• ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য আমাদের পুষ্টিগত কিছুর পরামর্শ সবাইকেই মেনে চলতে হবে

Usbnews.
প্রকাশিত অক্টোবর ৮, ২০২৫
হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য আমাদের পুষ্টিগত কিছুর পরামর্শ সবাইকেই মেনে চলতে হবে
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে রক্তে রক্তের চিনি ও রক্তের চর্বির ব্যাপারে পুরুষের ৪৫ বছরের ওপর এবং মহিলাদের ৫৫ বছরের ওপরে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। প্রত্যেক বাবা-মাকে তার সন্তানের জন্য সঠিক খাদ্যাভাস নির্বাচন করতে হবে, যা হবে সুস্বাস্থ্যবান্ধব। পরিবারের খাদ্যতালিকায় সপ্তাহে কমপক্ষে এক দিন উদ্ভিদ উৎস থেকে আমিষ নির্বাচন করতে হবে। নিজেকে সুস্থ রাখার অভ্যাসগুলো নিয়মিত চর্চা করলে তা খুব সহজে আয়ত্তে চলে আসবে

হার্ভার আমা আমাদের শরীরের এবং বেঁচে থাকার আবশ্যকীয় অরগান। এই হার্ট-এর পুষ্টিগত যত্ন এবং শারীরিক যত্নের ভূমিকা অপরিসীম। হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য আমাদের পুষ্টিগত কিছুর পরামর্শ সবাইকেই মেনে চলতে হবে। কেননা গবেষণায় দেখা গেছে, অধিক সংখ্যক বিভিন্ন ধরনের খাদ্যাভাস হার্টকে যেমন সুস্থ রাখতে পারে, তেমনি ভুল খাদ্যাভাস হার্টে বিভিন্ন রোগ তৈরি করতে পারে, তা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই সুস্থ জীবনযাপন মৃত্যুঝুঁকি এবং ব্যয়বহুল চিকিৎসা করাতে হার্টের জন্য পুষ্টি চিকিৎসা আবশ্যকীয়।

১। Satarated Fatty Acids: আমাদের হার্টকে সুস্থ রাখার লক্ষ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড-সমৃদ্ধ খাবার যেমন পূর্ণ চর্বিচক্ত গুঁড়োদুধ, পনির, বাটার (মাখন) খাসি ও ভেড়ার মাংস, বেকারি খাবার, ফাস্টফুড, Srack items যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ইতিমধ্যে যারা হার্টের রোগ (রক্তে চর্বি জমা এবং পরবর্তীকালে প্লাগ/ব্লক হওয়া) রোগে ভুগছেন, তাদের উপরিউক্ত খাবারগুলো ত্যাগ করতে হবে।

২। Polyursaturateds Fatty Acids: এই অ্যাসিডটি রক্তে ভালো চর্বি (HDL-High Dercity Lypoprofeir) বাড়াতে সাহায্যে করে। তাই হার্টকে ভালো পুষ্ট রাখার জন্য আমাদের এবং যাদের রক্তে LDL এবং Cholesterol-এর মাত্রা বেশি তাদের PUFA সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা আবশ্যক। উত্তম উৎসগুলো হলো: Vegetable oil, Salad Dressing।

৩। মনোরস্যাচুরেটেড অ্যাসিড (MUFA):

হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে MUFA সমৃদ্ধ খাবার উপযোগী। ১। ফল এবং সবজি, ২। গমের রুটি, ৩। মাছ, ৪। বাদাম, ৫। কম চর্বিযুক্ত লাল মাংস, ৬। অলিভ অয়েল।

8 Dietary Cholesterol: আমাদের নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় যে চর্বিযুক্ত খাবারগুলো রয়েছে যেমন ডিমের কুসুম, লাল মাংস, ঘি, পনির, দুধ, গলদা চিংড়ি, এগুলো কোলেস্টেরল-সমৃদ্ধ খাবার, শরীরের নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ কাজে কোলেস্টেরলের ভূমিকা অত্যাবশ্যকীয়। শরীরে এই কোলেস্টেরল এবং উৎস হলো আমাদের দৈনন্দিন খাবার এবং আমাদের লিভার কোলেস্টেরল তৈরি করে। এই কোলেস্টেরল শীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নেয়। প্রতিদিন ৫০০ এমজি কোলেস্টেরল গ্রহণ করলে প্রতি ডেসিলিটার রক্তরসে ১ এমজি করে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

