৪ আগস্ট নিউয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে ড্রাইভার্সিটি প্লাজাতে আমেরিকার বাংলাদেশী কয়েকটি সংঘটনের উদ্যোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পোশাকি বাহিনী ও আওয়ামীলীগের দলীয় জঙ্গি সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্য অস্ত্র নিয়ে গণহত্যার প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্টিত হয়।
জ্যাকসন হাইটসে ড্রাইভার্সিটি প্লাজাতে স্বরণকালের বিশাল উপস্থিতিতে দেশের আপামর জনতা ছাত্র-যুবকসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের স্লোগানে প্রকম্পিত হয়েছিল।সরকার পরিকল্পিতভাবে সংঘাত, গণহত্যা চালিয়েছে। দলীয় সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষ উস্কিয়ে দিয়ে আন্দোলনের বিজয় নস্যাৎ করতে চায় দাবি করে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন গণহত্যা ও নিষ্ঠুর দমন নিপীড়ন নিন্দা ও ঘৃণা জানিয়ে কয়েকঘন্টা ব্যাপী বিক্ষোভ ও স্লোগান দেন। পরবর্তীতে সমাবেশে সকল সংঘটনের শীর্ষ নেতা ও কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।
এদেশের আপামর জনতা ছাত্র-যুবকসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের প্রতি আন্দোলন অব্যহত রাখার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেছেন, দেশের আনাচে-কানাচে ঘরে ঘরে আজ খুনী সরকারের পদত্যাগের দাবি উচ্চারিত হচ্ছে। গণতন্ত্র হত্যাকারী, জন অধিকার হরণকারী, জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব বিপন্নকারী সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন গণহত্যা ও নিষ্ঠুর দমন নিপীড়ন চালিয়েছে। এই সরকার আজ রাষ্ট্রঘাতি-প্রাণঘাতি সরকারে পরিণত হয়েছে। গণধিকৃত সরকারকে বিদায় করে জাতির সকল সমস্যা সমাধানের রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না এই শাসকগোষ্ঠী।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন , সরকার প্রধান এবং সরকারের মন্ত্রী-নেতারা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় আওয়ামী ভাবাপন্ন সদস্যরা প্রতিনিয়ত মিথ্যাচারে আশ্রয় নিয়ে বলছে, তথা কথিত ‘তৃতীয় শক্তি’ নাকি গুলি করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। অথচ সারা বিশ্বের মানুষ দেখেছে ছাত্রসহ সাধারণ জনতার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। তা ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগের হাতে। তার পরেও সরকার শাক দিয়ে মাছ ঢাকার জন্য এই মিথ্যচারের কোরাস গেয়েই চলেছে।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন , জঙ্গি , রাজাকার এই ভণ্ডামির কাহিনী জাতি ঘৃণার সাথে প্রত্যাখ্যান করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের প্রতি খুনী সরকারের অন্যায় ও বেআইনি হুকুম, আদেশ, নির্দেশ, চাপ উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে দমন, নিপীড়ন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জনিয়ে বলেন, সরকার সুপরিকল্পিতভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে ছাত্র জনতার বিপক্ষে দাঁড় করাচ্ছে, যা রাষ্ট্রের জন্য অশনি সঙ্কেত ।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন , ছাত্র জনতার আন্দোলনে সরকার এতই ভীতসন্ত্রস্ত এবং জন বিচ্ছিন্ন হয়েছে যে, তারা নিজেরাই বলছেন, শ্রীলংকার মতো গণভবন দখল করে নিবে জনগণ এবং সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। সেই ভয়ে তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তথা রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অপব্যবহার করে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন , বাবাকে ধরতে গিয়ে না পেয়ে ছেলেকে নিয়ে আসা হচ্ছে। আবার কখনো বাবা ছেলেকে একসঙ্গে নিয়ে আসছে। জাতিসংঘ থেকে সারা বিশ্ব এবং দেশের সকল শ্রেণি পেশার মানুষরা যখন সরকারের এই গণহত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকে প্রমাণিত সত্য উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ নিয়ে জানিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ধিক্কার, ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করছে, সেই সময়ও সরকার নির্লজ্জের মতো মিথ্যাচার করছে। আজকে যদি আমি-আপনি ছাত্রদের পক্ষে, ছাত্রদের সাথে না বের হয়ে ঘরে বসে থাকি, তবে নিজেকে আর কোনোদিন আমরা ক্ষমা করতে পারবো না। প্রত্যেক বাবা, প্রত্যেক ভাই, প্রত্যেক বোন, পেশাজীবী, শ্রমজীবী, শিল্পী, কৃষক, দোকানদার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, শিক্ষিকাসহ আপনারা সকলেই অন্তত একটা দিনের জন্য নিজের পেশা ভুলে গিয়ে আজ ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়ান। দেখুন আমরা সবাই মিলে চাইলে যে কোনো অশুভ শক্তি আমাদের সামনে থেকে কীভাবে ধুলার মতো উড়ে যায়। প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলছি- আপনারা দয়াকরে ন্যায়ের পক্ষে আসুন। আমাদের বাঁচানোর যেই শপথ আপনারা নিয়েছিলেন আজকে তা পালন করুন। বিশ্বাস করুন, আপনার নিজের ছেলে মেয়েও আজ আপনাকে না জানিয়ে হয়তো পথে বের হয়ে যাবে। আপনার মতো কেউ যেন একটা শক্ত লোহার বুলেট দিয়ে তার নরম বুকটা ছিদ্র করতে না পারে সেটা আজ আপনাকেই নিশ্চিত করতে হবে।
