ছাত্র জনতা প্রবাসীদের জনবিপ্লবে পলায়কারী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে এ মামলায় আত্মসমর্পণ করতে আদালতে আসেন মাহমুদুর রহমান। এ সময় তার পক্ষে আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করেন আইনজীবীরা।
শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল হকের আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রোববার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে এ মামলায় আত্মসমর্পণ করতে আদালতে আসেন মাহমুদুর রহমান। এ সময় তার পক্ষে আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করেন আইনজীবীরা।
শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল হকের আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ওই মামলায় গত বছর ১৭ই আগস্ট মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনকে ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূর।
আইনজীবীরা বলছেন, কোনো মামলায় এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত কোনো আসামিকে জামিন দেওয়ার এখতিয়ার সংশ্লিষ্ট আদালতের আছে। কিন্তু তিনি সাত বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ায় তাকে জামিন দেওয়া যায়নি।
ওই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন-সাংবাদিক শফিক রেহমান, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।
দণ্ডবিধির দুইটি ধারায় একটিতে পাঁচ বছর এবং অপরটিতে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা পরিশোধ না করলে প্রত্যেককে আরও তিন মাসের কারাভোগ করতে হবে বলে রায়ে বলা হয়। রায় ঘোষণার সময় সবাই পলাতক ছিলেন।
রায়ে আরও বলা হয়, সাজাপ্রাপ্ত সবাই পলাতক থাকায় তারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর অথবা আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর রায় কার্যকর হবে।
মামলার অভিযোগ ছিল, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যেকোনো সময় থেকে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় একত্রিত হয়ে পরস্পর যোগসাজশে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। ওই ঘটনায় ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩রা আগস্ট বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় মামলাটি করেন। ২০১৮ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরপর ২০২২ সালের ১৩ই নভেম্বর সজীব ওয়াজেদ জয় আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেন। তাকে হত্যার চেষ্টার ষড়যন্ত্রের ঘটনার বিচার দাবি করেন তিনি।
২৭ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় একটি ফ্লাইটে তুরস্ক থেকে দেশে ফেরেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
গত শুক্রবার পাঁচ বছর পর দেশে ফেরেন মাহমুদুর রহমান। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে সারা দেশে ১২৪টি মামলা হয়। ২০১০ সালের জুনে প্রথম দফায় আমার দেশ বন্ধ করাসহ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আটক করা হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ২০১৩ সালের ১১ই এপ্রিল আমার দেশ বন্ধ করে দেয়া হয়।
বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে যারা উৎখাত করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। শহীদদের আমরা কখনো ভুলব না। আজ থেকে ২০০ বছর পরও আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ যারা এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের তিতুমীরের মতো স্মরণ করবে মানুষ। তাদের ভুলে যাওয়া কখনো সম্ভব না।
তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে এবং একটি মামলায় আওয়ামী লীগ সরকার আদালতকে দিয়ে ৭ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে। আমার বয়স হয়ে গেছে। তবে জেল খাটার মতো মানসিক শক্তি আমার এখনো আছে। জেল থেকে মুক্ত হওয়ার পর আরও বড় পরিসরে সবাইকে নিয়ে লড়াই করব। বিদেশে বসে বিদেশি বন্ধুদের দিয়ে বিপ্লবকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র করছে জানিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান মাহমুদুর রহমান।
আদালতে যা বলেছেন মাহমুদুর রহমান
শুনানিতে তার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার আমেরিকার একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাহমুদুর রহমানের নামে সাজানো মামলা করে। পরে তার অবর্তমানে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারক।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাহমুদুর রহমান স্বৈরাচার পতনের পর বাংলাদেশে আসেন। আজকে তিনি স্বেচ্ছায় আদালতে আসছেন। তিনি জেলে যেতে চেয়েছেন, জামিন চাননি। আমরা আদালতের কাছে তার জামিনের প্রার্থনা করিনি। তাকে জেলে পাঠাবার কথা বলেছি।’
আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘উনি (মাহমুদুর রহমান) আইনের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। কখনো বাড়তি সুবিধা চাননি। তিনি আসামির প্রথম শ্রেণির ডিভিশন দেওয়ার নির্দেশনা চাইলে বিচারক কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।’
তিনি বলেন, ‘মাহমুদুর রহমান জেলে গেছেন, এরপর আপিল করবেন। এরপর তিনি জেল থেকে বেরিয়ে আসবেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। যে মামলায় সাজা হয়েছে সেই মামলায়ই তিনি সারেন্ডার করেছেন। অতিদ্রুত এই মামলা থেকে তিনি বেরিয়ে আসবেন। ’
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, ‘আদালতে মাহমুদুর রহমান বলেছেন, “আমি রাজনীতির.. দলীয় প্ল্যাটফর্ম থেকে স্বৈরাচারের বিরোধিতা করিনি। আমি আমার অবস্থান থেকে করেছি। আমার হলো বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই”, তিনি বলেছেন। সে কারণে রাজনৈতিক সংগ্রামের থেকে তার সংগ্রাম একটু আলাদা। এইটাই তিনি কোর্টে বলেছেন।’
এ বিষয়ে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী কোনো আদালত যদি এক বছরের বেশি কারাদণ্ড দেন তাহলে তিনি এ মামলায় জামিন দিতে পারেন না। এ আদালত থেকে গত বছরের ১৭ আগস্ট মাহমুদুর রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। এক ধারায় পাঁচ বছর আরেক ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী এ আদালত এ মামলায় জামিন দিতে পারেন না। আমরা অতিদ্রুত মহানগর দায়রা আদালতে মাহমুদুর রহমানের জামিন আবেদন করবো। আশা করি তিনি জামিন পাবেন।
২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নুর এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাংবাদিক শফিক রেহমান ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনের সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
মাহমুদুর রহমান রাষ্ট্রদ্রোহের এক মামলায় ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল ঢাকার কারওয়ান বাজারে আমার দেশ কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার হন। পরে কারাবান্দি অবস্থায় ২০১৬ সালের এপ্রিলে তাকে জয়কে অপহরণ ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
সাড়ে তিন বছর জেলে থাকার পর ২০১৬ সালের নভেম্বরে মাহমুদুর রহমান জামিনে মুক্তি পান। পরে তিনি নির্বাসনে চলে যান। সাড়ে ৫ বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে গত শুক্রবার তিনি দেশে ফেরেন।
আরেক সাংবাদিক শফিক রেহমানকে ২০১৬ সালের এপ্রিলে ইস্কাটনের বাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর জয়কে অপহরণ ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সে সময় দুই দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বিএনপিঘনিষ্ঠ এই সম্পাদককে।
পাঁচ মাস কারাগারে থাকার পর সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে মুক্তি পান যায়যায়দিনের সাবেক সম্পাদক। পরে তিনি যুক্তরাজ্যে চলে যান। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ১৮ অগাস্ট তিনি দেশে ফেরেন।