• ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া , উত্তপ্ত সারাদেশ

usbnews
প্রকাশিত জুলাই ৮, ২০২৪
কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া , উত্তপ্ত সারাদেশ
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

ঢাকা ব্যুরো :  সরকারি  চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ উত্তপ্ত। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে আন্দোলকারীদের অবস্থানে স্থবির হয়ে পড়েছিল গোটা শহর। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুমিল্লা, খুলনা, রংপুর, সাভার, সিলেট, দিনাপজুর গাজীপুরসহ সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাগুলো উত্তাল হয়ে উঠে। সড়ক মহাসড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা সারাদিন অবস্থান করে।

এতে গোটা দেশের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। রাজধানী ঢাকার শাহবাগ মোড় ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের অমর একুশে হল, শহীদুল্লাহ্ হল ও ফজলুল হক মুসলিম হল, বোরহান উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ও বদরুন্নেসা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা চানখারপুলে; ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ নীলক্ষেত, বাংলা মোটর, সাইন্সল্যাব মোড়, আগারগাঁও মোড় ও মহাখালি রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। অবরোধের কারণে হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, কমলাপুর, রামপুরা, হাতিরঝিল, নারায়ণগঞ্জ, পোস্তগোলা, পাগলা, ডেমরা স্টাফ- রকায়ার্টার, চিটাগাং রোড, শনির আখড়া, সাইনবোর্ড এলাকায় যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে।

শাহবাগ মোড়ে মিছিল নিয়ে এসে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে যায় আন্দোলনকারীরা। এর আগে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন তারা। শিক্ষার্থীদের অবস্থান করা এলাকাগুলোতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন গণপরিবহনে থাকা যাত্রীরা। দীর্ঘ যানজটে গণপরিবহনের মাঝে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সকেও আটকা পড়তে দেখা গেছে। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবিতে এ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।  শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে। সোমবার (আজ) বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ চলবে। বিকেল সাড়ে তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি শুরু হবে।

অবরোধে ঢাকায় অচলাবস্থা : সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা বাতিল সংক্রান্ত ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে দেশব্যাপী ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে এবার চার দফার পরিবর্তে এক দফা দাবি ঘোষণা করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার বিকাল ৩টা থেকে পূর্বঘোষিত কঠোর কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশব্যাপী বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচি থেকে এক দফা দাবি ঘোষণা করেন তারা।

শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবি হলো- সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে সকল ধরনের বৈষম্যমূলক ও অযৌক্তিক কোটা বাতিল করে সংসদে আইন পাস করতে হবে। এছাড়া আজ সোমবার বিকাল ৩টা থেকে সারাদেশে একযোগে অবরোধ কর্মসূচি (বাংলা ব্লকেড) পালন করা হবে বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।

রোববার বিকাল ৩টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে শিক্ষার্থীরা। ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে এ আন্দোলন করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

শাহবাগ মোড় থেকে শিক্ষার্থীদের পক্ষে এক দফা দাবি ঘোষণা করেত বলেন, প্রধানমন্ত্রী! এখন সারা বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ আপনার দিকে চেয়ে আছে। আমাদের এক দফা দাবি- সকল গ্রেডে সকল প্রকার অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংসদে আইন পাস করতে হবে। ৫৬ শতাংশ কোনদিন কোটা হতে পারে না, এটা আমরা মানি না, মানবো না। আমাদের আন্দোলন নিয়ে নানা কথা ছড়ানো হচ্ছে; আমরা বলতে চাই আমাদের দাবি যেদিন মেনে নেওয়া হবে সেদিন আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যাব।

পূর্বঘোষিত কঠোর কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মোড় অবরোধ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজসহ আশপাশের আরো কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে পুরো ঢাকা শহর। আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানীর বাইরে সারাদেশের জেলাশহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মহাসড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষার্থীরা। সারাদেশের এই অবরোধ কর্মসূচিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নাম দিয়েছে ‘বাংলা ব্লকেড’।

