রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের আকাক্সক্ষা আদালতে তুলে ধরার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একদল শিক্ষার্থী। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের চাওয়া বিচার বিভাগে যথাযথভাবে তুলে ধরা হোক। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না থাকার যে দাবি, তার যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং অটল। ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দিতে পারি।
ছাত্ররাজনীতি নিয়ে অস্থিরতা কাটছে না বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে রাজনীতি ফেরাতে তৎপর ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছেন। দুইপক্ষের পাল্টাপাল্টির মধ্যে সিদ্ধান্ত গড়ায় আদালত পর্যন্ত। সোমবার এক রিটের প্রেক্ষিতে আদালতের রায় যায় ছাত্রলীগের পক্ষে। রায় অনুযায়ী বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চলতে কোনো বাধা নেই। এরপর সংবাদ সম্মেলন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের পাশে থাকার আর্জি জানিয়ে তারা আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তবে আদালতের রায়ের প্রতি নিজের সম্মানের কথাও জানান সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পাঁচ দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজও ক্লাস পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
এর আগে ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের হাতে আবরার ফাহাদের মৃত্যুর পর উত্তাল হয়ে উঠেছিল বুয়েট।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বাতিল করা হয় ছাত্ররাজনীতি। কিন্তু গত ২৮শে মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বুয়েটে প্রবেশ করে। এরপর ফুঁসে ওঠেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বুয়েট শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতা ইমতিয়াজ হোসেন রাব্বিসহ অন্যদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়। তারা বুয়েট ক্যাম্পাসে জমায়েতসহ ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ডাক দেন। পরীক্ষায় দুইজন ছাড়া কেউই অংশ নেননি। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ইমতিয়াজ হোসেনের হলের বরাদ্দকৃত সিট বাতিল করে প্রশাসন। গত রোববার আন্দোলন চলা অবস্থায় বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনীতি ফেরাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। এরপর শোডাউন দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ছাত্রলীগ। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় সংগঠনটি।
গতকাল বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেয়া বিজ্ঞপ্তিটি স্থগিত করে হাইকোর্ট। এ আদেশের ফলে দেশের শীর্ষ এ প্রকৌশল উচ্চশিক্ষালয়ে ছাত্ররাজনীতি চলতে বাধা থাকলো না। বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে সোমবার উচ্চ আদালতে সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন ইমতিয়াজ রাব্বি। রিটে বুয়েট কর্তৃপক্ষ রাজনীতি নিষিদ্ধ করে যে নোটিশ দিয়েছিল, তা স্থগিত চাওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালে বুয়েটের তৎকালীন ভিসি প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করেন। তখন তিনি জানান, নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক রাজনীতিরও সুযোগ নেই।
গতকালকের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বুয়েটের শহীদ মিনারসংলগ্ন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ছাত্রলীগমনা একদল শিক্ষার্থী। এ সময় তারা জয় বাংলা স্লোগানও দেন। গতকালও ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নেননি সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রায়ের পর বিকালে সংবাদ সম্মেলন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। লিখিত বক্তব্যে তারা ভিসিসহ শিক্ষকদের পাশে থাকার আর্জি জানান। লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান ও আস্থা রাখি। বুয়েট ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও গত ২৮শে মার্চ মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে বহিরাগত রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের আগমন এবং শোডাউনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালার লঙ্ঘন বলে মনে করেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ২০১৯ সালের ৭ই অক্টোবর আবরার ফাহাদ ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের পর ৯ই অক্টোবর বেলা সাড়ে ৩ টায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন যে, অনেক প্রতিষ্ঠানেইতো সংগঠন করা নিষিদ্ধ আছে। বুয়েট যদি মনে করে তারা সেটা নিষিদ্ধ করে দিতে পারে। এটা তাদের উপর। এরই ফলস্বরূপ, বুয়েটের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট প্রশাসন সকল প্রকার সাংগঠনিক রাজনীতি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করেন।
তারা বলেন, আমরা বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি রাখবো যে, এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত বিচার বিভাগে যথাযথভাবে তুলে ধরা হোক। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না থাকার আমাদের যে দাবি তার যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং অটল। যেই ছাত্ররাজনীতি র্যাগিং কালচারকে প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ খুলে দেয়, যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদেরকে যা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনোই বয়ে আনেনি, আনবেও না।
তারা বলেন, এই প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের বুয়েটের সকল শিক্ষকের কাছে আর্জি জানাচ্ছি তারা যাতে এমন সংকটের মুহূর্তে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান। আমরা আমাদের ভিসি স্যারের উপর আস্থা পোষণ করি। তার সদিচ্ছা সবসময় আমাদের পক্ষেই ছিল বলেই আমরা বিশ্বাস করি। গত তিনদিনব্যাপী আন্দোলনের মধ্যে তিনি আমাদের সকল ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন, বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং আমাদের কথা শোনার চেষ্টা করেন। আমরা শিক্ষার্থীরা আমাদের ভিসি স্যারকে এই আর্জি জানাচ্ছি- তিনি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষককে নিয়ে আপামর বুয়েট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের যে আকাঙ্ক্ষা তা সকল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাতে পূরণ করেন।
আদালতের রায়ের পর বুয়েট ভিসি ক্যাম্পাসে নিজ কার্যালয়ে প্রফেসর সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, আদালত যেটা বলবেন, আমাকে সেটা মানতে হবে। আদালতের আদেশ শিরোধার্য। আমরা আদালত অবমাননা করতে পারবো না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনীতির পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রশাসন সবাই মিলে একটা রূপান্তর করতে হবে। কীভাবে সেটা করা যায়, তা আলোচনার মাধ্যমে বের করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কেএম জাহিদ সারওয়ার কাজলের সমন্বয়ে গঠিত অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের শুনানি গ্রহণ করে এ আদেশ দেন। রুলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বুয়েটের ভিসি ও রেজিস্ট্রারকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। এর ফলে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চলতে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
২০১৯ সালের ১১ই অক্টোবর বুয়েট কর্তৃপক্ষের দেয়া ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তির’ বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বুয়েটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম আদালতে রিট আবেদন করেন। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়াকে কেন্দ্র করে ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ নামে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৯ সালের ১১ই অক্টোবর একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। বুয়েটের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে নিষিদ্ধ করা হলো। এরপর থেকে বুয়েটে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল।
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফেরানোর উদ্যোগে উদ্বিগ্ন আবরারের পরিবার