একজন সুস্থ মানুষের রক্তে কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা (১৫০-২৫০ এমডি/ডিএল)। তাই যখনই কোলেস্টেরল-সমৃদ্ধ খাদ্য অতিরিক্ত দীর্ঘদিন ধরে গ্রহণ করা হয় তখন রক্তে এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং হার্টের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সচেতনতার সঙ্গে খাদ্যাভাস গড়ে না তুলতে পারলে রক্তনালিতে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল জমে, যা হৃদরোগের (চর্বিজনিত) জন্ম দেয়, যা দুশ্চিন্তা মৃত্যুঝুঁকি ও ব্যয়বহুল চিকিৎসার দরজা খুলে দেয়।

খাদ্য-আঁশ : আঁশযুক্ত খাবারের ভূমিকা সুস্থ+পুষ্ট- হার্টের সহায়ক। এটি রক্তে খারাপ চর্বি কমাতে সাহায্য করে। আমাদের দৈনন্দিন খাবারে আঁশের উৎস হলো খোসাসহ ফল। আপেল, বড়ই, পেয়ারা, জলপাই, আঙ্গুর ইত্যাদি। লাল গমের রুটি, লাল চালের ভাত, শাকসবজি, খোসাসহ বাদাম (Almonds, Peanut, walnut)।

walnফফি : অতিরিক্ত Coffee পানে (720ml daily) রক্তে টোটাল কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত Coffee পান করোনারি হার্ট ডিজিজ ও মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত Coffee পানকারী যদি মাত্রাতিরিক্ত সিগারেট গ্রহণে এবং কোনো প্রকার শারীরিক পরিশ্রম না করে তবে সে হার্ট হেলথের ব্যাপারে ঝুঁকিতে রয়েছেন।

Artioxidat’s: হার্ট Health-কে পুষ্ট রাখতে কিছু ভিটামিন রক্তের অতিরিক্ত LDL (High Dencity Lipoproteir) কে কমাতে সাহায্যে করে। ভিটামিনগুলো হলো ভিটামিন C, E, Beta Coroteis. এদের উৎসগুলো হলো

A. ভিটামিন সি: আমলকি, লেবু, কমলা, পাকা পেঁপে, পেয়ারা, বড়ই, আমড়া, আনারস, জামরুল, বাড়ন্ত —বীজের অঙ্কুর। আমাদের দেহ (প্রাণীর দেহ) ভিটামিন সি তৈরি করতে পারে না। তাই প্রতিদিন এই ভিটামিন খাবার হতে শরীরে সরবরাহের দরকার হয়।

B. ভিটামিন ই: বাদাম, বীজের তেল, ভুট্টার তেল, সূর্যমুখী তেল, গমের ভ্রুদের তেল, কিছু সবুজ শাকপাতা ও লেটুস পাতাতেও পাওয়া যায়। নিয়মিত উদ্ভিদ জগতের বীজ তেল ও বিশেষ করে Almonds (কাঠবাদাম) গ্রহণ করলে তা হার্টের ক্ষতিকর চর্বি কমাতে ও হার্টকে পুষ্ট রাখতে সহায়ক।

C. B-Carotene পাকা পেঁপে, গাজর, টম্যাটো, আমড়া, মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, সবুজশাক, ধনেপাতা, মিষ্টিআলু, আম, কাঁঠাল হার্টকে সুস্থ রাখতে উদ্ভিজ উৎস থেকে এই খাবারগুলো নির্বাচন ও গ্রহণ করা উত্তম।

Calcium: চাহিদা অনুযায়ী ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার রক্তে (অতিরিক্ত LDL) মন্দ চর্বি কমাতে এবং হার্টের বান্ধব চর্বি (HDL) বাড়াতে সাহায্যে করে। তাই শরীরের চাহিদা অনুযায়ী নিয়মিত ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। যে খাবারগুলোতে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় তার মধ্যে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য যে উৎসগুলো বেছে নিতে হবে তা হলো কম চর্বিযুক্ত দুধ, কম চর্বিযুক্ত দই ছানা, পনির কাটসহ গুঁড়া/ছোট মাছ, শুঁটকি মাছ, রুই মাছ, কাতলা মাছ, বড় মাছ, সাদা তিল, পোস্তদানা, কলমি শাক, কালো কচু শাক, লাউ শাক ইত্যাদি।

একনজরে হার্টকে Happy রাখার জন্য আমরা যে খাবারগুলো নির্বাচন করতে পারি তা হলো মাছ, চর্বিহীন মাংস, (Lear Meat) চামড়া ছাড়া মুরগি ডিমের সাদা স্কিম মিল্ক (১% চর্বিযুক্ত দুধ, কম চর্বিযুক্ত/চর্বিহীন দই, সব ধরনের বীজের তেল, জলপাই, তেল, কাঠবাদামের তেল, চিনাবাদামের তেল, বাদাম ও বীচি, আঁশযুক্ত লাল গমের রুটি, লাল চালের ভাত, আস্ত লাল গম সেদ্ধ শুকনা বিচি, ছোলা মটর, ফল, শাকসবজি ও মধু।