দুপুর ৩টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে নিজস্ব ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে এ কর্মসূচিতে যোগ দেয় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জমায়েত হয়। পরে শিক্ষার্থীরা আলাদা আলাদা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে শাহবাগ, চারখারপুল, নীলক্ষেতে মোড় অবরোধ করেন। ঢাবি শিক্ষার্থীদের সাথে একযোগে আন্দোলনে যোগ দেন আশেপাশের বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর সায়েন্সল্যাব অবরোধ করেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। নীলক্ষেত অবরোধ করেন ইডেন মহিলা কলেজ ও বদরুন্নেসা মহিলা কলেজসহ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরা।

বিকাল ৪টায় বৃহৎ মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এসময় শাহবাগের আশেপাশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ও অবরোধ করেন তারা। ফলে এসব এলাকায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকাল ৩টা থেকে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচি শেষ হয় রাত ৮টার পর। ফার্মগেট-শাহবাগ, গুলিস্তান-নিউ মার্কেট, শাহবাগ-পল্টন-মগবাজার রোড, শাহবাগ -সাইন্সল্যাব রোড এসব গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকলেও অ্যাম্বুলেন্সের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য জায়গা করে দেয় শিক্ষার্থীরা।

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আজ রোববার বিকেল থেকে সোয়া চার ঘণ্টা রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। রাত ৮টার দিকে এদিনের কর্মসূচি শেষ করে সোমবার আবারও অবরোধের ডাক দিয়েছেন তাঁরা

শাহবাগ মোড় থেকে সন্ধ্যায় আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা তিন শিক্ষার্থীকে ডেকে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। দীর্ঘ আলোচনার পর রাত ৮টার দিকে ফিরে এসে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। কর্মসূচি ঘোষণা করে  আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা  বলেন, আমাদের ক্লাস পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অনির্দিষ্টকালের জন্য অব্যাহত থাকবে। আগামীকালও সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্লকেড কর্মসূচি চলবে। আজকে আমরা শাহবাগ থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত গিয়েছি আগামীকাল ফার্মগেট পার হয়ে যাব। আগামীকাল সাড়ে ৩টায় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হয়ে এই কর্মসূচি শুরু করব আমরা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা  আরো বলেন, আমরা ব্লকেড কর্মসূচিতে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। অনেকের সাথে সমন্বয় করতে পারিনি কিন্তু শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছে। প্রধানমন্ত্রী এই সম্পর্কে কথা বলেছেন। আমরা সংবিধান দেখিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিকতা প্রমাণ করেছি। সংবিধানে নাগরিকের সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। আমরা সংবিধানের পক্ষে লড়াই করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে সংসদে দাঁড়িয়ে কোটা বাতিল করেছিলেন। আমরা আশা করি এবারও তিনি শিক্ষার্থীদের দাবিকে মেনে কোটা আন্দোলনের চূড়ান্ত সুরাহা করবেন।

অবরোধ কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা, একাত্তরের পথ ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’, ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ,’ ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার”, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল থেকে মিন্টো রোডের রাস্তা ব্লক করে নামাজের ওয়াক্ত হলে রাস্তাতেই আসর নামাজ আদায় করতে দেখা যায় কয়েকজন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীকে।

একদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস, পরীক্ষা বর্জন করে কোটা সংস্কার আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে দেশের ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করছে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মাচারী সমিতিগুলো। ফলে দেশের উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে একটা অচলাবস্থা বিরাজ করছে। অ্যাকাডেমিক থেকে শুরু করে দাফতরিক সকল ধরনের সেবা স্থগিত হয়ে আছে। শিক্ষকদের এ আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমনকি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ব্লকেড : ফের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন তারা। মিছিলটি প্রধান ফটকে (ডেইরি গেটে) গিয়ে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির মাধ্যমে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে।

বিক্ষোভ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। একটি কুচক্রী মহল বারবার বলার চেষ্টা করছে বা অপপ্রচার চালাচ্ছে আন্দোলনকারীদের মধ্যে নাকি জামায়াত-বিএনপি ভর করেছে। স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া মাত্রই আমাদের আন্দোলন শেষ। কাজেই এটা বলার সুযোগ নেই যে আমরা কোনো দলের হয়ে কাজ করছি।’

এর আগে গত শনিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, হিন্দু ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রার প্রতি সম্মান জানিয়ে শিক্ষার্থীরা রোববার তাদের মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচির সময় পরিবর্তন করে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নির্ধারণ করে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে নেমে এসে মহাসড়কের উভয় লেন অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।

এদিকে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় বরাবরের মতো আজও মহাসড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যানজটে আটকে থাকা যাত্রীরা।
চবি বিক্ষোভের নগরী : সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বহালে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের প্রতিবাদে টানা তৃতীয় দিনের মতো চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ (চবি) চবি অধিভুক্ত কলেজসমূহের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছে। গতকাল রোববার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে চট্টগ্রাম শহরের ষোলশহর স্টেশনে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। বিকাল ৪টায় ষোলশহর স্টেশন থেকে একটি মিছিল নিয়ে নগরীর ২ নম্বর গেট অবরোধ করে রাখা হয়। এতে সড়কের উভয় লেনে গাড়ি চলাচল বন্ধ হলে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত হয় অবরোধস্থল।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, কোটার অযৌক্তিক প্রথার বিরুদ্ধে পুরোদেশব্যাপী আমাদের আন্দোলন চলছে। এটা আমাদের ন্যায্য দাবি। আমরা চাই কোটা নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করা হোক। একইসাথে যৌক্তিক সংস্কার করা হোক। দাবি আদায় না করে আমরা রাজপথ ছাড়বো না। আজ যদি মেধাবীদের সঠিক মূল্যায়ন করা না হয় দেশ একদিন মেধাশূন্য হয়ে পড়বে। দেশ থেকে মেধাপাচার হয়ে যাবে, এতে পুরো জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিক্ষার্থীদের এই অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

গান-কবিতায় রাবিতে প্রতিবাদ : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিক্ষার্থীরা গান-কবিতা-শ্লোগানের মাধ্যমে কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়েছে। এসময় সকল ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ও রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দেন তারা। গতকাল রোববার বেলা তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে প্রতিবাদ সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেন রাবির ‘কোটাপদ্ধতি সংস্কার আন্দোলন’। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও মেস থেকে মিছিল নিয়ে প্যারিস রোডে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিক প্রতিবাদ সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ হয়। এসময় তারা নাটক, কবিতা, ২৪ এর স্টেটমেন্ট, এছাড়াও একক অভিনয় পরিবেশন করে।

এসময় কোটা বিরোধী আন্দোলনে সমন্বয়ক আমানুল্লাহ আমান বলেন, আগামীকাল থেকে আমরা ঢাকা-রাজশাহীর যে রেললাইন রয়েছে তা অবরোধ করবো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের শিক্ষার্থী ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে। ক্যাম্পাসের কোনো বাসও চলাচল করতে পারবে না।

কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া

রোববার দুপুর দুইটা থেকেই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থগারের সামতে জড়ো হতে থাকেন। দুপুর তিনটার আগেই কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে হাজারো শিক্ষার্থীর জনসমাগমে রূপ নেয়। ঠিক তিনটায় শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন শাহবাগের উদ্দেশ্যে। শুধু ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেই শাহবাগ মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলে— কোটা না মেধা, মেধা মেধা; কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক; আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই; আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম; হাইকোর্ট না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ; দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ ইত্যাদি স্লোগান দেন ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবিগুলো হলো: 

১/ ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা।

২/ ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা।

৩/ সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া।

৪/ দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

কোটাবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। প্রতিদিনই নারী শিক্ষার্থীরা তাদের হল থেকে আলাদা করে বড় একটি মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। মিছিলের প্রথম সারিতেই মেয়েরা অবস্থান নেয় প্রতিদিন। শাহবাগেও কোটাবিরোধী স্লোগান, বিদ্রোহী গান, কবিতা আবৃত্তিতে মেয়েদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। আন্দোলনের নেতৃত্ব স্থানীয়রা বলেন, মেয়েদের হলগুলো থেকে প্রথম দুইদিন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কম ছিল। তারা ভয়ে শুরুতে আসত না। কিন্তু এখন মেয়েদের সবগুলো হল থেকেই উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ হচ্ছে।