সুশীল সমাজসহ সকল শ্রেণি পেশার জনগণকে আরও ব্যপকভাবে রাজপথে নেমে চলমান ছাত্র-গণআন্দোলনে ব্যপকভাবে সম্পৃক্ত হয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করে রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে সকল অন্যায়, অবিচারের অবসান ঘটানোর আহ্বান জানান বক্তারা । বর্তমান সরকার অবৈধ দাবি করে বক্তারা বলেন , সাবেক সেনাবাহিনীর সকল কর্মকর্তাদের সংগঠন রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া ক্লাব) থেকে বলা হয়েছে ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুটা দেশবাসী দেখেছেন, এর কোনো কিছুই মানুষের স্মৃতি থেকে মুখে যাওয়ার নয়। প্রথম পক্ষ অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। সারাদেশের শিশু কিশোর ও তরুণরা শত উসকানি, হামলা ও নির্যাতনের মধ্যেও ধৈর্য ধরে শৃঙ্খলার সঙ্গে আস্তে আস্তে আইন মেনে সামনে পা বাড়াচ্ছিল। বিপরীতে দ্বিতীয় পক্ষ যে উপর্যুপুরি উসকানি দিলো, গুণ্ডা পাণ্ডা দিয়ে সন্ত্রাস চালালো এবং পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিজিবি নামিয়ে, আকাশে হেলিকপ্টার উড়িয়ে নির্বিচারে গুলি করে অগনিত শিশু কিশোর ও তরুণের তাজা প্রাণ হরণ করল, তা দেশবাসী কি এত সহজে এই অল্প সময়ের মধ্যেই ভুলে যাবে!’

বিক্ষোভ সমাবেশে বর্তমান সরকার অবৈধ দাবি করে বক্তারা বলেন, অতি দ্রুত পদত্যাগ করে জনতার ক্ষমতা জনতার কাছে ফিরিয়ে দিন। নির্যাতন যত বৃদ্ধি পাবে গণ প্রতিরোধ্য ততো দুর্বার হবে।সকল মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করে দেখে জাতি দেখছে ,গণহত্যাকারী স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে রোববার রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতা জবরদখল করে রাখা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়ে এখন পর্যন্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রায় শতাধিক ছাত্র জনতাকে হত্যা করেছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন আরো সহস্রাধিক মানুষ। শনিবার আওয়ামী লীগ ঘোষণাা দিয়ে সোমবার সমগ্র দেশে তারা পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র নেতাকর্মী জমায়েত করে গণতন্ত্রকামী ছাত্র-জনতার উপর লেলিয়ে দেয়। বরাবরের মতো রোববারও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএসএমএমইউসহ বিভিন্ন স্থাপনায় পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে এর দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপানোর ষড়যন্ত্র করছে। শনিবারের মতো রোববারও দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাদের বাসা বাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন – জাস্টিস ফর বাংলাদেশী স্টুডেন্টস এর ব্যানারে ছাত্রজনতা , সর্বস্তরের জনতার ব্যানারে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা , হিউম্যান রাটস প্রটেকশন এন্ড রেস্কিউ স্কোয়াড , আমেরিকায় কর্মরত সাংবাদিক , অভিনয় শিল্পী ,উদীচী , গায়ক গায়িকা , প্রকৌশলী , ব্যবসায়ী সহ নানা পেশার বাংলাদেশি জনতা।
রাজনৌতিক দলের মধ্যে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নানা অঙ্গসংঠন , জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) যুক্তরাষ্ট্র শাখা , জাতীয় সম্মিলিত ফোরাম ( জেএসএফ ) বাংলাদেশ , লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি , বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি , বিকল্পধারা বাংলাদেশ , জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি , বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ,গণফোরাম , ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস , ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ , জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম , খেলাফত মজলিস ,নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) , আমার বাংলাদেশ পার্টি , গণ অধিকার পরিষদ সমূহ।