নাশকতার অভিযোগে মামলায় কারাবন্দী মায়ের জামিন আবেদনের শুনানি থাকায় দাদির হাত ধরে হাইকোর্টে এসেছে চার বছর বয়সী নূরজাহান ও তার সাত বছর বয়সী বড় বোন আকলিমা। দুই বোনের মা হাফসা আক্তার নাশকতার মামলায় কারাগারে আছেন। এই মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন না পেয়ে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তিনি।
সোমবার বিচারপতি মো: রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে হাফসার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হয়।
শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ সংক্রান্ত ফুটেজ (সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ) রাষ্ট্রপক্ষকে মঙ্গলবার আদালতে দাখিল করতে বলেছেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতে উপস্থিত হতে বলতে বলা হয়েছে।
আদালতে আবেদনকারী হাফসা আক্তারের পক্ষে শুনানি করেন বিএনপির আইনসম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। সাথে ছিলেন আইনজীবী মো: মাকসুদ উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, রাষ্ট্রীয় বর্বরতা ও নিপীড়নের বড় প্রমাণ এই ছোট্ট দুটি শিশু। যদিও শিশুদের মিডিয়াতে আনা ঠিক না। কিন্তু তারা চলে এসেছে। তাদের বাবা বিএনপির একজন নেতা। এখনে যা হয়েছে তার বাবাকে না পেয়ে তার মা হাফসা আক্তারকে পুরানো একটি মামলায় গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। আজ তিন মাস আট দিন হলো তিনি জেলে আছেন। আজ জামিন আবেদনের শুনানি হয়েছে। আমরা আদালতে বলেছি দেশে যদি আইনের শাসন থাকত তাহলে এই শিশুদের আদালতে আসতে হত না।
এ মামলায় গ্রেফতারের পর গত বছরের ২৭ নভেম্বর থেকে কারাগারে আছেন হাফসা। এ মামলায় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। এরপর তিনি জামিন চেয়ে রোববার হাইকোর্টে আবেদন করেন। সোমবার আবেদনটি শুনানির জন্য হাইকোর্টে ওঠে।
জামিন আবেদনের শুনানি থাকায় দাদির সাথে হাফসার দুই মেয়ে আজ সকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে অবস্থিত আইনজীবীর চেম্বারে আসে। পরে সেখান থেকে কোর্টে যায় (হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের ৩১ নম্বর) তারা।
১০ মিনিটের মতো শুনানি হয়। শুনানির সময় আদালত কক্ষে থাকা সর্বশেষ আসনটিতে দাদির হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিল আকলিমা। অন্যদিকে দাঁড়িয়ে থাকা কাকার কোলে ছিল নূরজাহান।
গত ২৯ নভেম্বর রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন হয়েছিল। ওইদিন নূরজাহান ও আকলিমার মতো মানববন্ধনে এসেছিল আরো কিছু শিশু। মানববন্ধনের ব্যানারে আয়োজক হিসেবে লেখা ছিল,‘রাজবন্দীদের স্বজন’।
দুই শিশুর বাবা আবদুল হামিদ ভূঁইয়া বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত। দুই শিশুর দাদা আবদুল হাই ভূঁইয়া ২৯ নভেম্বরের মানববন্ধনে অভিযোগ করে বলেছিলেন, তার বড় ছেলে হামিদকে পুলিশ খুঁজছে। তাকে না পেয়ে ছেলের স্ত্রী হাফসাকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। অথচ হাফসা রাজনীতির সাথে জড়িত নন।