গাধার গুরুত্ব কী? আপাত নিরীহ এই প্রাণী কিন্তু জীবজগতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল হোক বা প্রত্যন্ত এলাকা, মালপত্র পরিবহনের জন্য বহু যুগ ধরেই ব্যবহার করা হয় গাধা। এছাড়াও চাষের কাজে হোক বা পশুপালন-সর্বত্রই গাধাকে ব্যবহার করা হয়। গাধার দুধও অত্যন্ত দামি, এতে নানা উপকারি উপাদান রয়েছে। তবে বিশ্বে ধীরে ধীরে কমছে গাধার সংখ্যা। এর কারণ মানুষই। নিজেদের যৌবন ধরে রাখতেই প্রতি বছর প্রায় ৬০ লাখ গাধা হত্যা করা হচ্ছে।
আমাদের সমাজে ভ্রান্ত ধারণা আছে গাধা একটা বোকা প্রানী । কিন্তু প্রাণিবিজ্ঞানীরা একে বুদ্ধিমান ও স্মার্ট প্রাণী বলেই মনে করেন। মানুষের কণ্ঠের নির্দেশ বোঝে তারা ও পুরনো মনিব ও সঙ্গীসাথীকে ২৫ বছর পরেও চিনতে পারে গাধা এমন রেকর্ডও আছে।
সম্প্রতিই গাধাদের অভয়ারণ্যের তরফে প্রকাশিত রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। তাতে দাবি করা হয়েছে, প্রতি বছর কমপক্ষে ৫.৯ মিলিয়ন বা ৫৯ লাখ গাধাকে হত্যা করা হচ্ছে। কেন জানেন? মানুষদের রূপচর্চার জন্য। ত্বক টানটান রাখতেই গাধার চামড়া নিয়ে বাণিজ্য করা হচ্ছে। ‘এজিয়াও’ হল এক প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি, যা মূলত চীনে অনুসরণ করা হত। বর্তমানে তা গোটা বিশ্বেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই পদ্ধতিতে গাধার চামড়া থেকে বের করা হয় কোলাজন, যা ত্বক টানটান রাখতে ও মুখে বয়সের ছাপ রুখতে কার্যকর। এই কোলাজন বের করতেই নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে গাধা।
২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে এজিয়াও-র বার্ষিক উৎপাদন ৩২০০ টন থেকে ৫৬০০ টনে বেড়েছে। অর্থাৎ তিন বছরেই ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এজিয়াও-র উৎপাদন। আর এজিয়াও-র উৎপাদন বাড়াতে গাধা হত্যার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে গাধার মৃত্যু বছরে ৬৭ লক্ষ পার করবে। চীনে গাধার সংখ্যা এমনিতেই তলানিতে ঠেকেছে। বর্তমানে অন্য়ান্য দেশগুলি থেকে গাধার চামড়া আমদানি করা হচ্ছে চীনে। মূলত আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকেই গাধার চামড়া আমদানি করা হচ্ছে।
যদি এই হারেই গাধার হত্যা চলতে থাকে, তবে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে বিশ্ব থেকে গাধা উধাও হয়ে যাবে। এই বিরূপ পরিস্থিতি রুখতেই বিভিন্ন দেশের সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। গাধার হত্যা ঠেকাতে কড়া আইন আনা হচ্ছে। ব্রাজিলেও চলতি বছরেই ন্যাশনাল কংগ্রেসে গাধার হত্যা ঠেকাতে প্রস্তাবনা আনা হবে।
প্রাণী অধিকার সংস্থা ‘দ্য চ্যারিটি, দ্য ডাংকি স্যাঙ্কচুয়ারি’ সূত্রে জানা যায় , এজিয়াও উৎপাদনের জন্য আগে দেশীয় গাধার চামড়া ব্যবহার করতো চীনা কোম্পানিগুলো। চাহিদার চেয়ে সরবরাহে টান পড়ায় তাঁরা গাধার চামড়ার জন্য দেশের বাইরে খোঁজ শুরু করে। শুরুতে সরকার এটাকে সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করে এবং আফ্রিকায় অনেক ‘বৈধ জবাইখানা’ তৈরি হতে থাকে। বিশ্বের দুই–তৃতীয়াংশ বা ৫ কোটি ৩০ লাখ গাধার চারণভূমি আফ্রিকা। দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ যোগাযোগ ও মালামাল বহনের কাজে গাধা ব্যবহার করে থাকে।