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এর জেরে উত্তাল ছাত্র আন্দোলনের মুখে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ জারি করে বুয়েট প্রশাসন। এই ঘটনার চার বছর না পেরোতেই হাইকোর্টের আদেশে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফিরতে যাচ্ছে। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফেরাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সায় এবং ছাত্রলীগের দাবির মধ্যে এক ছাত্রলীগ নেতার রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এমন আদেশ দিলেন হাইকোর্ট।
তবে বুয়েটে আবার ছাত্ররাজনীতি ফেরানো নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি শুরু হলে এখন বুয়েটের যে পরিবেশ আছে তা বিঘ্নিত হবে। আমার এক ছেলেকে হারিয়েছি, আরেক ছেলেকেও সেখানেই (বুয়েটে) ভর্তি করেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই না, বুয়েটে আবারও ছাত্ররাজনীতি চালু হোক। আমার স্ত্রীর দাবিও একই।’
বুয়েটে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে যন্ত্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হয়েছেন আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ। ঈদের ছুটিতে কুষ্টিয়া শহরে নিজেদের বাড়িতে অবস্থান করছেন তিনি। গতকাল সোমবার তাঁর সঙ্গে কথা হয়।
বুয়েটে আবারও ছাত্ররাজনীতি চালুর তোড়জোড় চলছে, ওই ক্যাম্পাসের ছাত্র হিসেবে আপনি কী চান, এমন প্রশ্নের জবাবে আবরার ফাইয়াজ বলেন, ‘৫০ জন ছাত্ররাজনীতি চায় না, আর পাঁচজন চায়। অথচ এই পাঁচজনের মতামতকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যারা ক্যাম্পাসে রাজনীতি চাচ্ছে, তারা কি আর কাউকে মারার আগে দ্বিতীয়বার ভাববে? ভাববে না। ছাত্ররাজনীতির অনুমতি দেয়া মানে তাদের একধরনের ইনডেমনিটির ব্যবস্থা করে দেয়া, যাতে এর পর থেকে আর কেউ প্রতিবাদ করার সাহস না পায়।’
আবরার ফাহাদ ছিলেন ফাইয়াজের বড় ভাই। তাঁদের বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে। বাবা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র ছিলেন।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবা বাদী হয়ে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দণ্ডিতরা সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।
আবরার হত্যার জেরে বুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর জরুরি বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে রিট করেছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ রাব্বি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিকে গভীর রাতে ক্যাম্পাসে নেয়ার অভিযোগে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে হলে তাঁর সিট বরাদ্দ বাতিল করা হয়।
আবরার হত্যাকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন আদালত: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার দেশের পক্ষে স্টেটাস দিয়েছিল বলে তাকে ছাত্রলীগ নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিল। তার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছিল গোটা জাতি। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করেছিল। তাদের সন্ত্রাসের রাজনীতি বন্ধ করার জন্য শিক্ষার্থীরা বার বার আন্দোলন করছে। অথচ আমরা দেখলাম আবরারের হত্যাকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন আদালত।
সোমবার (০১ এপ্রিল) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রিকশা শ্রমিকদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আদালতের রায়ে আবরারের হত্যাকারদের উৎসাহিত করা হয়েছে। এখন বাড়ি থেকে বের হব কিনা তা কিনা আদালত নির্ধারন করে দিবে, গোসল করতে যাব কিনা তাও আদালত নির্ধারন করে দিবে।
প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগ এখন আরো বেপরোয়া : গয়েশ্বর
প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগ এখন বেপোরোয়া বলে মন্তব্য করেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গতকাল সোমবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নাটোরে আহত কর্মীদের দেখার পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি প্রশাসন দলীয় কর্মী হিসেবে রাজনীতি ধ্বংস করার কাজটি করে যাচ্ছে।
