ইসরাইলি দখলদার বাহিনী রাফাহ শহরের একটি পরিকল্পিত নিরাপদ অঞ্চলে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের একটি তাঁবুতে বোমা হামলা চালিয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলায় কমপক্ষে ৪৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের অনেকেই নারী ও শিশু। আল-জাজিরা জানিয়েছে, হামলার পর তাঁবুতে আগুন ধরে যায়। এতে অনেকে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। এছাড়া তাল-আস-সুলতান এলাকাতেও হামলা হয়েছে। সবমিলিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনী জাবালিয়া, নুসেইরাত এবং গাজা সিটিসহ অন্যান্য এলাকায় উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্রে বোমাবর্ষণ করেছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব হামলায় কমপক্ষে ১৬০ জন নিহত হয়েছেন।
ইসরাইল সরকারের মুখপাত্র আভি হাইম্যান স্বীকার করেছেন, রাফাতে একটি শিবিরে হামলায় ৪৫ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর তদন্তের প্রাথমিক ফলাফল থেকে জানা যায় যে, তারা ইসরাইলি বিমান হামলার কারণে সৃষ্ট আগুনে মারা যেতে পারে। ব্রিটিশ টেলিভিশনে একটি সাক্ষাৎকারে, যা হাইম্যান তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেন, তিনি বলেন যে, তদন্ত চলছে এবং আরো বিশদ বিবরণ দেওয়া এড়িয়ে গেছে। ফিলিস্তিনি প্রত্যক্ষদর্শী এবং আল জাজিরার ফ্যাক্ট-চেকিং এজেন্সি সানাদ জানিয়েছে, তাল আস-সুলতানে বেসামরিক নাগরিকদের আশ্রয় দেওয়া শিবিরটি ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৬ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ৮০ হাজারের বেশি। হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এদিকে হামাস বলেছে, ফিলিস্তিনিদের অবশ্যই গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাতে ইসরাইলি বাহিনীর ‘গণহত্যার’ বিরুদ্ধে জেগে উঠতে হবে এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। টিআরটি ওয়ার্ল্ড জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনটি রোববার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘রোববার সন্ধ্যায় উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনিদের তাঁবুতে অপরাধী দখলদার সেনাবাহিনী যে ভয়ঙ্কর গণহত্যা চালিয়েছে, তার প্রেক্ষিতে আমরা পশ্চিম তীর, জেরুজালেম, অধিকৃত অঞ্চল এবং বিদেশে অবস্থানরত আমাদের জনগণকে জেগে উঠার এবং চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানাই।’
তবে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে, তারা ‘নির্ভুল অস্ত্র’ ব্যবহারকারী হামাস যোদ্ধাদের টার্গেট করে হামলা চালিয়েছে। আগুন লাগার সময় বেসামরিক লোকজন আহত হয়েছে বলেও স্বীকার করেছে ইসরাইল। যদিও নিহতের বিষয়ে তারা কিছু বলেনি। গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৬ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ৮০ হাজারের বেশি। হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
বেলজিয়াম ফিলিস্তিনি শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতিতে ৫৪ লাখ ডলার ব্যয় করবে : বেলজিয়ামের উন্নয়ন ও সহযোগিতা মন্ত্রী ক্যারোলিন গেনেজ বলেছেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ‘একটি মুক্ত, গণতান্ত্রিক এবং কার্যকর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য সমর্থন পাওয়ার যোগ্য’।
এক্স-এর একটি পোস্টে গেনেজ বলেছেন যে, তার দেশ ফিলিস্তিনি শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ৫ মিলিয়ন ইউরো (৫৪ লাখ মার্কিন ডলার) ব্যয় করবে। তিনি যোগ করেন যে, ‘ইসরাইলি দখলদারিত্ব পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে শিক্ষার সুযোগকে কঠিন এবং প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে’।
