• ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

জুলাই হত্যাযজ্ঞের মামলায় পলাতক হাসিনা ও আছাদুজ্জামান কামালের রায় আগামী ১৭ নভেম্বর , আইন অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া হবে : চিফ প্রসিকিউটর

Usbnews.
প্রকাশিত নভেম্বর ১৩, ২০২৫
জুলাই হত্যাযজ্ঞের মামলায় পলাতক হাসিনা ও আছাদুজ্জামান কামালের রায়  আগামী ১৭ নভেম্বর , আইন অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া হবে : চিফ প্রসিকিউটর
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

জুলাই হত্যাযজ্ঞের মামলায় পলাতক হাসিনা ও আছাদুজ্জামান কামালের রায় প্রদান করা হবে আগামী ১৭ নভেম্বর। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর)। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন।

ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন- গণহত্যার সাথে জড়িত সাবেক অনির্বাচিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। সাবেক আইজিপি মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়।

পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলাটি (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।

গত বছরের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনই এ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

প্রথম দিকে এ মামলায় শেখ হাসিনাই একমাত্র আসামি ছিলেন। চলতি বছরের ১৬ মার্চ এ মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করার আবেদন করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) এবং ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন।

একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

গত ১২ অক্টোবর এ মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু হয়। যুক্তিতর্ক শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড চান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

গত ১ জুন শেখ হাসিনাসহ এই তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে এই তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়।

সেগুলো হলো গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ প্রদান; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পোড়ানোর অভিযোগ। এই পাঁচ অভিযোগে তিন আসামির বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।

আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এ মামলার একমাত্র গ্রেপ্তার আসামি। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের দিন (১০ জুলাই) সাবেক আইজিপি মামুন গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন।

আইন অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া হবে : তাজুল ইসলাম

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছেন, আমরা অঙ্গীকার করেছি বাংলাদেশে অপরাধী যতো শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদেরকে সঠিক পন্থায় আইনের আওতায় আনবো। কোনো কর্মসূচিই শেখ হাসিনার বিচারে প্রভাব ফেলতে পারবে না। আইন অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এ মামলা রায়ের জন্য চূড়ান্ত পর্বে উপনীত হয়েছে। আশা করছি, আগামী ১৭ নভেম্বর আদালত তার সুবিবেচনায় প্রজ্ঞার প্রয়োগ করবেন।

আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের রায়ের দিন ধার্য করেন। এর আগে বেলা ১২টা ৫ মিনিটে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার রায়ের দিন আগামী ১৭ নভেম্বর ধার্য করেন।

মামলার বিচার নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টির সুযোগ নেই। লাইভ সম্প্রচার হয়েছে। আমরা তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। আমি আশা করি, আসামিদের সর্বোচ্চ দণ্ড হবে। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছেন, আমরা অঙ্গীকার করেছি বাংলাদেশে অপরাধী যতো শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদেরকে সঠিক পন্থায় আইনের আওতায় আনবো। কোনো কর্মসূচিই শেখ হাসিনার বিচারে প্রভাব ফেলতে পারবে না। আইন অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এ মামলা রায়ের জন্য চূড়ান্ত পর্বে উপনীত হয়েছে। আশা করছি, আগামী ১৭ নভেম্বর আদালত তার সুবিবেচনায় প্রজ্ঞার প্রয়োগ করবেন।

তাজুল ইসলাম বলেন, জাতির বিচারের প্রতি যে আকাঙ্খা ও তৃষ্ণা সেটির প্রতি আদালত সুবিচার করবেন বলে আশা রাখি। একটি সঠিক রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে সংগঠিত একটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অবসান ঘটাবেন। শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সাজা প্রতাশ্যা করছি, ভবিষ্যতের জন্য রায়টি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

এ সময় মামলাটি চূড়ান্ত পর্বে আসার পেছনে প্রসিকিউশনের যেসব সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, ভুক্তভোগী এবং গোটা জাতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

১৭ নভেম্বরের রায়ে আদালত তার সুবিবেচনা, প্রজ্ঞা প্রয়োগ করবেন এবং এই জাতির বিচারের জন্য যে আকাঙ্ক্ষা, যে তৃষ্ণা সেটার প্রতি তারা সুবিচার করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। একইসাথে সঠিক রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটা ইতি ঘটাবেন এবং ভবিষ্যতের জন্য এই রায়টি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে তেমন একটি রায় প্রত্যাশা করছেন বলেও জানান তিনি।