এখন দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আছে কিনা সন্দেহ আছে মন্তব্য করে গয়েশ্বর বলেন, এই বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগরসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা শোচনীয়। সেখানে (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে) ছাত্রলীগ নেতা মানিক ধর্ষণের সেঞ্চুরি পালন করেছিলো। এর চেয়ে ঘৃণ্য লজ্জ্বাকর জাতির জন্য কলঙ্ক কি হতে পারে, কোনো কলঙ্কেই তারা কলঙ্কিত না। এসব কলঙ্কিতকে তারা অলঙ্কিত মনে করে। তারা (ছাত্রলীগ) বেপোরোয়া এই কারণে একমাত্র পেশিশক্তি আর প্রশাসনের প্রভাবে তারা আজকে রাজনীতিকে ধ্বংস করে ফেলেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা আপনারা দেখছেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি বন্ধের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে গয়েশ্বর বলেন, ছাত্র রাজনীতি অবশ্যই আমরা চাই। ছাত্র রাজনীতি করেই তো আমরা এখানে এসেছি। এখানে ছাত্র রাজনীতি বাধা নয়। এখানে বাধা, শিক্ষাঙ্গনে একদলীয় ছাত্র সংগঠন এবং তাদের নানা ধরণের নারী ধর্ষণ, নির্যাতনের প্রসার, ভিন্নমতের ছ্ত্রা সংগঠনকে না থাকতে দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কিন্তু সেখানে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন একটা নৃশংস পরিকল্পিত হত্যাকা-ে, আবরার ফাহাদ একজন মেধাবী ছাত্রের হত্যাকা-ের পরে শুধু ছাত্ররা না বাংলাদেশের সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল ফুঁসে উঠেছিলো, প্রতিবাদ জানিয়েছিলো, সেই সময়ে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছিলো, তখন বুয়েট কর্তৃপক্ষ একটা সিদ্ধান্ত নিলো যে, বুয়েটে কোনো রাজনৈতিক দলের সংগঠন থাকবে না। এটা বুয়েটের কর্তৃপক্ষ নিয়েছে, সারা দেশে নয়। যে পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই পরিবেশ এখনো বলবৎ আছে কিনা অর্থাৎ এখনো কি আশঙ্কা আছে কিনা ওই ধরনের হত্যাকা- ঘটার সেটাকে বিবেচনা করে বুয়েটকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে সেখানে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না। বুয়েট কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে, ক্যাম্পাসের পরিবেশ শান্ত রাখা এবং মা-বাবার মেধাবী সন্তানরা যারা এখানে লেখাপড়া করে তাদের লেখাপড়ার স্বার্থে বুয়েট কর্তৃপক্ষ সেখানে রাজনীতি বিরত রাখবে-এটা তাদের সিদ্ধান্ত।
বিশ্ববিদ্যালয় তার নিয়মে চলে, কিন্তু আদালতের আদেশ শিরোধার্য : ভিসি
হাইকোর্টের আজকের আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে বুয়েট ভিসি সত্য প্রসাদ মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, আদালত যা বলবেন, আমরা সেটা মানতে বাধ্য। আদালত সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আদালত আমাদের যে নির্দেশনা দেবেন, আমরা সেই নির্দেশনা মেনে চলব।
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চালু হলে আবার আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটবে কি না, এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ভিসি বলেন, আমি ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারব না।
এক প্রশ্নের জবাবে বুয়েটের ভিসি বলেন, রাজনীতির পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রশাসন সবাই মিলে একটা রূপান্তর করতে হবে। কীভাবে সেটা করা যায়, তা আলোচনার মাধ্যমে বের করতে হবে। বর্তমানে ইউকসুর (ছাত্র সংসদ) কার্যক্রম বন্ধ আছে। সব পক্ষের মতামত নিয়েই একটা কিছু করতে পারবেন তারা। একা কিছু করলে, তা বাস্তবায়ন করা যাবে না। সেটা সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হতে হবে, অর্ডিন্যান্সে যুক্ত হতে হবে। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের অনুমোদন নিতে হবে। তা না হলে এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্সে ঢুকবে না। তাদের সীমাবদ্ধতা আছে। তারা আদালতের আদেশ পালন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় তার নিয়মে চলে। কিন্তু আদালতের আদেশ শিরোধার্য।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে শেরেবাংলা হলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় আদালত ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।
