আদালতের এক রায়ের পর ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের শিক্ষাঙ্গন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন। তারা ৩০ জুন পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে ‘কোটা পদ্ধতি বাতিল’ কার্যকর না হলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলছেন, দেশের প্রশাসনে মেধাবী ও যোগ্য লোকের খুবই অভাব। মেধাহীন এবং দলদাসে ভরে গেছে প্রশাসন। অথচ বাংলাদেশের মেধাবীরা বিদেশে গিয়ে সাফল্য দেখাচ্ছেন। কোটা পদ্ধতি চালু রাখার কারণে দেশের প্রশাসনে মেধাবীরা সরকারি চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন। পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ (বিসিএস) সরকারের বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতির কারণে মেধাবী ও যোগ্য ছেলেমেয়েরা সুযোগ পাচ্ছেন না। অথচ কম মেধাবী এবং ক্লাসের পিছনের সারির ছেলেমেয়েরা নিয়োগ পরীক্ষায় অনেক কম নম্বর পেয়েও মুক্তিযোদ্ধার কোঠায় তারা সরকারি চাকরি পাচ্ছেন। এতে একদিকে রাষ্ট্রের প্রশাসনে মেধাহীন লোকজন চাকরি পাওয়ায় সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হচ্ছে; যারা খেসারত দিতে হচ্ছে নাগরিককে। অন্যদিকে মেধাবীরা দেশে প্রত্যাশিত চাকরি না পেয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছেন এবং বিদেশে মেধার স্বাক্ষর রেখে কাজ করছেন।
সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের রায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক প্রফেসর ড. আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন যৌক্তিক। হাইকোর্ট কোনো বিষয়ে রায় দিলেই সে বিষয়টা ন্যায়সঙ্গত হবে এমন মনে করার কারণ নেই। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বের আদালতের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের চেয়ে জাতীয় সংসদ অনেক বেশি পাওয়ারফুল। সেখানেই আইন প্রণয়ন করা হয় এবং আদালতে তা বাস্তবায়ন করা হয়। সুতরাং এই বিষয়টা জাতীয় সংসদে সমাধান হওয়া উচিত।
হাইকোর্টের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের রায়ের প্রতিবাদে ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশের শিক্ষাঙ্গন। গতকাল ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার সরকারি ৭ কলেজ ও বরিশাল বিএম কলেজ উত্তাল হয়ে উঠেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে কলাভবন, মলচত্বর, ভিসি চত্বর, টিএসসি হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করে। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘ কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি সেøাগান দেন। শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে বাতিল না করলে লাগাতার আন্দোলন ও প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। একই হুংকার দিয়েছে চট্টগ্রাম ও বরিশালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঈদের পর একই দাবিতে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন।