• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

জাকসু নির্বাচন ও ফলাফল কারসাজির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত , রাতেই ফলাফল ঘোষণা করে ঘরে ফিরবো

Usbnews.
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫
জাকসু নির্বাচন ও ফলাফল কারসাজির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত , রাতেই ফলাফল ঘোষণা করে ঘরে ফিরবো
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

অব্যবস্থাপনার দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষকরায় ছাত্রদলের নির্বাচন বর্জনের পর নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর মাধ্যমে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছেন। শেষ মুহুর্তে পদত্যাগ করা তিনজন শিক্ষক হলেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা। পদত্যাগ করেছেন তারা সবাই বিএনপিপন্থি শিক্ষক ও বর্তমান উপাচার্যের বিরোধী।

জানা যায়, প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকার পরও শিক্ষকরা রাজনৈতিক পরিচয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার নজিরবিহীন কর্মটি তারা সম্পন্ন করেছেন মূলত বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসানকে বেকায়দায় ফেলতে।

অভিযোগ রয়েছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসানকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে কূটকৌশলের আশ্রয় নেন বিএনপিপন্থি কিছু শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদগুলো- উপাচার্য, প্রাধ্যক্ষ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ বেশিরভাগ পদেই বিএনপিপন্থি শিক্ষকরাই রয়েছেন। এমনকি নির্বাচন কমিশনেও জাতীয়তাবাদী শিক্ষকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারপরও নির্বাচন শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে ছাত্রদলের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার পর তিনজন বিএনপিপন্থি শিক্ষক নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে না পারার অভিযোগ তুলে।

জাকসু নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও দলীয় প্রভাবের অভিযোগ তুলে বিএনপি সমর্থিত তিন শিক্ষক ও একজন নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তারা হলেন- অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান ও নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি।

এ পরিকল্পনার অন্যতম সমন্বয়কারী ছিলেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলের প্রভোস্ট নজরুল ইসলাম। তার প্রভাবে ওই কেন্দ্রে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রায় এক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। নির্বাচন ঘিরে এই জটিলতার গভীরে রয়েছে উপাচার্য নিয়োগসংক্রান্ত পুরোনো দ্বন্দ্ব। যেসব শিক্ষক তখন ভিসি পদে নিয়োগ পাননি, তারাই পরবর্তীতে সক্রিয়ভাবে নানা ষড়যন্ত্রে জড়ান। ভিসি হওয়ার পর অধ্যাপক কামরুল আহসান প্রশাসনিক দায়িত্বে জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দিলেও, যারা ভিসি হতে পারেননি, তারা ক্ষুব্ধ হন এবং জাকসু নির্বাচনকে ব্যর্থ করার পরিকল্পনা নেন।

নির্বাচনের অনিয়ম সামনে এনে আন্দোলনের মাধ্যমে উপাচার্যকে বিতর্কিত করা এবং পদত্যাগে বাধ্য করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এছাড়া উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোন শিক্ষক নিয়োগে হাত দেননি অধ্যাপক কামরুল আহসান। এজন্য বিএনপি শিক্ষকদের ওই গ্রুপটি বারবার উপাচার্যের উপর চাপ তৈরি করেন। কিন্তু তিনি নতিস্বীকার না করায় তারা নতুন ভিসি নিয়োগ করার নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছেন। অধ্যাপক নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন শিক্ষক এসব অপতৎপরতায় যুক্ত আছেন। তারা নির্বাচনে সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব তো পালন করেন নি এবং নির্বাচনের প্রস্তুতিতেও ঘাটতি ছিল। নির্বাচন কমিশনে থাকা এই চক্রের সহযোগীরাই এসব অপকর্ম করেছে। এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসর আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা। যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর নতুন করে কোন শিক্ষক নিয়োগ হয়নি, তাই এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের এই চক্রটি এর আগে জুলাই মাসে গণহত্যার ঘটনায় বহিষ্কৃত শিক্ষকদের পক্ষে বিবৃতি দেওয়াসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের ষড়যন্ত্র সফল হয়নি।

অ’ভি’যোগ রয়েছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসানকে ব্য’র্থ প্রমাণ করতে কূ’টকৌ’শলের আশ্রয় নেন বিএনপিপন্থি কিছু শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদ- উপাচার্য, প্রাধ্যক্ষ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ বেশিরভাগ পদেই বিএনপিপন্থি শিক্ষকরাই রয়েছেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না প্রমাণ করতে ও জাবি প্রশাসনকে বিপদে ফেলতে ছাত্রদলের মধ্যে গ্রুপিং করে ভোট বর্জন করানোসহ বিএনপিপন্থি কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে ভোট বর্জনের অভিযোগ রয়েছে বিএনপিপন্থি এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে অধ্যাপক নজরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে বারংবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার সাড়া পাওয়া যায় নি।