বুয়েটে অবশ্যই ছাত্ররাজনীতি থাকতে হবে: ছাত্রলীগ সভাপতি
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেছেন, বুয়েটে অবশ্যই ছাত্ররাজনীতি থাকতে হবে। বলেন, বুয়েট শিক্ষার্থীর হলে আসন বাতিলের সিদ্ধান্তকে আমরা একটি অন্যায্য সিদ্ধান্ত মনে করছি। আমরা মনে করি এটি অসাংবিধানিক, মৌলিক অধিকার পরিপন্থি এবং শিক্ষাবিরোধী কর্মকাণ্ড। বুয়েটের একজন শিক্ষার্থীর যেমন রাজনীতি না করার অধিকার আছে ঠিক তেমনি একজন শিক্ষার্থীর রাজনীতি করারও অধিকার রয়েছে। অন্যায়ভাবে একজন শিক্ষার্থীও যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেক্ষেত্রে আমরা ছাত্রসমাজকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ফয়সালা করবো।
শনিবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ মন্তব্য করেন সাদ্দাম হোসেন।
ছাত্র রাজনীতির নামে নিরীহ ছাত্রদেরকে খুনি , চাঁদাবাজি , ছিনতাই এবং টেন্ডারবাজিতেই ব্যস্ত , ছাত্ররাজনীতি লাঠিয়াল বাহিনী : ইউএস বাংলাদেশ এডুকেশন এন্ড কালচারাল ডেভলাপমেন্ট অরজানাইজেশন ইউএসএ
দেশ এবং বিদেশের নানাপ্রাপ্ত হতে বুয়েটের এলামনাইরাও ইতোমধ্যে ক্যাম্পাস ছাত্ররাজনীতিমুক্ত রাখার মতামতের সাথে দৃঢ়ভাবে একাত্মতা পোষণ করছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজ নিজ জায়গা থেকে তারা পক্ষে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করছেন।বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্ররা দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিমুক্ত রাখতে চায়। তারা জ্ঞানের চর্চায় বিশ্বাসী, তারা ভবিষ্যতের জন্য সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে চায়। বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি রাখবো যে, এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত বিচার বিভাগে যথাযথভাবে তুলে ধরা হোক। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না থাকার আমাদের যে দাবি তার যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং অটল। যেই ছাত্ররাজনীতি র্যাগিং কালচারকে প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ খুলে দেয়, যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদেরকে যা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনোই বয়ে আনেনি, আনবেও না।
বুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সমর্থন এবং ছাত্রদের খুনি লাঠিয়াল বাহিনী তৈরী বন্ধ করতে হবে : জেএসইফ
জাতীয় সম্মিলিত ফোরাম জেএসএফ , বাংলাদেশ বিবৃতিতে জানিয়েছে , বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্ররা দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনীতি মুক্ত রাখতে চায়। তারা জ্ঞানের চর্চায় বিশ্বাসী, তারা ভবিষ্যতের জন্য সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে চায়। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব দেশপ্রেমিক অভিভাবক, শিক্ষক এবং রাজনীতিবিদদের এ উদ্যোগকে সমর্থন দেওয়া উচিত।লাঠিয়াল খুনিদের আবারো কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ?
বুয়েটের মেধাবী ছাত্রদের দাবির পক্ষে আমাদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে, আমরা তাদের পাশে আছি। কারণ আমরা গুন্ডারাজের অবসান ঘটিয়ে মেধা এবং সৃজনশীলতাকে প্রাধান্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর।
দেশের হাইস্কুল, কলেজ এবং বিভিন্ন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞানচর্চা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যুগোপযোগী করে তোলার উৎকৃষ্ট স্থান। নিঃসন্দেহে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা অনেক পেছনে পড়ে আছি। মালয়েশিয়ার মতো দেশও এগিয়ে আছে। আমাদের পেছনে পড়ার মূল কারণ হচ্ছে, যারা দেশ পরিচালনা করে, তাদের দূরদর্শিতা, দেশপ্রেম ও জ্ঞানের অভাব। বিভিন্ন দিক থেকে আমরা বহু পেছনে আছি। তাই দেশের বৃহত্তর স্বার্থে শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে হবে।
পৃথিবীর কোন জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় রাজনীতি হয় না। দুঃখের বিষয় বাংলাদেশে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে জড়িত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে আসছি এবং চাঁদাবাজি ও মস্তানির কারখানায় পরিণত করছি। এর জন্য দায়ী রাজনীতিবিদরা ও অভিভাবকরা।