সিলেট শাবি বিক্ষোভ: তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষার্থীরা। এরই অংশ হিসেবে গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। পরে মিছিলটি সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধের লক্ষ্যে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভ মিছিলে ‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা’, ‘আপোষ না সংগ্রাম? সংগ্রাম সংগ্রা’, ‘দালালি না রাজপথ? রাজপথ রাজপথ’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘মেধা হত্যার অপর নাম কোটা প্রথার জয়গান’, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোটা প্রথা মানেনা’, ‘চলছে দাবি চলবে কোটার শিকড় জ্বলবে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।

এসময় আন্দোলনকারীরা বলেন, কোটা প্রথা বৈষম্যমূলক। আমরা চাই ২০১৮ সালে সরকারের জারিকৃত পরিপত্র পূণর্বহাল করা হোক। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে আমরা আন্দোলন থেকে পিছু হটবোনা।

কুষ্টিয়ায় ইবি উত্তাল : কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ এর অংশ হিসেবে খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। পরে বিক্ষোভটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মূল ফটক সংলগ্ন মহাসড়ক অবরোধ করে সেখানে অবস্থান করেন। এসময় আন্দোলনকারীরা মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ও টায়ার জালিয়ে অবরোধের সৃষ্টি করে।

এসময় তারা ‘কোটা প্রথায় নিয়োগ পেলে, দুর্নীতি বাড়ে প্রশাসনে’, ‘দেশটা নয় পাকিস্তান, কোটার হোক অবসান’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, কোটা প্রথার ঠাই নাই’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় কোটার ঠাই নাই’, ‘১৮’র পরিপত্র’ পুনর্বহাল করতে হবেসহ নানা স্লোগান দেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ৭১ এ দেশ স্বাধীন হয়েছে বৈষম্য থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য। কিন্তু বর্তমানে কোটা প্রথা বহাল রাখায় সেই বৈষম্যই রয়ে গেছে। তাই আজ একযোগে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের বাংলা ব্লকেডের অংশ হিসেবে আমরা আন্দোলনে নেমেছি।

কুমিল্লায় মহাসড়ক অবরোধ : আবারো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ‘কোটা বৈষম্যর প্রতিবাদে বাংলা ব্লকড’ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়’ শিরোনামের ব্যানারে এ অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। এসময় মহাসড়কে প্রায় ২০ কিলোমিটারের মত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দিতে থাকেন।

বিক্ষোভ কর্মসূচি ও সড়ক অবরোধের বিষয়ে, আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থী মহি উদ্দিন বলেন, বাংলার চাকরির বাজার এমনিতেই খুবই প্রতিযোগিতামূলক। তার উপর আবার সরকারি চাকরিতো সোনার হরিণ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের সরকারের একটি পরিপত্রে ১ম ও ২য় শ্রেণির চাকরীতে সকল প্রকার কোটা বাতিল, ঘোষণা করে, কিন্তু সাম্প্রতিক হাইকোর্টের একটি রায়ে ওই পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণার পরপরই কোটা আন্দোলন আবার প্রবলভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। জনপ্রশাসনে বর্তমানে মেধাবিদের খুবই অভাব, এসব কোটাধারি নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে এই খাতটাকে দুর্নীতির চরম লেভেলে নিয়ে গেছে, যা সাম্প্রতিক কয়েকটা ঘটনা পরিলক্ষণ করে বুঝা যায়। তাই বাংলার অপামর ছাত্রসমাজ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ চাই, এবং সরকারের স্বপ্নের সোনার বাংলা তৈরিতে সহয়তা করতে চাই।