বর্তমানে যারা হার্টের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের মধ্যে নিম্নের লক্ষণগুলো দেখা যায়: ১। সিগারেট গ্রহণকারী, ২। উচ্চরক্তচাপ, ৩। রক্তে উপকারী চর্বি (HDL-Cholesterol) এর পরিমাণ কম, ৪। যাদের বংশগত হৃদরোগ রয়েছে, ৫। যাদের বয়স পুরুষ ৪৫ বছর, মহিলা ৫৫ বছর (এর উপরে।)

হার্টের স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে: ১। ডায়াবেটিস, ২। শরীরের অতিরিক্ত ওজন, ৩। যেসব মহিলার মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে (Menopause Women), ৪। মানসিক চাপ, ৫। রক্তে উচ্চমাত্রায় ট্রাইগ্লিসারাই (TG), ৬। শারীরিক পরিশ্রমের ঘাটতি, ৭। মদ্যপান, ৮। বংশগতভাবে রক্তের চর্বির আধিক্যের প্রবণতা, ৯। লেফ্রোটিক সিনড্রম, ১০। হাইপোথায়রোডিজম এবং ১১। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ (Saturateds fat) ।

এখন কীভাবে আমরা হার্টের স্বাস্থ্যকে পুষ্ট রাখব: ১। আগে বর্ণিত হার্টবান্ধব খাবারগুলো প্রয়োজনীয় পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। ২। দীর্ঘমেয়াদি অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। ৩। প্রতিদিন কিছু শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস করতে হবে। ৪। ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণের সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ৫। শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে স্বাভাবিক ওজনে ফিরতে হবে। ৬। কঠোরভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ৭। নিয়মিত খাদ্যতালিকায় কাঠবাদাম (খোসাসহ), জলপাই তেল মাছযুক্ত করলে হার্ট খুশি হবে। ৮। অপ্রয়োজনীয় মানসিক চাপ জোগান দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ৯। অতিরিক্ত পরিমাণে ভাত, রুটি, মুড়ি, পরোটা, নুডলস, সুজি, বিস্কুট, বেকারি খাবার গ্রহণ পরিহার করা উচিত। ১০। ঘনঘন পোলাও, রোস্ট, বিরানি, তেহারি, কাচ্চি গ্রহণ করা উচিত নয়। ১১। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে রক্তে রক্তের চিনি ও রক্তের চর্বির ব্যাপারে পুরুষের

৪৫ বছরের ওপর এবং মহিলাদের ৫৫ বছরের ওপরে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। ১২। প্রত্যেক বাবা-মাকে তার সন্তানের জন্য সঠিক খাদ্যাভাস নির্বাচন করতে হবে, যা হবে সুস্বাস্থবান্ধব। ১৩। পরিবারের খাদ্যতালিকায় সপ্তাহে কমপক্ষে এক দিন উদ্ভিদ উৎস থেকে আমিষ নির্বাচন করতে হবে। ১৪। নিজেকে সুস্থ রাখার অভ্যাসগুলো নিয়মিত চর্চা করলে তা খুব সহজে আয়ত্তে চলে আসবে। ১৫। নিজের ইচ্ছা ছাড়া শরীরের যত্ন, মনের যত্ন, খাবারের যত্ন, হাঁটার যত্ন ও ব্যায়ামের যত্ন, ঘুমের যত্ন সবই হারিয়ে যায়। যত্নে রত্ন মিলে, অবহেলায় যায় হারিয়ে।

বিশেষ সতর্কতা: যেসব মহিলা ৫০ বছর পার করেছেন তাদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে, যেন তাদের প্লাজমা কোলেস্টেরলের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার নিচে নেমে না যায়। কারণ কোলেস্টেরল ৫০ ঊর্ধ্বে মহিলা যাদের মাসিক বন্ধ হয়েছে তাদের ইসট্রোজের হরমোন তৈরির প্রধান কাঁচামাল। তাই

মাসিক বন্ধ হওয়া মহিলাদের এবং গর্ভবতী মহিলাদের সঠিক পরিমাণে চর্বিযুক্ত খাদ্য যুক্ত করতে হবে।

পদক্ষেপ: আসুন আমাদের নিজ ক্ষমতায় যতটুকু মেনে চলা সহজ, ঠিক ততটুকু নিয়মশৃঙ্খলা মেনে আমাদের হৃদয়কে, আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করি। রোগ যন্ত্রণার ভয়াবহ কষ্ট ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা থেকে বেঁচে থাকি।