• ১০ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৫ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

কী অপরাধে খুন করা হলো দুই ভাইকে, মন্দিরে আগুন দিলো কে? -প্রশ্ন দেশব্যাপী

usbnews
প্রকাশিত এপ্রিল ২৯, ২০২৪
কী অপরাধে খুন করা হলো দুই ভাইকে,  মন্দিরে আগুন দিলো কে? -প্রশ্ন দেশব্যাপী
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

মধুখালী ডুমাইন পঞ্চপল্লীর মন্দিরে আগুন দিলো কে? কী অপরাধে খুন করা হয় সহোদর দুই ভাইকে? এমন সব কথা পুরো মধুখালী উপজেলা ছাপিয়ে এখন জেলা সদরের সবার মুখে মুখে। এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এখন দেশব্যাপী সবাই জেনেছেন।

টিটিসির গেস্ট টিচার পলাশ কুমার দাস আক্ষেপ করে বলেন, হাফেজ শ্রমিক দু’ভাইকে যারা সন্দেহবসত রশি দিয়ে বেঁধে নির্মমভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় হত্যা করেছেন তারা মোটেও ঠিক করেনি। আমি কাজটি মনে-প্রাণে ঘৃণা করি। এর চেয়ে জঘন্যতম কাজ আর কী হতে পারে!

রোববার পঞ্চপল্লী এলাকায় সরেজমিনে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে গেলে বালিয়াকান্দি এলাকার গণমাধ্যমকর্মী কানাই লাল বাবু বলেন, ভাই আমার প্রথম কথা হলো মন্দিরে আগুন ধরালো কারা? দেখছে কারা? এমন দেখা বা শোনা কোনো সাক্ষী আছে কিনা? দেখা কোনো সাক্ষী আছে এমনটা শুনিনি। ২য় কথা হলো দুটি ছেলেকে সন্দেহবশত যারা নির্যাতন করে মারলেন তারা কারা? তাদের পরিচয় কী? দুটি ঘটনার কোনোটারই কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে এতো লুকোচুরি কেন?

পার্শ¦বর্তী উপজেলা মোহম্মদপুরেন স্বপন পাল বলেন, ভাই মন্দির আমাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সেখানে কে বা কার আগুন দিলো, তাকে কেন্দ্র করে দুটো ছেইলে মারা পড়লো এটা করা ঠিক হয়নি। যারা মন্দির আগুন দিয়েছে এটাও যেমন মন্দ কাজ, দুই ভাইকে যারা সন্দেহ করে পিটিয়ে মারছে এটাও জঘন্যতম কাজ। কোনো ধর্মের লোক খুন, মন্দিরে আগুন, এতে আমরা বিশ্বাসী না। ভগবান সকলকে শান্ত করুন।

ডুমাইন ইউনিয়নের মো. মামুন মোল্লা  বলেন, মসজিদ-মন্দির দুটোই ধর্মীয় উপাসনালয়। এগুলো নিয়ে বির্তক নাই। আল্লাহকে যেভাবে যেখানে যে কেউ ডাকবে, সেখানেই তিনি সাড়া দিবেন।
মধুখালী আড়পারার সাগর মিয়া বাগহাট বাজার থেকে আশরাফুলদের বাড়ি আসেন তাদের পরিবারের কী অবস্থা জানতে এবং সমবেদনা জানাতে। তিনিও আগে মাদরাসায় পড়তেন। নিহত দুই সহোদরকে আগে থেকেই চিনতেন। তিনি  বলেন, আমার সাফ কথা, মন্দিরে আগুন দিলো কারা? এবং দুই সহোদর কোরআনের পাখি দু’টিকে পিটিয়ে হত্যা নিশ্চিত করলো ক’জন? তারা এখন কোথায়? ৫ ঘণ্টা ধরে পুলিশের সামনে পিটিয়ে এদেরকে খুন করা হলো, থানার ওসি ছিল অবরুদ্ধ, এত সাহস তারা পেল কোথায়? এদের মদদদাতা কারা? সব খুঁজে বের করতে হবে।

হাফেজ আরশাদুলের একজন সাথী হাফেজ আকরাম আলী সম্প্রতি পুরো কোরআন শেষ করে হাফেজী পাগড়ী নিয়ে তাদের দুই ভাইয়ের কবর জিয়ারত করতে আসেন রোববার সকালে।  তিনি বলেন, আমিও পাল্লা মাদরাসার ছাত্র ছিলাম। তিনি কান্নাকাটি করে বলেন, একটা ছেলে ২২ পারা এবং আরেকটি ছেলে ১৫ পারা কোরআনের হাফেজ। এটা যে কত বড় কঠিন কাজ এবং কত বড় নেয়ামত এটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।
তিনি আরো বলেন, আমার মনে হয় না এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে! খুনিরা ধরা পড়বে! তদন্তেই সব শেষ।

মধুখালী ডুমাইন পঞ্চপল্লী এবং চোপোড় ঘাট এলাকাবাসীর সবার মুখে একটাই কথা, আসলে মন্দিরে হামলা বা আগুন দিলো কারা? আর দুই সহোদর হাফেজ ভাইকে মারলো কারা? যেহেতু মন্দিরে আগুন দেয়া লোকগুলোকে চিহ্নিত করা যায়নি, তাহলে মামলার ভবিষ্যৎ কী? কী অপরাধে দুটি হাফেজ ছেলেকে মরতে হলো।

মাগুরা মহম্মদপুর পাল্লা মাদরাসায় আসা-যাওয়ার সময় হাফেজ আশরাফুল ও আরশাদুল নওয়াপাড়ার মধুমতী নদী পার হতো ইঞ্জিনচালিত নৌকায়। ঐ ঘাটের ইজারাদার মো. রবিউল ইসলাম  বলেন, এ হত্যার বিচার যদি মধুখালিবাসী চায় তাহলে হবে। ফরিদপুরের ডিসি -এসপি চাইলে হবে না। কারণ হিসেবে তিনি বললেন, বড়োর ওপরেও বড় আছে। মধুখালী চোপড়ঘাট এবং পঞ্চপল্লীতে এখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিñিদ্র নিরাপত্তা রয়েছে।

চোপড়ঘাট এলাকায় নিহত হাফেজ নির্মাণ শ্রমিক আশরাফুল ও আরশাদুলের জন্মস্থান। বাড়ির পাশে এলাকার কবরস্থান। ওখানেই চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছে কোরআনের পাখি দুই ভাই। এখনও নিরব নিথর পুরো এলাকা। কী হয়ে গেল? এলাকার বহু মুরব্বি, আপনজনরা বলাবলি করছেন। প্রিয় মুখ দুটির কথা মনে করে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন ওদের নিঃস্বার্থ ভালবাসার মানুষগুলো। ওদের হত্যাটা কেউ মেনে নিতে পারছেন না।
সকলের মুখে একটাই প্রশ্ন? মন্দিরে আগুন দিলো কারা? কী অপরাধে খুন করা হলো হাফেজ দুইটি ভাইকে।