নির্বাচন কমিশনারকে পদত্যাগে চাপ প্র‍য়োগ করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার গণমাধ্যমকে বলেন, এ অভিযোগ ভিত্তিহীন এরকম কোনো কিছু ঘটে নি। কোনো একটি নির্দিষ্ট মহল এসব গুঞ্জন ছড়াচ্ছে।

এছাড়া বিভিন্ন হলের পোলিং অফিসারদের পদত্যাগের জন্য চাপ দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো প্রমাণ বা তথ্য ছাড়া আপনি যে প্রশ্ন করেছেন আমি হলে সেটা করতাম না। আর এরকম কোনো কিছুই আসলে ঘটে নি এই অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।

নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের ভোট গণনা কার্যক্রম চলমান। আমরা খুব দ্রুতই ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করতে পারবো বলে আশাবাদী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, যত সমস্যা বা সংকটই থাকুক না কেন আমরা যেহেতু জাকসু নির্বাচনের আয়োজন করেছি, আমরা এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করবো।

রাতেই ফলাফল ঘোষণা করে ঘরে ফিরবো: জাবি প্রক্টর

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ফলাফল রাতেই ঘোষণা করে ঘরে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন জাবি প্রক্টর অধ্যাপক এ. কে. এম. রাশিদুল আলম।

শুক্রবার রাত ১১টার দিকে সিনেটে ভোট গণনাকালীন মাইকে ঘোষণা দিয়ে তিনি একথা বলেন।

ইতোমধ্যে জাকসু নির্বাচনের হল সংসদের ভোটগণনা শেষ হয়েছে। এখন চলছে কেন্দ্রীয় সংসদের ভোটগণনা। জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, জাকসু কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনায় পোলিং অফিসারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আজ রাতের মধ্যেই ফল ঘোষণা করা হবে।

জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন। এর প্রায় ৬৭-৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ২৫টি পদে লড়েছেন ১৭৭ জন প্রার্থী।ভিপি পদে ৯ ও জিএস পদে ৮ জন প্রার্থী ছিলেন।

ছাত্রীদের ১০টি আবাসিক হলে ১৫০টি পদের মধ্যে ৫৯টিতে কোনো প্রার্থী ছিলেন না। একজন করে প্রার্থী ছিলেন ৬৭টি পদে। সে হিসেবে মাত্র ২৪টি পদে ভোট নেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলের মধ্যে ২টি হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলসহ পাঁচটি প্যানেল ভোট বর্জন করে।

জাকসু নির্বাচনে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে রাজধানীতে শিবিরে বিক্ষোভ

জাকসু নির্বাচনে অব্যবস্থাপনা ও ফলাফল প্রকাশে বিলম্বের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শিবিরের ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখার উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেট থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

বিক্ষোভ মিছিলোত্তর সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ।

তিনি বলেন, ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ধারায় প্রবেশ করেছে। ঢাবির শিক্ষার্থীরা জুলাই অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখা এবং তাদের জন্য কাজ করা প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করেছে। আগামীতেও দেশের সকল ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরতে চায়।

সিবগাতুল্লাহ আরও বলেন, আমরা মনে করেছিলাম ডাকসুর মতো জাকসুতেও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রশাসন টালবাহানা শুরু করেছে। ছাত্রদল বহিরাগতদের নিয়ে মিছিল-সমাবেশ করেছে। ইতোমধ্যে একজন বহিরাগত ছাত্রদল নেতাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন, লন্ডনের প্রেসক্রিপশনে বিএনপিপন্থি কোন কোন শিক্ষক নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। আমরা তাদের প্রতি ধিক্কার জানাই। জুলাইয়ের আন্দোলনে শিক্ষকদের বিরাট ভূমিকা ছিল। আমরা আশা করব তারা জুলাইয়ের স্পিরিট ধারণ করে কাজ করবেন।

সিবগাতুল্লাহ আরও বলেন, ৮ হাজার শিক্ষার্থীর ভোট নিয়ে বাংলাদেশ থেকে লন্ডন পর্যন্ত ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে সেই বিশ্ববিদ্যালয়, যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা অপশক্তি ও ফ্যাসিবাদকে বিদায় করেছে। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি গণতান্ত্রিক মতামত উপেক্ষা করে, শিক্ষার্থীরা তা মেনে নেবে না।

পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, আপনাদের প্রেসক্রিপশনে আর বাংলাদেশ কখনও চলবে না। ডাকসুতে ছাত্রশিবিরের বিজয় আসলে শিক্ষার্থীদের বিজয়। বাংলাদেশ নিয়ে নাক গলানো বন্ধ করুন।

তিনি অনতিবিলম্বে জাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তা থেকে মুক্ত করার দাবি জানান। গণতান্ত্রিক মতামতকে সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার আদায় করে ছাড়বে, ইনশাআল্লাহ।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক মু’তাসিম বিল্লাহ শাহেদী ও ছাত্র অধিকার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় দাওয়াহ সম্পাদক মোজাফফর হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম, মহানগর পূর্ব শাখার সেক্রেটারি মুহিব্বুল্লাহ হুসাইনীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।