একখানা সুন্দর মুখ তা যদি মেছতায় ঢাকা থাকে তবে তা যতই সুন্দর হোক না কেন তাকে সুন্দর বলা যায় না। বিশেষ করে তা যদি মহিলাদের ক্ষেত্রে হয় তবে তো কথাই নেই। সরাসরি ছুটে আসা ডাক্তারের কাছে তাদের সবারই প্রায় একই প্রশ্ন? এটা ভালো হবে তো, ডাক্তার সাহেব? মুখের কালো দাগ মানেই মেছতা নয়। তাই সব কালো দাগই যে ভালো হবে- এটাও বলা সঙ্গত নয়। তবে বেশির ভাগ মেছতার চিকিৎসায়ই পজিটিভ ফলাফল পাওয়া যায়।
মেছতার কারণ: অনেক ক্ষেত্রেই মেছতার সুস্পষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে হরমোনের ব্যাপার একটি অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি কিংবা ইস্ট্রোজেন হরমোন গ্রহণ, গর্ভাবস্থা, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি মেছতার অন্যতম কারণ।
জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি যদিও মেছতার একটি অন্যতম কারণ, তবে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলেই মেছতা হবে- এমন কোনো কথা নেই। আবার জীবনে একদিনও এই বড়ি খাননি অথচ তাদের মুখেও মেছতার দাগ হতে দেখা গেছে। তবে এ কথা সত্যি, মেছতার দাগ আছে এমন কেউ চিকিৎসা করাচ্ছেন অথচ জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়া বন্ধ করেননি; তার ক্ষেত্রে এর থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম।
মেছতার প্রকারভেদ:
একে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা-
১. এপিডারমাল: যা ত্বকের বহিঃস্তরের উপরিস্তরে বিদ্যমান থাকে।
যা চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলা সম্ভব।
২. ডারমাল: যা ত্বকের বহিঃস্তরের নিচের স্তরে বিদ্যমান থাকে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসায় খুবই ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
৩. মিশ্রিত: অর্থাৎ যা ত্বকের অন্তঃস্তর ও বহিঃস্তরজুড়ে বিদ্যমান থাকে। এই ধরনের মেছতায় অনেক সময় ফলাফল ভালো আসে না।
মেছতা কোন স্থানে হয়:
সাধারণত গালের ওপরের অংশেই এটা বেশি হয়ে থাকে। তবে চোয়ালে, নাকের ওপরে ও কপালেও হতে দেখা যায়। মেছতা ত্বকের কোন স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত, তা Woods Lamp-এর মাধ্যমে পরীক্ষা করে ধারণা পাওয়া যায়।
# একধরনের মেছতা চিকিৎসায় সম্পূর্ণভাবে ভালো হয়ে যায়।
# আর একধরনের মেছতা আছে যা চিকিৎসা দিলে প্রায়ই সেরে যায় তবে কিছুটা কালো ভাব থেকে যায়।
# আর একধরনের মেছতা আছে যার সংখ্যা খুবই কম, তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসায় তেমন ফলাফল আসে না।
মেছতার গতানুগতিক চিকিৎসা:
এতদিন ধরে প্রায় সব চর্মরোগ বিশেষজ্ঞই হাইড্রোকুইননকেই মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে মনে করতেন এবং যে কেউই মেছতার ক্ষেত্রে এটিকেই লিখে থাকতেন। এর সঙ্গে ট্রেটিনয়েন এবং মৃদু স্টেরয়েডের সংযুক্ত ব্যবহারে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়।
তবে আমাদের দেশের এক শ্রেণির সাধারণ চিকিৎসক এবং অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা নিজেরাই মেছতার জন্য বেটনোভেট মলম মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর ব্যবহার করেন এমন রোগীর সংখ্যাও অনেক। এটি একটি দারুণ অযৌক্তিক ও ক্ষতিকর কাজ। মুখে বেটনোভেট দীর্ঘদিন মাখলে মুখের ত্বকের জন্য যে সেটা কতটা ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু একটি কথাই বলা যায় যে, দয়া করে এই কাজটি কেউ করবেন না।
বর্তমান ও আধুনিক চিকিৎসা:
হাইড্রোকুইনন বর্তমানেও ব্যবহার করা হয় এবং এর সঙ্গে স্টেরয়েড মিশিয়ে ব্যবহার করলে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়। ক্ষেত্রবিশেষে ট্রেটিনয়েনও খুবই উপকারী। তবে বর্তমানে Kojic acid I Azelic acid-এর ব্যবহারও শুরু হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এতে বেশ সুফলও পাওয়া যাচ্ছে।
তবে একটি ব্যাপার খুব স্পষ্ট করে বলা দরকার। এসব ওষুধ ত্বকের রঞ্জক পদার্থ ধ্বংস করে। কিন্তু ত্বকের কালো দাগ যদি সূর্যের আলোক রশ্মির সংস্পর্শে আসে তবে সেক্ষেত্রে চিকিৎসা করেও তেমন সন্তোষজনক ফলাফল আনা সম্ভব নাও হতে পারে। তাই চিকিৎসার পাশাপাশি, অর্থাৎ চিকিৎসা চলাকালীন অবশ্যই দিনের বেলায় বাইরে চলাচলের সময় সানব্লক ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে বাইরে যাওয়ার অন্তত আধাঘণ্টা আগে এই সানব্লক মুখে মেখে নিতে হবে। মেছতার চিকিৎসায় সর্বশেষ ও কার্যকর সংযোজন হচ্ছে মাইক্রোডার্মোঅ্যাব্রেশন। একটি যন্ত্রের সাহায্যে ত্বকের সূক্ষ্ম ও সর্বোপরি স্তরটি তুলে ফেলা হয়। এটি একটি যন্ত্রের সাহায্যে করা হয় এবং এতে কোনো রকম ব্যথা পাওয়া যায় না। এই অবস্থায় মেছতার ওষুধ প্রয়োগ করলে ওষুধের কার্যকারিতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায় এবং মেছতার ক্ষেত্রে আরও দ্রুত ভালো ফল পাওয়া যায়। কেমিক্যাল পিলিং, অর্থাৎ কিছু কেমিক্যালস প্রয়োগ করেও মেছতার চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে দাগ হতে পারে বিধায় যারা এ বিষয়ে সিদ্ধহস্তের নয়, তাদের দিয়ে এটি না করানোই ভালো।