• ১০ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৫ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

ফিলিস্তিনে গণহত্যায় ‘ক্ষুধা’কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল : অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

Usbnews.
প্রকাশিত জুলাই ৩, ২০২৫
ফিলিস্তিনে গণহত্যায় ‘ক্ষুধা’কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল :  অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় গণহত্যা চালানোর জন্য মানুষকে অনাহারে রাখাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে জায়ানবাদী ইসরায়েল। এমন মন্তব্যই করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এছাড়া গাজায় শিশুদের জন্য পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল এখনো সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে ‘ক্ষুধা’কে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, যা ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান গণহত্যার অংশ।

লন্ডনভিত্তিক এ সংগঠনটি বলেছে, গাজার পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ, বিশেষ করে শিশুদের জন্য। টানা বোমাবর্ষণ, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, খাদ্য, পানি ও ওষুধের সংকট—সব মিলিয়ে মানবিক বিপর্যয় চরমে।

অ্যামনেস্টির সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস কালামার্ড বলেছেন, ‘ইসরায়েল যে জীবনধারণের মৌলিক চাহিদাগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করছে—তা আসলে শারীরিকভাবে ধ্বংস করে ফেলার এক কৌশল।’ তার ভাষায়, এ অবস্থা গণহত্যার সংজ্ঞার মধ্যেই পড়ে।

অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সহায়তা নিতে গিয়ে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছে—কখনো ত্রাণ বিতরণ পয়েন্টে, কখনো সাহায্যের খোঁজে যাওয়ার পথেই। তাদের ভাষায়, ‘ইসরায়েলের পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ত্রাণ ব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে একটা ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ক্ষুধার্ত মানুষ সেই ফাঁদে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছেন।’

প্রতিদিন শত শত সাহায্যবাহী ট্রাক গাজার বাইরে অপেক্ষা করলেও ইসরায়েলের অনুমতি না মেলায় সেগুলো ঢুকতে পারছে না।

এদিকে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের পর এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৬ শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গেছে বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। আরো বহু শিশু অসুখে ভুগে মারা গেছে, যেগুলো প্রতিরোধযোগ্য ছিল যদি সেখানে খাবার ও ওষুধ থাকত।

উদাহরণ হিসেবে ৪ মাস বয়সি জিনান ইসকাফি নামে এক শিশুর মৃত্যুর তথ্য তুলে ধরা হয়। ছোট্ট এই শিশুটি দুধের অভাবে অত্যন্ত পানিশূন্যতা ও অপুষ্টিতে মারা যায়। গাজা শহর ও খান ইউনিসের হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন যে শিশুরা স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আসছে, তাদের প্রায় ১৫ শতাংশের মধ্যে গুরুতর বা মাঝারি অপুষ্টির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘প্রাথমিক চিকিৎসার পরেও অনেক শিশু আবার অসুস্থ হয়ে ফিরছে, কারণ ক্যাম্পের পরিস্থিতি আরো খারাপ।’

এছাড়া চিকিৎসকরাও বিপদে রয়েছেন। নিজেরাই বাস্তুহারা ও অপুষ্টিতে ভোগা অনেক চিকিৎসক তাদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন। অ্যামনেস্টি বলেছে, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শুধু ইসরায়েলের গণহত্যা থামাতেই ব্যর্থ নয়, বরং তারা এই ধ্বংসযজ্ঞ চলতে দিচ্ছে।’

সংস্থাটি জোর দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলের জন্য সব ধরনের সামরিক সহায়তা বন্ধ করতে হবে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং যেসব ইসরায়েলি কর্মকর্তা অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে।