ইরানের মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্রের হামলায় দিশেহারা কট্টর ইসলাম বিদ্বেষী বেনিয়মিন নেতানিয়াহুর দেশ ইসরায়েল। বিশ্বের অঘোষিত পরাশক্তি ইরানের পরমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে যেনো ভিমরুলের চাকা হানা দিয়েছে ওরা। এখন ইরানের পাল্টা মিসাইল হামলা সামাল দিতে বিশ্বের বিখ্যাত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমসহ তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রীতিমতো ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলের শক্তিশালী এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নাকানিচুবানি খাওয়ানো ইরানের ১০০ কোটি টাকা মূল্যের এক একটি সেজ্জিল মিসাইল যেনো এক্ষেত্রে বীরের ভূমিকা পালন করেছে।
আধুনিক নিজস্ব প্রযুক্তিতে বিশেষ এই মিসাইল তৈরি করেছে ইরান। যার মূল্যও আকাশ ছোঁয়া। এর এক একটির মূল্য ৮.১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় ১০০ কোটি টাকা। ইরানের তৈরি বিশেষ এই ক্ষেপণাস্ত্র দূরপাল্লার লক্ষ্যবস্তুতে তাৎক্ষণিক ধ্বংস সাধনে সক্ষম। ইরান তাদের সর্বাধুনিক ও ভয়ঙ্কর অস্ত্র ‘সেজ্জিল’ ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবহার করে ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় আঘাত হানিয়েছে। যাতে শতভাগ সফল এই মিসাইল।
সেজ্জিল হল একটি দ্বি-স্তরবিশিষ্ট, সলিড ফুয়েলযুক্ত মিডিয়াম রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিসাইল। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ মিটার, ওজন প্রায় ২৩ টন, এটি ৭০০ কেজি বিস্ফোরক বহন ক্ষমতাসম্পন্ন আর এর গতি বেশ চমকজাগানিয়া স্বাভাবিকভাবে এটি ৬,১৭৪ কিমি/ঘণ্টা বেগে ছুটে চলে কিন্তু সর্বোচ্চ দশ হাজার কিমি প্রতি ঘন্টায়ও গতি তুলতে সক্ষম এটি। ইরানের তৈরি বিশেষ এই ক্ষেপণাস্ত্র ২৫ হাজার কিমি পর্যন্ত পথ পাড়ি দিতে পারে। সলিড ফুয়েল প্রযুক্তির কারণে এটি দ্রুত মোতায়েনযোগ্য, কম সময়ের মধ্যে উৎক্ষেপণ সম্ভব এবং সহজে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরানো যায়। আর এর গতির কারণে রাডার সিস্টেম ফাঁকি দিতে বেশ পটু এটি। ভবন ধ্বংসের পাশাপশি ভূগর্ভস্থ ঘাঁটির লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল ভাবে আঘাত হানতেও এর জুড়ি মেলা ভার।
চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে ইরান ১৫টির বেশি সেজ্জিল মিসাইল নিক্ষেপ করে, যার মধ্যে সবগুলোই ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবসহ বিভিন্ন বড় বড় শহরে আঘাত হানে। এই মিসাইলের আঘাতে তেল আবিবে একটি আবাসিক ভবন ধসে পড়ে নিহত হয় অন্তত ৯ জন ইহুদি। এছাড়া হার্জেলিয়া, বাত ইয়ামসহ হাইফাতে কয়েকটি সামরিক রেডার সিস্টেম পুরোপুরি ধ্বংস হয় সেজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে। এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র সেজ্জিলের আঘাতেই ইসরায়েলে ৩০ জনের বেশি নিহতের খবর পাওয়া যায়। এছাড়া আহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ২ শতাধিকেরও বেশি। এর আঘাতে ১০টির বেশি ভবন ভূমিতে মিশে যায়। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয় ৫০টির বেশি ভবন।
ইরানের ৭০০ কোটি টাকার এই ভয়ঙ্কর মিসাইল শুধু প্রযুক্তির জয় নয়, ইরানের যুদ্ধ কৌশলেরও প্রমাণ। সেজ্জিল এখন ইরানের প্রতিরোধ নয়, আক্রমণের প্রতীক। ব্যালিস্টিক মিসাইল ও শাহেদ-১০৭ এর পর সেজ্জিল সামনে এনে এবার পুরো বিশ্বকে যেনো আবারো দেখিয়ে দিলো ইরান কি করতে পারে।