ভারতের সঙ্গে সরকারের চুক্তি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ও গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়েছে মূলত বাংলাদেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ভারতকে একতরফা সুবিধা দেয়ার উদ্দেশ্যেই এ চুক্তি সম্পন্ন করা হয়েছে। এ চুক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার জন্যই করা হয়েছে। মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে গত ২২ জুন ভারতের সঙ্গে ১০ দফা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও তিস্তায় ভারতীয় কারিগরি টিম পাঠানোসহ ১৩টি ঘোষণা প্রদানের প্রেক্ষিতে’ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গোলাম পরওয়ার বলেন, দেশের ১৭ কোটি মানুষ আশা করেছিল যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরকালে বাংলাদেশ ও ভারতের উপর দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, সুরমা-কুশিয়ারাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির বাংলাদেশের প্রাপ্য ন্যায্য হিস্যাসহ বাংলাদেশ ও ভারতের সাথে বিরাজমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা, ট্রানজিট-করিডোরসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ভারতের সাথে আলোচনা করে বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায় করার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে দেশে ফিরবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ আদায়ের জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের পরিবর্তে ভারতের নিকট নতজানু হয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ ভারতের কাছে বিকিয়ে দিয়ে এসেছেন। ভারতকে তিনি মনপ্রাণ উজাড় করে সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে খালি হাতে ফিরে এসেছেন। তিনি ভারতকে শুধু দিয়েই আসেন, কিছুই আনতে পারেন না। তার এ ধরনের ভূমিকায় বাংলাদেশের জনগণ বিক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। প্রধানমন্ত্রীর নতজানু ভূমিকা দেশের সচেতন জনগণকে হতাশ করেছে।
তিনি বলেন, ভারতের সাথে বর্তমান সরকারের সই করা সমঝোতা স্মারকে বলা হয়েছে ‘তিস্তা নদীর পানির সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করতে বাংলাদেশে যাবে ভারতীয় কারিগরি দল।’ বাংলাদেশের তিস্তার পানি সংরক্ষণের জন্য ভারতীয় কারিগরি দল পাঠানোর প্রস্তাব বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর। তিস্তার পানি সংরক্ষণ করার জন্য বাংলাদেশি পানি বিশেষজ্ঞরাই যথেষ্ট। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা না দেয়ার জন্যই ভারত নানা ধরনের অশুভ প্রস্তাব দিচ্ছে।ভারতীয় ঐসব প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।
গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার ভারত সফরকালে ভারতকে বাংলাদেশের উপর দিয়ে রাজশাহী পর্যন্ত রেল যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য সমঝোতা স্মারক সই করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর দিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের মংলা সামুদ্রিক বন্দর, চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দর ও চট্টগ্রামের মিরসরাইতে ইপিজেড নির্মাণের চুক্তিতে সই করা হয়েছে। দেশের জনগণ মনে করেন যে, প্রধানমন্ত্রীর এসব পদক্ষেপের ফলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে পড়েছে। কাজেই রাজশাহী পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে রেল যোগাযোগ চালুর যে কথা বলছে সে ব্যাপারে দেশবাসী মনে করে যে, পরীক্ষামূলকভাবে রাজশাহী পর্যন্ত রেল চালুর কথাটা একটি ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। হয়ত তাদের এ পরীক্ষামূলক রেল যোগাযোগের মেয়াদও কখনো শেষ হবে না। তাই বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ সরকারের ঐ সমঝোতা স্মারক মানতে রাজী নয়।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী ও পুলিশকে ভারতের নিকট থেকে উন্নতমানের সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য চুক্তি করেছে। আমরা সকলেই জানি যে, বাংলাদেশের তিন দিক দিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ড বাংলাদেশকে বেষ্টন করে আছে। বাংলাদেশের সাথে ভারতের বিভিন্ন সমস্যা বিরাজমান। সুতরাং বাংলাদেশের উপর যদি কোনো দেশ থেকে আঘাত আসে, তাহলে তা ভারতের দিক থেকেই আসার আশঙ্কা রয়েছে। সেই ভারতের নিকট থেকে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী ও পুলিশের প্রশিক্ষণ গ্রহণ কী বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি না অনুকূল সে বিষয়টি অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণকে গভীরভাবে চিন্তা করে দেখতে হবে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। এ সরকারের কোনো অধিকার নেই জনগণের ও দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে কোনো চুক্তি সম্পন্ন করার। বাংলাদেশের জনগণ এ অনির্বাচিত সরকার কর্তৃক জাতীয় স্বার্থবিরোধী সকল সমঝোতা স্মারক, ঘোষণা এবং চুক্তি প্রত্যাখ্যান করছে। বর্তমান অবৈধ সরকারের বেআইনি, অগণতান্ত্রিক ও দেশের স্বার্থবিরোধী এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য আমরা দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, নির্বাহী পরিষদ সদস্য নূরুল ইসলাম বুলবুল, মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।