• ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৫ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

কোটা বিরোধী আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি, ‘বাংলা ব্লকেড’ আসছে হরতাল

usbnews
প্রকাশিত জুলাই ৭, ২০২৪
কোটা বিরোধী আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি,  ‘বাংলা ব্লকেড’ আসছে হরতাল
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন তীব্র হচ্ছে। টানা চতুর্থদিনের মতো রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক, মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে আন্দোলনকারীরা। দাবি আদায়ে আজ দেশের সকল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্রধর্মঘট পালন করবে শিক্ষার্থীরা। গতকালের অবরোধ কর্মসূচি থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ এর নতুন কর্মসূচি যোগ হয়েছে। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যে টাঙ্গাইল, রাজশাহী, রংপুর ও কুষ্টিয়ায় মহাসড়ক এবং ঢাকার তাঁতীবাজার মোড় ও খুলনায় সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

এ সময় বিচার বিভাগ ও শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর হটকারী সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানায় আন্দোলনকারীরা। বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। অন্যথায় হরতালের মতো কর্মসূচি দেয়ারও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদুল ইসলাম বলেন, রোববার ‘বাংলা ব্লকেড’ শুধু শাহবাগ নয়, রাজধানীর সায়েন্সল্যাব, মতিঝিল, নীলক্ষেত, চানখারপোল, কাঁটাবনসহ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আমরা অবস্থান করবো। যারা ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় আছেন তারা মহাসড়ক অবরোধ করবেন।

এসময় আন্দোলনকারীদের হাতে জাতীয় পতাকা ও কোটাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত পেস্টুনও দেখা যায়। কাফনের কাপড় পরিধান করে ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুর আরেকবার”, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, “কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’›- ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে।

অবরোধ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বরাবরের ন্যায় তাদের ৪ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- ১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে। ২. ১৮› এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। ৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। ৪. দূর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামীতে সারা দেশে সর্বাত্মক হরতালের কর্মসূচি দেয়া হবে। কোটা বাতিলের দাবিতে উত্তাল সারাদেশ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবে না

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি রাজধানীর শাহবাগে

চার দফা দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল দুপুরের পর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে মধুর ক্যান্টিনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে তারা শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে বাধা দেয়নি। সেন্ট্রাল লাইব্রেরি থেকে শিক্ষার্থীদের বিশাল মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন, বিজনেস ফ্যাকাল্টি, মাস্টার দা’ সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, ভিসি চত্বর, টিএসসি, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) হয়ে পলাশী, আজিমপুর, নীলক্ষেত প্রদক্ষিণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে উত্তেজনা তৈরি হয়। একপর্যায়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে অবরোধ শুরু করে। এ সময় ওই এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। তীব্র ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। অনেকে বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে গন্তেব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।

প্রায় ১ ঘণ্টার অবরোধ শেষে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে অবরোধ তুলে নেয় আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থী ও আদালতকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে সরকার দায়িত্বহীন আচরণ করছে। নির্বাহী বিভাগ তার দায় এড়াতে পারে না। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কোটা থাকবে না। তাহলে কোটা কেন আবার ফিরে এলো? কেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসন করা হচ্ছে? দাবি আদায়ে প্রয়োজনে আমরা হরতালের মতো কর্মসূচি পালন করবো। এটা শুধু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নয়। শিক্ষক-অভিভাবকদেরও আন্দোলনে নেমে আসতে হবে। তিনি বলেন, ছাত্রধর্মঘট ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিতে ইতিমধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাবো না। এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও সায়েন্স লাইব্রেরি খুলে দেয়ার আহ্বান জানান। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো লাইব্রেরি খুলবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। এ ছাড়া হলে হলে শিক্ষার্থীদের বাধা দেয়ায় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন নাহিদুল ইসলাম। বলেন, হলে হলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাধা দিচ্ছে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা। আমরা কিন্তু হলের তালা ভাঙতে জানি।

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ রাবি শিক্ষার্থীদের: কোটা বাতিলে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনের ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মহাসড়কে অবস্থান করেন তারা। শিক্ষার্থীরা বলেন, কোটা বাতিলের যে দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমেছে সে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এ সময় আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও বিশ্ববিদ্যালয় ফিশারিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, আমি চাচ্ছি কোটা আন্দোলন আরও জোরদার হোক। এই বৈষম্য আমিও চাই না। আমি চাই কোটা না থাক। মেধার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হোক। আমি আপনাদের আন্দোলনের পক্ষে আছি। আন্দোলন সফল হোক।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ: কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করেছে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সদর উপজেলার আশেকপুর বাইপাস এলাকায় মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে তারা। এ সময় মহাসড়কে ঢাকা ও উত্তরবঙ্গগামী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যানজট ছাড়িয়ে যায় প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায়। পরে বেলা ১২টার দিকে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।