এ বিষয়ে সদর দক্ষিণ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এমরানুল হক মারুফ বলেন, আমরা সকল ধরনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয়। আমরা উপরের মহলের সাথে কথা বলতেছি সেখান থেকে যে ধরনের নির্দেশ আসবে আমরা সেভাবে কাজ করবো। সদর দক্ষিণের নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুবাইয়া খানম বলেন, তাদের শান্ত করার চেষ্টা করবো। অন্তত রাস্তার এক পাশ যেন ছেড়ে দেয়। তারপর তারা না মানলে এজিএম স্যার আসবেন, তারপরও না মানলে ডিসি স্যার আসবেন। এর আগে গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেন।
ময়মনসিংহ ট্রেন অবরোধ : কোটাবিরোধী আন্দোলনে ময়মনসিংহ নগরীতে জামালপুরগামী অগ্নিবীণা এক্সেপ্রেস ট্রেন অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে যাত্রী সাধারণের মাঝে ব্যাপক ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। গতকাল রোববার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে নগরীর সানকিপাড়া রেলক্রসিং এলাকায় কোটা বিরোধী ছাত্র সমাজের ব্যানারে এই ট্রেন অবরোধের ঘটনা ঘটে। এসময় বিকাল ৩টা ৪০মিনিট থেকে ৪টা ৩০মিনিট পর্যন্ত নগরীর সানকিপাড়া রেলক্রসিং এলাকায় জামালপুরগামী অগ্নিবীণা এক্সেপ্রেস ট্রেনটি আটকা পড়ে। এই আন্দোলনে নগরীর আনন্দমোহন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।

আন্দোলনকারিরা বলেন, কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে দেশব্যাপী বাংলা ব্লকড কর্মসূচির আওতায় এই ট্রেন অবরোধ করা হয়েছে। অবিলম্বে কোটা প্রথা বাতিল করা না হলে যে কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাজপথে আরো কঠোর হতে বাধ্য হবে ছাত্র সমাজ। ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন সুপারিন্ডেন্টেন্ট মো. নাজমুল হক জানান, আন্দোলনে মুখে জামালপুরগামী অগ্নিবীণা এক্সেপ্রেস ট্রেনটি কিছুক্ষণ আটকা পড়েছিল। তবে এখন ময়মনসিংহ-জামালপুর রেলপথে ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে।

সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ উত্তপ্ত। সরকার ও বিরোধী দলের রাজনীতি 

কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে  ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক   ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা যেই ইস্যু আন্দোলন করছে সেটা (কোটা বাতিল) তো সরকারেরই সিদ্ধান্ত ছিল, আদালত ভিন্ন রায় দিয়েছে। আদালতের ব্যাপারটা আপিল বিভাগে আছে।’ ‘বিচারাধীন বিষয় নিয়ে তো আমার কথা বলা উচিত নয়। এটা এখন আদালতের এখতিয়ার।’

তিনি বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে বিষয়ে আন্দোলন করছে, সে সিদ্ধান্ত সরকারেরই ছিল চলমান। আমরা তো এ সিদ্ধান্ত দেইনি, দিয়েছেন আদালত। তার পরও আমরা আমাদের দেশের ব্যাপার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’ এ সময় বিএনপি কোটা ও পেনশন আন্দোলনের ওপর ভর করেছে বলে অভিযোগ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, আন্দোলনের ব্যর্থ বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দল পরজীবী আন্দোলন করছে। কোটা ও পেনশনের ওপর ভর করেছে। তারা ক্ষমতার দিবাস্বপ্ন দেখছে। গতকাল রোববার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শুদ্ধাচার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে দেশের ছাত্র সমাজ এবং সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তার একটি ন্যায়সঙ্গত সমাধান খুঁজে বের করে ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলনের অবসান ঘটানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। আজ রোববার (৭ জুলাই) এক বিবৃতি প্রদান করে তিনি এ আহবান জানান।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “দেশের ছাত্র সমাজ সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষকগণ সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ছাত্র ও শিক্ষকগণের আন্দোলনের ফলে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা পড়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। ছাত্র ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের দাবির অবশ্যই যৌক্তিকতা আছে।

আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, সরকার ছাত্র ও শিক্ষকগণের দাবির প্রতি বরাবরই অবজ্ঞা প্রদর্শন করেই যাচ্ছে। আমরা মনে করি ছাত্র-ছাত্রী এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবিগুলো মেনে নিয়ে আন্দোলনের অবসান ঘটনা প্রয়োজন।

অবিলম্বে দেশের ছাত্র সমাজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের সাথে আলাপ-আলোচনা করে তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি মেনে নিয়ে ছাত্র ও শিক্ষকগণের আন্দোলনের অবসান ঘটনোর জন্য আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”