• ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৫ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

গৃহকর্মীর মৃত্যু: রিমান্ড শেষে সস্ত্রীক কারাগারে ডেইলি স্টারের সাংবাদিক আশফাকুল

usbnews
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪
গৃহকর্মীর মৃত্যু: রিমান্ড শেষে সস্ত্রীক কারাগারে   ডেইলি স্টারের সাংবাদিক আশফাকুল
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

গৃহকর্মীর  মৃত্যু’র অভিযোগে মামলায় ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

রোববার আসামিদের চার দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মো. শরীফুল। এরপর তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।

এ সময় আসামিপক্ষ থেকে জামিন চাওয়া হয়নি। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। মোহাম্মদপুর থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার উপ-পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন এ তথ্য জানান।

এদিকে ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক, তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন গৃহকর্মী প্রীতির বাবা লুকেশ উরাং।

গৃহকর্মী প্রীতি ওরাংয় , সৈয়দ আশফাকুল হক, তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার

গত ৬ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আবাসিক ভবনের নবম তলা থেকে পড়ে প্রীতি ওড়ান নামে এক কিশোরী গৃহকর্মীর মৃত্যু হয়। ১৫ বছর বয়সী ওই কিশোরী ওই ভবনের বাসিন্দা ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় কাজ করতেন। সে সময় স্থানীয়রা ওই বাড়ির ফটকে জড়ো হয়ে ‘মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে’ অভিযোগ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।    পরে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ মেয়েটির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ওই দিনই আশফাকুলসহ তার পরিবারের ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আটক করে পুলিশ। গতকাল প্রীতির বাবা মামলা দায়েরের পর আশফাকুল ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। উল্লেখ্য গত বছর একই বাসা থেকে একইভাবে ফেরদৌসী নামে অপর এক গৃহকর্মী নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন।

আটকের পর আদালতে কি হয়েছিল ?

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান শুনানি শেষে এ রিমান্ডের আদেশ দেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ, উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আসামিদের পক্ষে আইনজীবী চৈতন্য চন্দ্র হালদার, আশরাফ উল আলম রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে, শুনানির সময় বিচারকের প্রশ্নের জবাবে ঘটনার দিনের বর্ণনা করে আশফাকুল হক বলেন, ‘এ ঘটনা ঘটার একদিন আগে আমার মেয়ে দেশে আসে। সে বাইরে থাকে। তাকে দেখতে আত্মীয়-স্বজন আসে। আগে একটা মেয়ে (আশফাকের বাসার এক সময়ের গৃহকর্মী) ওই জায়গা থেকে পড়ে যে আহত হয়, আমাদের আলাপে সেই বিষয়টটা উঠে আসে। রাতে গল্প করে আমরা ঘুমিয়ে পড়ি।’

তিনি বলেন, ‘সকাল ৮টার দিকে চিৎকার শুনি। আমাদের বাসা জেনেভা ক্যাম্পের পাশে। ছেলেরা বাসার পাশে মাঠে খেলাধুলা করে। আমার স্ত্রী বলে, ‘‘হয়তো তারা চিৎকার করছে’’। পরে দেখি অনেক লোক। ওই জায়গার গ্লাস খোলা। মেয়েটা (মারা যাওয়া প্রীতি উড়ান) নেই। এরই মাঝে শত শত লোক জমা হয়ে যায়।’

আশফাকুল বলেন, ‘আমি রেডি হয়ে নিচে নামতে যাই। তখন গার্ডের সঙ্গে পাশের বিল্ডিংয়ের এক প্রতিবেশী আসে। তিনি বলেন, ‘‘আপনার বাসা থেকে একটা মেয়ে পড়ে গেছে’’। অনেক লোক জমে যাওয়ায় আর নিচে যেতে পারিনি।’

তিনি বলেন, ‘জায়গাটি ফ্লোর থেকে ৫/৬ ফুট উঁচুতে। রাতের ওই আলোচনা শুনে অতি আগ্রহী হয়ে হয়তো সেখানে গেছে। নয়তো ক্লিন করতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।’

Image not found

আদালতে আশফাকুলের স্ত্রী তানিয়া খন্দকার বলেন, ‘মেয়েটা অনেক চঞ্চল ছিল। ওর বড় বোন আমার বাসায় কাজ করত। আমি ও সে (প্রীতির বড় বোন) ওকে বারবার নিষেধ করেছি- ‘‘সেখানে যাস না’’। আমি বলেছি, ‘‘ওখানে কুফা আছে, যাবি না’’। ওর বোন বলেছে, ‘‘শয়তান আছে, যাবি না।’’ ঘটনার দিন সকালেও পানি খেয়েছে, ফ্রিজ থেকে পিঠা বের করেও খেয়েছে। ওই বিষয় (আগের গৃহকর্মীর পড়ে যাওয়া) নিয়ে অনেক আগ্রহ ছিল। হয়তো এই কারণে সেখানে গেছে। আর পড়ে গেছে।’

তখন আদালত সিসি ক্যামেরার বিষয়ে জানতে চান। এ বিষয়ে আশফাকুল হক বলেন, ‘ক্যামেরা ছিল। তবে খুব সস্তা। আমার স্ত্রী এটা অনলাইন (অনলাইন মার্কেটপ্লেস) থেকে কিনেছে। কোনো মেমোরি ছিল না।’

পরে আদালত বলেন, তাদের উত্তরে আদালত সন্তুষ্ট না। পরে তাদের প্রত্যেককে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি আশফাকুল-তানিয়া দম্পতিকে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়ে কারাগারে পাঠান আদালত।