম
ষ খ্রিষ্টীয় ধর্মের অসারতা (প্রকাশকাল-১৮৮৬)
ষ মেহেরুল এছলাম (প্রকাশকাল-১৮৯৫)
ষ রদ্দে খিষ্টান ও দলিলোল এছলাম (প্রকাশকাল-১৮৯৫)
ষ জওয়াবোন্নাছারা (প্রকাশকাল-১৮৯৭)
ষ বিধবাগঞ্জনা ও বিষাদভাণ্ডার (প্রকাশকাল-১৮৯৭)
ষ হিন্দু ধর্ম রহস্য ও দেবলীলা (প্রকাশকাল-১৯০০)
ষ পন্দোনামা (প্রকাশকাল-১৯০৮)
ষ শ্লোকমালা (প্রকাশকাল-১৯১০)
ষ খ্রিষ্টান মুসলমান তর্কযুদ্ধ (প্রকাশকাল জানা যায়নি)
ষ মানবজীবনের কর্তব্য (রচনাকাল ১৩১১ বঙ্গাব্দ, অপ্রকাশিত)