বিমানবাহিনীর ওই সদস্য ২৫ বছর বয়সী অ্যারন বুশনেল । তিনি টেক্সাসের বাসিন্দা। আগুন দেওয়ার সময় তাঁকে ‘ফ্রি ফিলিস্তিন বা ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো’ স্লোগান দিতে শোনা গেছে।যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে স্থানীয় সময় গত রোববার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। ওই সেনাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে গতকাল সোমবার তিনি মারা যান।
যুক্তরাষ্ট্রের লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং টুইচে ক্লান্ত অবস্থায় বিমানবাহিনীর ওই সদস্য ২৫ বছর বয়সী অ্যারন বুশনেলকে বলতে শোনা যায়, তিনি আর গণহত্যার মতো অপরাধ করতে চান না। এরপরই তিনি নিজের শরীরে তরলজাতীয় দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরান। মাটিতে পড়ে না যাওয়া পর্যন্ত তাঁকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ‘ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো’।
অ্যারনের মৃত্যুর দিন গতকাল সোমবার পর্যন্ত ১৪৩ দিনে ইসরায়েলি বাহিনীর নারকীয় হামলায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার ফিলিস্তিনি। অ্যারনের আত্মহত্যার সময় ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজে তাঁকে বলতে শোনা যায়, এই গণহত্যায় তিনি আর নিজেকে জড়াতে চান না। তাই তো প্রতিবাদের চরম ভাষা হিসেবে এ পথ বেছে নিচ্ছেন।
অ্যারনকে আরও বলতে শোনা যায়, তবে উপনিবেশকারীদের (ইসরায়েল ও এর মিত্রদেশগুলো) হাতে ফিলিস্তিনিরা যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন, সে তুলনায় তাঁর এ কাজ কিছুই না।
ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি গণহত্যাকে দেশের শাসকশ্রেণির ‘স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখা’র এ ঘটনাকে মানতে পারেননি অ্যারন বুশনেল। এমন পররাষ্ট্রনীতির প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলি দূতাবাসের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নিজ গায়ে আগুন লাগিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি। দাহ্য তরলে লাগানো আগুনে সারা শরীর যখন দাউ দাউ করে জ্বলছিল, তখনো চিৎকার করে তিনি বলছিলেন—‘মুক্ত ফিলিস্তিন’।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস গতকাল মঙ্গলবার বলেছে, নিজের গায়ে আগুন দিয়ে মার্কিন বিমানবাহিনীর যে সদস্য মারা গেছেন, তিনি তাঁর যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদের জন্য ‘অমর’ হয়ে থাকবেন।অ্যারনের আত্মাহুতির ফুটেজ অনলাইনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় হামাস বলেছে, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে আমেরিকান জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের একটি বহিঃপ্রকাশ এই ঘটনা।
আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে ইসরাইলি দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে তুরস্ক ও আরব রাষ্ট্রগুলো। একইসঙ্গে এই দখলদারিত্বকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা বলেও আখ্যায়িত করেছে তুরস্ক।
গাজায় ইসরাইলের ৫৭ বছরের দখলদারিত্ব নিয়ে ছয় দিনের শুনানি শেষ করেছে আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে)। ১৯ ফেব্রুয়ারি নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে এ শুনানি শুরু হয়। ১৫ বিচারপতি, ৫১ দেশ এবং ৩টি আন্তর্জাতিক সংস্থার যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে অবশেষে সোমবার এ শুননি শেষ হয়।
সোমবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আরব রাষ্ট্রগুলো সোমবার আন্তর্জাতিক বিচারকদের কাছে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে। একইসঙ্গে শুনানির শেষ দিনে এটিকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা বলেও আখ্যায়িত করে তুরস্ক।
শুনানির শেষ দিনে তুরস্ক, স্পেন, আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের প্রতিনিধিরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন।
এই যুদ্ধে ইসরাইল বৈশ্বিক সমর্থন হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে মঙ্গলবার এমন সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার পরপরই নেতানিয়াহুর পক্ষ থেকে খোদ যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক সমর্থনের দাবি করে মন্তব্য এলো।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু’র মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইলের প্রতি এই ব্যাপক জনসমর্থন তাদের হামাসের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই করতে অনুপ্রাণিত করবে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধবিরতির জন্য সম্ভাব্য চুক্তির ব্যাপারে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।