ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে কী ক্ষতি হয়? কী করবেন? জেনে নিন বিস্তারিত!
আমাদের দেহে প্রতিনিয়ত নানা রকম রাসায়নিক বিক্রিয়া চলে, যার একটি হচ্ছে পুরিন (Purine) নামক পদার্থ ভাঙার প্রক্রিয়া। এই পুরিন ভাঙার সময় যে বর্জ্য পদার্থ তৈরি হয়, সেটিই হলো ইউরিক অ্যাসিড (Uric Acid)।
❗ কিন্তু যখন এই ইউরিক অ্যাসিড রক্তে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে জমা হতে থাকে, তখন তা নানা সমস্যা তৈরি করতে পারে। চলুন জেনে নিই ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে কী হয়, এর লক্ষণ, গ্রহণযোগ্য মাত্রা ও করণীয়।
📊 ইউরিক অ্যাসিডের গ্রহণযোগ্য মাত্রা কত?
➡ পুরুষদের জন্য: 3.4 – 7.0 mg/dL
➡ নারীদের জন্য: 2.4 – 6.0 mg/dL
> এর চেয়ে বেশি হলে তা হাইপারইউরিসেমিয়া (Hyperuricemia) বলে ধরা হয়।
ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে কী ক্ষতি হয়?
গেঁটেবাত (Gout):
ইউরিক অ্যাসিড রক্তে বেশি হলে তা গেঁটে (জোড়ে) জমে গিয়ে প্রচণ্ড ব্যথা, ফোলাভাব ও লালচে রঙের সৃষ্টি করে।
কিডনি স্টোন (Renal Stone):
অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড কিডনিতে জমা হয়ে পাথর তৈরি করতে পারে।
কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস:
দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড কিডনির কার্যক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। জয়েন্টের ক্ষয়:
দীর্ঘদিন ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে থাকলে জয়েন্টে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
🧪 ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার কারণ::
✅ উচ্চ প্রোটিন বা পুরিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া (যেমন: লাল মাংস, কলিজা, শুঁটকি, মাশরুম, ডাল, মাছ ইত্যাদি)
✅ অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান
✅ ওজন বেড়ে যাওয়া
✅ ডিহাইড্রেশন (পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া)
✅ কিছু ওষুধ (যেমন: ডাইউরেটিক্স, অ্যাসপিরিন)
✅ জেনেটিক কারণ
💡 ইউরিক অ্যাসিড কমাতে করণীয়::
✅ পানি বেশি করে পান করুন — দিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস।
✅ পুরিনসমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলুন — যেমন: লাল মাংস, ইনস্ট্যান্ট খাবার, মাশরুম, শুঁটকি।
✅ ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
✅ অ্যালকোহল ও চিনিযুক্ত পানীয় পরিহার করুন
✅ ফল ও সবজি বেশি খান — বিশেষ করে চেরি, আপেল, শসা, গাজর ইত্যাদি উপকারী।
✅ ব্যায়াম করুন নিয়মিত
✅ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন — যেমন: Allopurinol, Febuxostat (নিজে থেকে খাবেন না!)।
📌 লক্ষণ দেখে সতর্ক হোন
🔹 হঠাৎ করে পায়ের বুড়ো আঙুলে ব্যথা
🔹 জয়েন্টে ফোলাভাব ও ব্যথা
🔹 প্রস্রাবে জ্বালা বা অসুবিধা
🔹 গাঁটে গাঁটে ব্যথা
এগুলো ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার সাধারণ উপসর্গ হতে পারে।
✅ উপসংহার
ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে না রাখলে তা দীর্ঘমেয়াদে ভয়ংকর ক্ষতি করতে পারে — বিশেষ করে কিডনি ও জয়েন্টের। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।