তিনি বলেন, ‘(আশা করছি শিগগিরই) যুদ্ধবিরতির পর গাজার স্কুল অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ একটি অগ্রাধিকার’। ‘বেলজিয়ান সমর্থন এতে অবদান রাখবে’ -তিনি যোগ করেন। গেনেজ ‘গাজা থেকে আসা নাটকীয় খবর’ সম্পর্কেও মন্তব্য করেছেন যেখানে রাফাতে ‘আবারও অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ বোমা হামলার শিকার হয়েছে। সূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা।
অবরুদ্ধ গাজার রাফা অঞ্চলে নিরীহ মানুষের উপর চালানো ইসরায়েলী বাহিনীর বর্বরোচিত হামলায় নিন্দার ঝড় বইছে বিশ্বজুড়ে।আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রাফা অভিযান বন্ধের নির্দেশের পরে চালানো এই হামলার ব্যাপারে অবশেষে মুখ খুললেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইউরোপের মিত্র দেশগুলোর শক্ত সমালোচনার মুখে এ হামলাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা’ বললেন দেশটির যুদ্ধকালীন সরকার প্রধান। সোমবার ইসরায়েলের পার্লামেন্ট ভবন নেসেটে দেওয়া এক ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন,ইসারেয়েলী প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজায় বেসামরিক মৃত্যু এড়ানোর জন্য ‘সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা’ নিয়ে আসছে।
ভয়াবহ এ হামলাতেও বেসামরিক লোকজনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর ‘সর্বোচ্চ চেষ্টা’ আইডিএফ করেছে বলেও তিনি দাবি করেন।নেতানিয়াহু বলেন,রাফা অঞ্চল থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ১ মিলিয়নের কাছাকাছি লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।এরপরেও সেখানে বেদনাদায়ক একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
শরণার্থী শিবিরে চালানো এ হামলার পুরো প্রক্রিয়া তদন্ত করে এর ফলাফল সবার সামনে প্রকাশ করা হবে বলে তিনি জানান। এ হামলায় অত্যাধিক বেসামরিক লোক নিহতের ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বললেও ফের রাফা ও গাজা উপত্যকায় চলমান আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন নেতানিয়াহু।
তিনি বলেন, ‘সমস্ত লক্ষ্য অর্জন হওয়ার আগ পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধের কোন অভিপ্রায় ইসরায়েলের নেই।যুদ্ধ থেকে এই মুহূর্তে সরে এলে উগ্রবাদীদের জয় হবে,ইরানের জয় হবে।’
গত রবিবার রাতে রাফা অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহতম হামলা চালায় ইসারেয়েলী বাহিনী। রাফায় ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত তাল আস-সুলতান এলাকার একটি আশ্রয়শিবিরে চালানো এই বিমান হামলায় সরাসরি বোমার আঘাত ও এর ফলে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে অনন্ত ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছে শতাধিক।
রাফায় নজিরবিহীন এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) সাম্প্রতিক নির্দেশনা মেনে রাফায় হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই জোটের প্রধান কূটনীতিক জোসেফ বোরেল রোববারের হামলাকে ‘ভয়াবহ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।জাতিসংঘের শরণার্থী শিবির(ইউএনআরডাব্লিএ) এই হামলা গাজা উপত্যকা যে ‘পৃথিবীর নরকে’ পরিণত হয়েছে তার আরেকটি উদাহরণ বলে উল্লেখ করেছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহবান। ইতালির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরাইলের গুইডো ক্রোসেত্তো গাজায় চলমান আগ্রাসনের ‘ আর গ্রহণযোগ্যতা নেই’ বলে উল্লেখ করেন।
নেসেটে এই বক্তব্য প্রদানকালে ইসরায়েলী সরকার প্রধান বেশ কয়েকবার জিম্মি পরিবারের সদস্যদের হট্টগোলের মধ্যে পড়েন। এ সময় তিনি জিম্মিদের মুক্ত করার ব্যাপারে হামাসের সঙ্গে চলমান আলোচনায় সরকারের ‘আন্তরিকতার’ কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।