বুয়েটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্যায় হলে রাজপথে নামব: নুর
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল নুর বলেছেন, আজকে আবার বুয়েটে হিজবুত তাহরীর, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদের ধোঁয়া তুলছে। দেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বুয়েটে মেধাবী শিক্ষার্থী আবরারকে হত্যার পর ছাত্রলীগের যে অপরাজনীতির কবর রচিত হয়েছে, সেই অপরাজনীতিকে আবার চালু করার জন্য আওয়ামী লীগের সর্ব মহল থেকে আওয়াজ তুলছে।
ছাত্রলীগের নেতারা দলবল নিয়ে বুয়েটে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের হুমকি দিচ্ছে। আমাদের পরিস্কার কথা, বুয়েটের ছাত্রদের সঙ্গে অন্যায় হলে আমরা ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের নিয়ে রাজপথে নামব।
সোমবার মুসলিম লীগের উদ্যোগে ঢাকার একটি হোটেলে রাজনীতিবিদের ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
নুরুল নুর বলেন, বুয়েটের শিক্ষার্থীরা যে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে সারা দেশের লক্ষ-কোটি মানুষ সেটাকে সমর্থন করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সারা দেশের মতো বুয়েট দখলে ছাত্রলীগের অপরাজনীতি চালু করতে চাচ্ছে। স্বাধীন দেশে আজকে আমরা পরাধীনের মতো জীবনযাপন করছি। যেখানে বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার নেই।
বুয়েটের শিক্ষার্থীরা যে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে সারা দেশের লক্ষ-কোটি মানুষ সেটাকে সমর্থন করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সারা দেশের মতো বুয়েট দখলে ছাত্রলীগের অপরাজনীতি চালু করতে চাচ্ছে।
বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কর্নেল অলির সমর্থন
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ডক্টর কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেছেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্ররা দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনীতি মুক্ত রাখতে চায়। তারা জ্ঞানের চর্চায় বিশ্বাসী, তারা ভবিষ্যতের জন্য সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে চায়। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব দেশপ্রেমিক অভিভাবক, শিক্ষক এবং রাজনীতিবিদদের এ উদ্যোগকে সমর্থন দেওয়া উচিত। সোমবার এক বিবৃতিতে এ সমর্থন জানান।
কর্নেল অলি বলেন, বুয়েটের মেধাবী ছাত্রদের দাবির প্রতি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির পক্ষ থেকে আমাদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে, আমরা তাদের পাশে আছি। কারণ আমরা গুন্ডারাজের অবসান ঘটিয়ে মেধা এবং সৃজনশীলতাকে প্রাধান্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, দেশের হাইস্কুল, কলেজ এবং বিভিন্ন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞানচর্চা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যুগোপযোগী করে তোলার উৎকৃষ্ট স্থান। নিঃসন্দেহে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা অনেক পেছনে পড়ে আছি। এমনকি পার্শ্ববর্তী ভারত আমাদের থেকে বহুগুণে এগিয়ে আছে। মালয়েশিয়ার মতো দেশও এগিয়ে আছে। আমাদের পেছনে পড়ার মূল কারণ হচ্ছে, যারা দেশ পরিচালনা করে, তাদের দূরদর্শিতা, দেশপ্রেম ও জ্ঞানের অভাব। বিভিন্ন দিক থেকে আমরা বহু পেছনে আছি। তাই দেশের বৃহত্তর স্বার্থে শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে হবে।
কর্নেল অলি বলেন, পৃথিবীর কোন জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় রাজনীতি হয় না। দুঃখের বিষয় বাংলাদেশে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে জড়িত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে আসছি এবং চাঁদাবাজি ও মস্তানির কারখানায় পরিণত করছি। এর জন্য দায়ী রাজনীতিবিদরা ও অভিভাবকরা।
বুয়েট সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন
ক্যাম্পাসকে ছাত্ররাজনীতি মুক্ত রাখতে শিক্ষকদের পাশে চান তারা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার জরুরি বিজ্ঞপ্তি কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্ট। এই রায়ের পর সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় ক্যাম্পাসকে ছাত্ররাজনীতি মুক্ত রাখতে শিক্ষকদের পাশে থাকার আর্জি জানান শিক্ষার্থীরা।
সোমবার বুয়েট ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পেশ করা হয়। লিখিত এই বক্তব্যে বলা হয়, আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান ও আস্থা রাখি। বুয়েট ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ২৮শে মার্চ মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে বহিরাগত রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের আগমন এবং শোডাউনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালার লঙ্ঘন বলে মনে করে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ২০১৯ সালের ৭ই অক্টোবর আবরার ফাহাদ ভাই এর হত্যাকাণ্ডের পর ৯ই অক্টোবর বেলা সাড়ে ৩ টায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন যে, অনেক প্রতিষ্ঠানেই তো সংগঠন করা নিষিদ্ধ আছে। বুয়েট যদি মনে করে তারা সেটা নিষিদ্ধ করে দিতে পারে। এটা তাদের উপর’ এরই ফলস্বরূপ, বুয়েটের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট প্রশাসন সকল প্রকার সাংগঠনিক রাজনীতি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করেন।
আমরা বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি রাখব যে, এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত বিচার বিভাগে যথাযথভাবে তুলে ধরা হোক। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না থাকার আমাদের যে দাবি তার যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং অটল। যেই ছাত্ররাজনীতি র্যাগিং কালচারকে প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ খুলে দেয়, যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদেরকে যা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনোই বয়ে আনে নি, আনবেও না।
এর চরমতম মূল্য হিসেবে আমরা আমাদের কেমিকৌশল ৯৯ এর সাবেকুন্নাহার সনি আপু, যন্ত্রকৌশল ০৯ এর আরিফ রায়হান দ্বীপ ভাই এবং সর্বশেষ তড়িৎকৌশল ১৭ এর আবরার ফাহাদ ভাইকে হারিয়েছি। ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দিতে পারি।
এতে আরও বলা হয়, দেশ এবং বিদেশের নানাপ্রাপ্ত হতে আমাদের বুয়েটের এলামনাইরাও ইতিমধ্যে আমাদের ক্যাম্পাস ছাত্ররাজনীতিমুক্ত রাখার মতামতের সাথে দৃঢ়ভাবে একাত্মতা পোষণ করছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজ নিজ জায়গা থেকে তারা আমাদের পক্ষে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করছেন। আমরা বর্তমান শিক্ষার্থীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি পূর্ণ ভরসা এবং আস্থা রাখি। তাদের কাছ থেকেই আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি, তারাই আমাদের প্রতিটি ক্লাসরুম প্রতিটি ল্যাবের নায়ক। প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, লেকচারার যারাই আমাদের ক্লাস নিয়েছেন, আমরা গত চার বছরে শিক্ষার্থীরা এমনটা কখনো অনুভব করিনি যে তারাও চান পুনরায় ছাত্ররাজনীতি প্রবেশ করে সেই অন্ধকার দিনগুলো ফিরে আসুক। তারা কখনোই আমাদের অকল্যাণ চাননি, এবং কখনোই চাইবেন ও না। তারা সবসময়ই আমাদের সকল শিক্ষার্থীদের পক্ষেই ছিলেন। আজ এই প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে আমরা আমাদের বুয়েটের সকল শিক্ষকদের কাছে আর্জি জানাচ্ছি তারা যাতে এমন সংকটের মুহূর্তে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান।
আমরা আমাদের মাননীয় ভিসি স্যারের উপর আস্থা পোষণ করি। তার সদিচ্ছা সবসময় আমাদের পক্ষেই ছিল বলেই আমরা বিশ্বাস করি। গত তিন দিন ব্যাপী আন্দোলনের মধ্যে তিনি আমাদের সকল ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করেন, বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং আমাদের কথা শোনার চেষ্টা করেন। আমরা শিক্ষার্থীরা আমাদের মাননীয় ভিসি স্যারকে এই আর্জি জানাচ্ছি তিনি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষককে নিয়ে আপামর বুয়েট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের যে আকাঙ্ক্ষা তা সকল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাতে পূরণ করেন।