চবি শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ: চট্টগ্রাম নগরীর ব্যস্ততম সড়ক ২ নম্বর গেট অবরোধ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে নগরীর চকবাজার-২ নম্বর গেট, ২ নম্বর-জিসি, বায়েজিদ-২ নম্বর এবং মুরাদপুর-২ নম্বরে প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। তৈরি হয়েছে দীর্ঘ যানজট। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ছিল সাম্যভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু সরকারি চাকরিতে কোটার ফলে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেধা থাকার পরও যোগ্য চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

তাঁতীবাজারে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর আগে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের দিকে রওয়ানা হলে তাঁতীবাজার মোড়ে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। শিক্ষার্থীরা বলেন, বিগত চারদিনের তুলনায় আজকের আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি হয়েছে। আমাদের আজকের কর্মসূচি ছিল গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু পুলিশ আমাদের তাঁতীবাজার মোড়ে আটকে দিয়েছে। তাই আমরা এখানেই অবস্থান করেছি।

সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ শাবি শিক্ষার্থীদের: হাইকোর্ট কর্তৃক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশের প্রতিবাদ এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। এ সময় সড়কের দুই পাশে প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

খুলনায় মহাসড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের: একই দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল ৩টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। তাদের কর্মসূচিতে খুলনার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এতে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, শিববাড়ি-সোনাডাঙ্গা সড়ক ও শিববাড়ি-ময়লাপোতা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ বেরোবি শিক্ষার্থীদের: এদিকে পূর্বঘোষিত চার দফা দাবিতে প্রায় দুইঘণ্টা ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করে তারা। মহাসড়ক অবরোধের আগে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্কের মোড় হয়ে রংপুর নগরীর প্রবশদ্বার মডার্ণ মোড়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে।

পবিপ্রবিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ: বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) বহিঃস্থ ক্যাম্পাস বাবুগঞ্জের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক থেকে শুরু হয়ে বঙ্গবন্ধু চত্বরের সামনে সমবেত হয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা কোটাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, শুধু বিসিএস নয় সরকারি সকল সেক্টরে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করতে হবে এবং পোষ্য কোটার মতো অযৌক্তিক সকল কোটা বাতিল করতে হবে। তারা বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে নই, বরং মুক্তিযুদ্ধের নাম ব্যবহার করে অযৌক্তিক কোটার বিরুদ্ধে।

হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: একই দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এ কর্মসূচি পালিত হয়। শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আন্দোলনটি সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে এবং অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

বৃষ্টি উপেক্ষা করে মহাসড়ক অবরোধ ইবি শিক্ষার্থীদের: একই দাবিতে গতকাল তৃতীয়দিনের মতো আন্দোলন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। সকাল ১১টায় ক্যাম্পাসের বটতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে তারা। পরে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। বৃষ্টির মাঝেও তারা মহাসড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৪ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী এ আন্দোলনে অংশ নেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, যে বৈষম্য থেকে মুক্তির জন্য দেশকে স্বাধীন করা হয়েছিল, সেই বৈষম্য যেন আর না থাকে তাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমেছে। বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থী চাকরি না পাওয়ায় হতাশায় আত্মহত্যা করছে। অথচ বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বহাল রেখে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে।

 

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি আরও তিনটি দাবি জানাচ্ছেন। এগুলো হলো ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে, সে ক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী শুধু অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা-সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

এদিকে আজ রোববার সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট পালনের আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৬৩টি বিভাগ-ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা এক শিক্ষার্থী জানান, আজকের কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজসহ ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চলতে থাকবে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে আন্দোলনের মুখে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে বিদ্যমান ৫৬ শতাংশ কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে। ২০২১ সালে ওই পরিপত্রের ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল নিয়ে হাইকোর্টে রিটের প্রেক্ষিতে গত ৫ জুন হাইকোর্ট পরিপত্রটি বাতিল করে এবং সর্বশেষ বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখা হয়। এরপর ১ জুলাই থেকে ফের আন্দোলনে নামেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।