• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

নযীর আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রথম শিকার

Usbnews.
প্রকাশিত আগস্ট ১৬, ২০২০
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

 

নযীর আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রথম শিকার । কলকাতা কেন্দ্রিক বর্ণহিন্দুদের সাথে দীর্ঘকালের সাংস্কৃতিক বৈরিতার পটভূমিতে ১৯৪৩ সালের৩১ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে একটি অনুষ্ঠানে মেজরিটি হিন্দু ছাত্ররা অস্ত্র- শস্ত্র নিয়ে নিরস্ত্র মুসলমান ছাত্রদের ওপর হামলা চালায় । ২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রের মাঝে মারামারি চলাকালীন তিনি তাদের থামাতে এগিয়ে যান এবং হিন্দু ছাত্রদের ছুরিকাঘাতে শহীদ হন। তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু তিনি সেখানে মৃত্যু বরন করেন।

শহীদ নযীরের স্মৃতি রক্ষায় সিদ্দিকবাজারে ‘শহীদ নযীর লাইব্রেরি’ নামে একটি পাঠাগার স্থাপিত হয়েছিল। শহীদ নযীরের হত্যাকান্ডের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির বিশেষত হিন্দু ও মুসলমান ছাত্রসমাজের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

মি: গান্ধীকে বাহ্যত. অনেকটা ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতন্ত্রী ও উদারমনা মনে হলেও আমরা বাংলা ও আসামের অধিবাসীরা তার সে উদারতা দেখতে পাইনি। বিহারে যখন বিরাট দাঙ্গায় শত শত হাজার হাজার মুসলমান নিধন চলছিল তখন তিনি আমাদের নোয়াখালীতে অল্প ক’জন হিন্দুভক্ত নিধনের প্রতিবাদে নোয়াখাীলতে এসেছিলেন শান্তি মিশনে। বাংলার তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তার এ মনমানসিকতার নিন্দা জানিয়ে যথারীতি পত্র লিখে তাঁকে বিহারের অধিক সংখ্যক দাঙ্গা আক্রান্ত লোকদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে দিলেন। কিন্তু তিনি তা গ্রাহ্য না করে নোয়াখালীতেই পড়ে থাকলেন।

ইংরেজরা রাষ্ট্রে হিন্দুদেরই বেশি বেশি সুযোগ দিয়েছে, আর মুসলমানদের বঞ্চিত করে রেখেছে। এই বিভেদ রেখাটি ধরেই ১৯০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে স্যার সলিমুল্লাহর আহ্বানে ঢাকায় মুসলিম লীগের জন্ম হয়। এই মুসলিম লীগ মুসলমান জমিদার, উচ্চবিত্ত মুসলমানদের উদ্যোগে গড়ে উঠলেও তা সকল শ্রেণীর মুসলমানের সমর্থন লাভ করে। তবে একই সময়ে হিন্দু মহাসভা নামে হিন্দু মৌলবাদী সংগঠনও গড়ে ওঠে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন সে সময়ে। ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ তার ঢাকা সফর শেষে কলকাতা প্রত্যাবর্তন করলে ১৯১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ড. রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল তার সাথে সাক্ষাৎ করে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতামূলক একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বিরোধী ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এবং রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। ১৯১২ সালের ২৮ মার্চ কলকাতা গড়ের মাঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে এক বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়।

. বারীন্দ্রকুমার ঘোষের নেতৃত্বে ১৯০৫ সালে ‘অনুশীলন’ নামে একটি সংগঠন গড়ে ওঠে। এই গোষ্ঠীর লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতকে স্বাধীন করা। এই আন্দোলন তখনকার শিক্ষিত হিন্দুদের মনে অসাধারণ উৎসাহ সৃষ্টি করেছিল। এ আন্দোলনের একটা সাম্প্রদায়িক রূপও প্রকট ছিল। তারা তাদের আন্দোলনের শক্তি হিসাবে কালীকে-দুর্গাকে দেখতে শুরু করেছিলেন। তাদের মন্ত্র হয়ে উঠেছিল গীতা। এসব ‘কারণ’ এই আন্দোলনে মুসলমানদের অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে। মুসলমানরা সে কারণেই এই সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনে যোগ দেয়নি বা তাকে সমর্থনও দেয়নি।
No photo description available.
সূত্র:
বঙ্গভঙ্গ থেকে বাংলাদেশ-মোহাম্মদ আবদুল মান্নান,পৃষ্ঠা২৫৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশি বছর – রফিকুল ইসলাম; পৃষ্ঠা: ১০৭