গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না পাওয়া পর্যন্ত মধ্যরাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত ১০টা থেকে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। এতে জাতীয় নাগরিক পার্টি, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, জুলাই ঐক্য, ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন।
এ দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশ-র্যাব অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান করেন। তারা নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়।
অবস্থান কর্মসূচিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। তারমধ্যে ‘ব্যান করো ব্যান করো, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’, ‘দিল্লি না, ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘গোলামি না আজাদী, আজাদী আজাদী’ ‘নাহিদ, আক্তার আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘একটা একটা ছাত্রলীগ ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’, ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও ঘুরিয়ে দাও’, ‘২৪ বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, প্রভৃতি বলে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচির কারণে যমুনার সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামীলীগ নো মোর, খুনি লীগের ঠিকানা এ বাংলায় হবে না, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে, ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীদের অবস্থানকে কেন্দ্র করে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনের সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে পুলিশ। সেখান দিয়ে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
কর্মসূচিতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে ইন্টেরিমকে আর সময় দিতে রাজি নই, লাশ হয়ে ফিরব না হয় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
কর্মসূচিতে এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, মনিরা শারমীন, সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সদস্যসচিব জাহিদ আহসান, জুলাই ঐক্যের এবি জুবায়ের, মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ প্রমুখ উপস্থিত আছেন।
এর আগে আজ রাত ১০টা থেকে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়ে হাসনাত ফেসবুক পোস্টে জানান, গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না পাওয়া পর্যন্ত আজ রাত ১০টা থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলবে। যার এজেন্ডায় গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট বয়ান নাই, তার সঙ্গে আমরা নাই।
এদিকে সারজিস আলম একটি ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, হাসনাতের সঙ্গে যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিন। ৯ মাসে সোজা আঙ্গুলে কাজ হয়নি। এখন সময় আঙুল বাঁকা করার।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা সংলগ্ন এলাকা থেকে একটি মিছিল নিয়ে প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় মহাসড়কের উভয় দিকে যানজটের সৃষ্টি হয়।
এ সময় তারা ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ কর, করতে হবে, আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে। প্রায় ৩০ মিনিট সড়ক অবরোধ করে রাত দেড়টায় অবরোধ উঠিয়ে নেয় শিক্ষার্থীরা।
গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, যারা আওয়ামী লীগকে পরিশোধিত করে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা যারা করবে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের বিরুদ্ধেও লড়াই করব। আমরা জুলাইয়ের যোদ্ধারা এখনো আছি প্রয়োজনে আবারো জীবন দেব কিন্তু আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেব না।
জাবি শাখা ছাত্র শিবিরের অফিস সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, যে আওয়ামী লীগ আমার ভাইদের বুকের ওপর গুলি করেছে, যে আওয়ামী লীগ আমার শিশুদের বুকে গুলি করেছে, যে আওয়ামী লীগ আমার বোনদের বেদম পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে সেই আওয়ামী লীগের এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার নাই। অনতিবিলম্বে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
জাবি শাখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ৫ আগস্টেই এ দেশের ছাত্র-জনতা রায় দিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ আর রাজনীতি করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ ফিরবে কিন্তু তারা বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য ফিরবে, রাজনীতি করার জন্য নয়।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাইয়ের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু তারা যদি জুলাই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে না পারে তাহলে তাদেরকেও ক্ষমতা থেকে টেনে নামানো হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা পূরণে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
আ.লীগের বিষয়ে আজ রাতেই ফয়সালা হবে: নাহিদ ইসলাম
আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের ব্যাপারে আজ রাতেই ফয়সালা হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। মুজিববাদীরা যেন বাংলার মাটিতে আর কখনো রাজনীতি করতে না পারে সেজন্য সবাইকে রাজপথে নামার আহ্বান জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত সাড়ে ১০টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টো এ মন্তব্য করেন তিনি।
নাহিদ ইসলামের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল:
আমরা দেখতে পাচ্ছি ফ্যাসিস্ট ও খুনী আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে টালবাহানা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। আসামিদের জামিন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকারের রাষ্ট্রপতিকে চোখের সামনে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে। বিচার প্রশ্নে সরকারের প্রতি আমাদের অনাস্থার যায়গা তৈরি হইছে।
জুলাইয়ে আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল খুনীদের বিচার। এবং মুজিববাদীরা বাংলার মাটিতে আর কখনো রাজনীতি করতে পারবে না। আজ রাতেই ফয়সালা হবে আওয়ামী লীগের বিষয়ে।
আওয়ামী লীগের বিচার, নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না আসা পর্যন্ত আমরা রাজপথ থেকে উঠবো না।
সবাই চলে আসুন। জুলাইয়ে সকল শক্তি, সকল শহীদ পরিবার ও আহতদের আহ্বান জানাই রাজপথে নেমে আসুন। বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।